Advertisement
E-Paper

বিয়েতে মাংসের টাকা জুগিয়েছিল ভিনদেশি অতিথি

অতিথিরা এসেই জানতে চেয়েছিল, “মেয়ের বিয়েতে কী অসুবিধা হচ্ছে বলুন তো বৌদি।” গৃহকর্ত্রী আমতা আমতা করেছিলেন, “মুরগির মাংসের টাকাটা এখনও হাতে নেই। একটু চিন্তায় আছি।” কথা না বাড়িয়ে অতিথিরা পাত্রীর হাতে পাঁচ হাজার টাকা তুলে দেয়। বুধবার সেই ভিন্দেশি অতিথিদের খোঁজেই যখন সিআইডি-র গোয়েন্দারা গেলেন বাড়িতে, তখন চোখ ছানাবড়া হাবরার গোহালবাটি গ্রামের শেফালি সরকারের। বললেন, “দেওরের শ্বশুরবাড়ির দিকের আত্মীয় বলেই জানতাম ওদের। মাস ছ’য়েক আগেও এসে কয়েকদিন ছিল বাড়িতে। কিন্তু এত সব কাণ্ড বুঝতে পারিনি!”

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৫ ০৩:০৪
হাবরায় গোপাল সরকারের বাড়ি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

হাবরায় গোপাল সরকারের বাড়ি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

অতিথিরা এসেই জানতে চেয়েছিল, “মেয়ের বিয়েতে কী অসুবিধা হচ্ছে বলুন তো বৌদি।” গৃহকর্ত্রী আমতা আমতা করেছিলেন, “মুরগির মাংসের টাকাটা এখনও হাতে নেই। একটু চিন্তায় আছি।” কথা না বাড়িয়ে অতিথিরা পাত্রীর হাতে পাঁচ হাজার টাকা তুলে দেয়।

বুধবার সেই ভিন্দেশি অতিথিদের খোঁজেই যখন সিআইডি-র গোয়েন্দারা গেলেন বাড়িতে, তখন চোখ ছানাবড়া হাবরার গোহালবাটি গ্রামের শেফালি সরকারের। বললেন, “দেওরের শ্বশুরবাড়ির দিকের আত্মীয় বলেই জানতাম ওদের। মাস ছ’য়েক আগেও এসে কয়েকদিন ছিল বাড়িতে। কিন্তু এত সব কাণ্ড বুঝতে পারিনি!”

বুধবারই শেফালিদেবীর দেওর গোপাল সরকারকে নিয়ে গিয়েছে সিআইডি। বৃহস্পতিবার গ্রেফতারও করা হয়েছে তাঁকে। তদন্তকারীদের অনুমান, গত ১৩ মার্চ রাতে রানাঘাটের স্কুলে লুঠ এবং বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণে অভিযুক্তেরা ১০ মার্চ থেকে ছিল গোহালবাটিতে। তাদের মধ্যে দু’জন ১২ মার্চ এবং পাঁচ জন ১৩ মার্চ ভোরে চলে যায়। মিলন নামে সন্দেহভাজন এক বাংলাদেশি (যশোরের মণিরামপুরের বাসিন্দা) সম্পর্কে গোপালের স্ত্রী-র অনিতার মেসো। অনিতা ও পড়শি এক মহিলাকে জেরা করছে সিআইডি।

গোহালবাটি বাজার থেকে আধ কিলোমিটার দূরত্বে গোপালের বাড়ি। পাশাপাশি দু’টো ঘরের একটায় থাকেন গোপালের দাদা শক্তি সরকার, বৌদি শেফালি। ছ’বছরের ছেলে বিপ্লবকে নিয়ে অন্য ঘরে থাকেন গোপালরা। সঙ্গে থাকেন বৃদ্ধা মা সবিতাদেবী। বৃহস্পতিবার ঘরে গোপালের ঢুকে দেখা গেল, ঘরের কোণে ছোট কাঠের টেবিলের উপরে মদের ফাঁকা বোতল রাখা রয়েছে।

সবিতাদেবীর দাবি, গোপাল মদ্যপান করেন না। ছেলের অতিথিরা মদ্যপান করছে দেখে অস্বস্তি হওয়ায় তিনি গোপালকে বলেছিলেন, বাড়ি থেকে তাদের চলে যেতে বলতে। বিয়ের অনুষ্ঠান মিটলেই অতিথিরা চলে যাবে বলে গোপাল তখন তাঁকে নিরস্ত করেন।

বাংলাদেশের বাগেরহাটের সোলারকোলা গ্রামের বাসিন্দা শক্তিবাবু বছর সতেরো আগে এ দেশে আসেন। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি। সবিতাদেবী এসেছেন বছর চারেক আগে। গোপালবাবু বাংলাদেশ থেকে হাবরায় এসে উঠেছেন বছর দু’য়েকও হয়নি। তিনি রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন। রাতে বাড়ি ফিরে ঝুড়ি বুনে বিক্রি করেন। সবিতাদেবী জানান, ১১ মার্চ শক্তিবাবুর মেয়ে বন্দনার বিয়েতে গোপালের শ্বশুরবাড়ির দিকের আত্মীয় পরিচয়ে মিলনের সঙ্গে আরও ছ’জন এসেছিল ১০ মার্চ। সবাই যুবক। বিয়েতে মাংসের জন্য পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া ছাড়া, বিপ্লবকে জামাও কিনে দেয় তারা।

গ্রামের বাসিন্দা সুবল দেবনাথ, গণেশ দেবনাথ, মধুসূদন পালরা জানান, গোপাল এলাকায় নির্বিবাদী বলে পরিচিত। তাঁর বাংলাদেশি অতিথিদেরও গোলমেলে বলে মনে হয়নি পড়শিদের। গ্রামবাসীর বক্তব্য, এলাকায় বাংলাদেশের বহু মানুষ ডেরা বেঁধেছেন। তাঁদের অনেকের বাড়িতে ভিন্দেশিরা আসেন। ফলে, এলাকায় বাইরের লোক দেখেও চট করে কেউ সন্দেহ করে না।

স্থানীয় সূত্রের দাবি, গোপালের পড়শি এক মহিলাও চিনতেন মিলনকে। ১১ মার্চ মিলন ও তার এক সঙ্গী ওই মহিলার বাড়িতে রাতে শোওয়ার জায়গা চেয়েছিল। মহিলার স্বামী অবশ্য তাদের না বলে দেন। শেফালিদেবীর দাবি, ১২ মার্চ সকালে তাঁদের বাড়ি থেকে চলে যায় মিলন ও তার এক সঙ্গী। ওই দিন দুপুর থেকে বাড়ির পিছনের কলাবাগানে বসে মদ্যপান করছিল বাকি পাঁচ জন। সন্ধ্যায় পুলিশ তাদের হাবরা থানায় নিয়ে যায়। হাবরা থানার দাবি, প্রকাশ্যে বহিরাগতদের মদ্যপান করতে দেখে জেরা করা হয়। কিন্তু বৈধ পাসপোর্ট, ভিসা থাকায় তাদের আটকানো হয়নি। ১৩ মার্চ ভোরে ওই পাঁচ জন গোহালবাটি ছাড়ে।

সবিতাদেবীর কথায়, “ছেলেগুলো আমাকে দিদা বলে ডাকে। কিন্তু ওদের রকমসকম ঠিক মনে হতো না। বাড়ির বাইরে মদ খাওয়ার জন্য পুলিশ ওদের থানায় নিয়ে জেরা করার পরে, ওরা তো গেলই। ওদের জন্য জেলে গেল আমার ছেলেও!”

southbengal Simanta Moitra Habra ranaghat nun rape police CID Bangladesh Mumbai passport
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy