E-Paper

নিষেধাজ্ঞা শুধু নামেই, হাড়ালে দেদার বিক্রি শব্দবাজির

রাজ্যে বাজি উৎপাদন ও বিক্রির অন্যতম কেন্দ্র হাড়াল গ্রামে কয়েকশো স্থায়ী দোকান রয়েছে। সেখানে বছরভর বাজির কেনাবেচা চলে। তামিলনাড়ুর শিবকাশি থেকে প্রচুর বাজি আমদানি ছাড়াও গ্রামে বাজি তৈরি হয়।

সমীরণ দাস 

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:২৮
প্রকাশ্যে: অন্যান্য বাজির সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ শব্দবাজিও। রবিবার, চম্পাহাটির হাড়ালে।

প্রকাশ্যে: অন্যান্য বাজির সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ শব্দবাজিও। রবিবার, চম্পাহাটির হাড়ালে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

নামেই নিষিদ্ধ। চম্পাহাটির হাড়ালে বাজি বাজারেখোলাখুলিই বিকোচ্ছে নানা শব্দবাজি। চকলেট বোমা, বিভিন্ন পটকার বিপুল ‘সম্ভার’ বহু দোকানেই। স্থানীয় সূত্রের খবর, নিয়মিত পুলিশি ধরপাকড় সত্ত্বেও প্রশাসনিক নজর এড়িয়ে দেদার বিক্রি হচ্ছে চকলেট বোমা, কালীপটকা।

রাজ্যে বাজি উৎপাদন ও বিক্রির অন্যতম কেন্দ্র হাড়াল গ্রামে কয়েকশো স্থায়ী দোকান রয়েছে। সেখানে বছরভর বাজির কেনাবেচা চলে। তামিলনাড়ুর শিবকাশি থেকে প্রচুর বাজি আমদানি ছাড়াও গ্রামে বাজি তৈরি হয়। কালীপুজোর আগে কার্যত মেলার চেহারা নেয় এলাকা। স্থায়ী দোকানগুলির পাশাপাশি বসে অসংখ্য অস্থায়ী দোকান। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা গেল, জমে উঠেছে বেচাকেনা। একটি দোকানে সাজানো নানাআতশবাজির বেশির ভাগের গায়েই সবুজ বাজির ছাপ মারা। তবে চকলেট বোমা মিলবে কিনা, সেই প্রশ্নকরতেই চোখের ইশারায় দোকানদারের সম্মতি মিলল। তার পরেই লুকোনো জায়গা থেকে বেরিয়ে এল রঙিন রাংতায় মোড়া এক প্যাকেট চকলেট বোমা— ৫০টির দাম ১৩০ টাকা। একটু এগিয়ে আর একটি দোকানে আবার সাজিয়ে রাখা অন্য বাজির পাশেই রয়েছে চকলেটবোমার প্যাকেট! গোটা চত্বর ঘুরে বোঝা গেল, কার্যত সব দোকানেই মজুত শব্দবাজি, কেউ লুকিয়ে রেখেছেন, কেউ প্রকাশ্যেই বিক্রি করছেন। অভিযোগ, পুলিশ ঢুকলেই খবর পেয়ে লুকিয়ে ফেলা হয় সব শব্দবাজি।

কেন বিক্রি করছেন নিষিদ্ধ বাজি? এক দোকানদারের কথায়, “মানুষ তো সবচেয়ে বেশি চকলেট বোমাই চায়। প্রচুর বিক্রি হয়, তাই রাখতেই হয়। চকলেট বিক্রি করে লাভও বেশি।” এক দোকানদারের দাবি, “এখন তো সরকার ১২৫ ডেসিবেল পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে। ফলে চকলেট বোমায় আর কোনও অসুবিধা নেই।” বাজার ঘুরে দেখা গেল, চকলেট বা অন্য শব্দবাজির পাশাপাশি ‘সবুজ’ নয়, এমন আতশবাজিও বিক্রি হচ্ছে দেদার।

স্থানীয় সূত্রের খবর, হাড়ালের প্রায় প্রতি ঘরেই তৈরি হয় এ ধরনের আতশবাজি ও শব্দবাজি। এলাকার বাজি উৎপাদনকারীদের মধ্যে সবুজ বাজি তৈরির লাইসেন্স রয়েছে মাত্র কয়েক জন ব্যবসায়ীরই। কিন্তু অভিযোগ, শয়ে শয়ে ব্যবসায়ী লাইসেন্স ছাড়াই বাজি তৈরি করেন। আর তা করতে গিয়ে অতীতেএকাধিক দুর্ঘটনা ঘটলেও হুঁশ ফেরেনি। সরকার বাজি ক্লাস্টার তৈরির কথা ঘোষণা করেছে, কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু কবে তা চালু হবে, তার নির্দিষ্ট তথ্য নেই কারও কাছেই। লোকালয় থেকে দূরে ফাঁকা জায়গায় আলাদা বাজি বিক্রয় কেন্দ্রও অর্ধনির্মিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে ঘিঞ্জি এলাকায় ঝুঁকি নিয়ে পর পর দোকানেই চলছে বাজির ব্যবসা।

হাড়াল আতশবাজি ব্যবসায়ী সমিতির মুখপাত্র অজয়কুমার চক্রবর্তী বলেন, “ব্যবসায়ী সমিতির তরফে প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে নিষিদ্ধ বাজি তৈরি বা বিক্রি করতে বারণ করা হয়েছে। মাইকেও প্রচার করা হচ্ছে। তার পরেও কেউ কেউ লুকিয়ে করছেন হয়তো। সমিতি জানতে পারলেই ব্যবস্থা নিচ্ছে। প্রশাসনও সতর্ক আছে।” পুলিশেরও দাবি, শব্দবাজি-সহ সমস্ত নিষিদ্ধ বাজি রুখতে দফায় দফায় অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই প্রচুর বাজি বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Crackers Firecrackers

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy