Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
নাবালিকা বিয়ে রুখতে

মুচলেকা দিলেই ভর্তি নেবে স্কুল

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘অল্প বয়সে বিয়ে দিলে মেয়েদের শারীরিক ক্ষতি হয়। তা ছাড়া তারা কন্যাশ্রীর সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয়।

মুচলেকা হাতে নিয়ে ভর্তির অপেক্ষায় ছাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র

মুচলেকা হাতে নিয়ে ভর্তির অপেক্ষায় ছাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র

দিলীপ নস্কর
মথুরাপুর শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৪
Share: Save:

কমবয়সে বিয়ে দেওয়া হবে না—এই মুচলেকা না দিলে ছাত্রী ভর্তি করা হচ্ছে না। এমনই শর্ত মথুরাপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের।

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘অল্প বয়সে বিয়ে দিলে মেয়েদের শারীরিক ক্ষতি হয়। তা ছাড়া তারা কন্যাশ্রীর সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয়। কিশোরীরা যাতে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, সেটাই আমি চাই। তাদের ভবিষ্যৎ গড়তেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’

চন্দনবাবু জানান, গত বছর স্কুলের এক ছাত্রীর বিয়ে বন্ধ করতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে গিয়ে শুনেছিলেন ওই ছাত্রীর বাব-মা জানেনই না যে আঠারো বছরের কম বয়সের মেয়েদের বিয়ে দিলে কী ক্ষতি হয়। তারপর থেকে তিনি ঠিক করেছেন যে স্কুলে ভর্তির সময়ই অভিভাবকের থেকে আঠারো বছরের কম বয়সের মেয়ে বিয়ে না দেওয়ার মুচলেকা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাঁদের বোঝানোও হচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষও এই সিদ্ধান্তে সায় দিয়েছেন। খুশি হয়েছেন অভিভাবকেরাও।

জানা গিয়েছে, মথুরাপুর ১ ব্লকের জনসংখ্যা প্রায় তিন লক্ষ। অধিকাংশই দিনমজুর, কৃষিকাজে যুক্ত। দুঃস্থ পরিবার থেকেই বেশির ভাগ পড়তে আসে। বেশির ভাগ পরিবারই ১২-১৪ বছরের মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিতে চান। তাঁদের মতে, বেশি পড়াশোনা করলে ভাল পাত্র খুঁজে পাওয়া যাবে না। শুধু তাই নয়, অনেকে আবার সংসারের অভাবের কথা ভেবে মেয়ে বিয়ে দিতে চান। অথচ তাঁরা ভাবেন না যে, পড়াশোনা শিখে এই মেয়েই একদিন বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়াতে পারে। আবার অনেক মেয়েই প্রেমের ফাঁদে পড়ে পড়াশোনা ছেড়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসে। যা ঠিক নয়। এ ভাবেই পাচারের ঘটনাও ঘটে। সে কারণেই স্কুল থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

স্কুলের এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অভিভাবকেরা। ওই এলাকার লালপুরের শবনম বৈদ্যের বাবা ইলিয়াস, জলঘাটা গ্রামের স্বপ্না মণ্ডলের বাবা বাদল মণ্ডল-সহ প্রায় ১২০০ ছাত্রীর বাবা-মায়েরা প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সহমত হয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই ১৮ বছরের কম বয়সের মেয়ে বিয়ে দেবেন না বলেই মুচলেকা দিয়েছেন। সঙ্গে নিজেদের দু’টি করে মোবাইল নম্বরও দেন তাঁরা। তাও স্কুলের নির্দেশেই।

নাবালিকা বিয়ে আটকাতে এই পদক্ষেপ কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের প্রথম নয়। এর আগেও প্রধান শিক্ষক ছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুঝিয়ে বিয়ে রুখেছেন। তা ছাড়া প্রধান শিক্ষক এবং অন্য শিক্ষকেরা প্রতিটি ক্লাসের পাঁচ জন করে ছাত্রী নিয়ে ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ নামে একটি দল তৈরি করেছেন। প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে ওই দলের ছাত্রীরা প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে বাবা-মায়েদের বোঝাবে নাবালিকা বিয়ে দিলে কী কী ক্ষতি হয়। কন্যাশ্রী প্রকল্পের কথাও বলবে তারা। এমনকী কোনও নাবালিকার বিয়ের খবর জানতে পারলে তারা প্রধান শিক্ষক, প্রশাসনকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই কিশোরীর বাড়িতে। গত এক বছরে এ ভাবে কিশোরী বাহিনী প্রায় ১২টি নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করেছে।

ওই ব্লকে রয়েছে ২৭টি হাইস্কুল ও ৪টি গার্লস স্কুল। এক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুল নাবালিকা বিয়ে রুখতে যে পরিকল্পনা নিয়েছে তার সাধুবাদ জানাই। বিষয়টি নিয়ে আমরাও চিন্তা ভাবনা করব।’’ মথুরাপুর থানার ওসি শিবেন্দু ঘোষ বলেন, ‘‘নাবালিকা বিয়ে রুখতে পুলিশও তৎপর। কিন্তু মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।’’ নাবালিকা বিয়ে দিলে ওই পরিবারের সমস্ত সরকারি সুবিধা বন্ধ করে দিলে হয়তো মানুষ সচেতন হবে বলে তাঁর আশা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

minor marriage Awareness School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE