বসিরহাট কলেজ। —নিজস্ব চিত্র।
অবশেষে নাকের স্বীকৃতি পেল বসিরহাট কলেজ। ১৯৪৭ সালের কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই থেকে কেটে গিয়েছে ৭৫ বছর। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এই কলেজে ইউজিসির নাকের স্বীকৃতি ছিল না। স্বীকৃতি মেলার পাশাপাশি ‘এ গ্রেড’ পেয়েছে এই কলেজ। প্রাপ্ত নম্বর ৩.১৪।
উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির স্বীকৃতি দেওয়া ও মান নির্ণয় করার জন্য ১৯৯৪ সালে চালু হয়েছিল নাক বা ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নাকের মূল্যায়ন করাতে হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে। তার ভিত্তিতেই ইউজিসির তরফ থেকে অর্থ বরাদ্দ হয়।
কলেজ সূত্রের খবর, বসিরহাট কলেজে এত দিন নাক পরিদর্শনে আসেনি। দীর্ঘ দিন এই কলেজে স্থায়ী অধ্যক্ষ ছিলেন না। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে অধ্যক্ষ হিসেবে আসেন অশোককুমার মণ্ডল। নাকের স্বীকৃতির জন্য তৎপর হন তিনি। সেই মতো প্রস্তুতি শুরু হয়।
এরপরে নিয়ম মেনে নাক-এর পরিদর্শনের জন্য আবেদন করা হয়। জানুয়ারি মাসের ৮-৯ তারিখ নাক-এর তিন সদস্যের দল কলেজে আসে। কলেজের বর্তমান ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষাকর্মী শিক্ষক, শিক্ষিকা ও অধ্যক্ষের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলেন তাঁরা। কলেজের বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখেন। প্রশাসনিক কাজকর্ম, হিসাব বিভাগের কাজকর্ম, পঠন-পাঠনের মান, গ্রন্থাগারের অবস্থাও খতিয়ে দেখা হয়। এ ছাড়া, কলেজের এনসিসি, এনএসএস কার্যকলাপ ও পড়াশোনার বাইরে আর কী হয়, ছাত্রছাত্রীদের শেখানোর পদ্ধতি, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবস্থা, শিক্ষকদের মান, তাঁদের গবেষণাধর্মী কাজকর্ম কেমন— তা দেখা হয়।
কলেজের শিক্ষক নীলাদ্রি সাহা জানান, পরিদর্শক দলের সদস্যেরা কলেজের প্রশাসনিক কাজকর্ম, গ্রন্থাগারের মান, এনএসএস, এনসিসির কার্যকলাপ এবং শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে সম্পর্ক দেখে প্রশংসা করেছেন। এই কলেজের ৫০ শতাংশের বেশি শিক্ষক পিএইচডি করেছেন, তারও প্রশংসা করেছেন পরিদর্শক দলের সদস্যেরা।
তবে কলেজ সূত্রের খবর, শিক্ষকদের বিভিন্ন পদ শূন্য না থাকলেও ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত সন্তোষজনক নয়। যেমন, উদ্ভিদবিজ্ঞান ও দেহতত্ত্ব বিভাগে মাত্র ২ জন করে স্থায়ী শিক্ষক আছেন। শিক্ষাবিজ্ঞান বিভাগে মাত্র ১ জন স্থায়ী শিক্ষক। নতুন করে শিক্ষক পদ সৃষ্টি করা যাচ্ছে না বলে শিক্ষক পেতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান অধ্যক্ষ। এ ছাড়া, দীর্ঘ দিন নাক-এর মূল্যায়ন না করানোয় ইউজিসির তরফ থেকে কোনও টাকা কলেজে আসেনি বহু বছর। ফলে কলেজের কিছু পরিকাঠামোগত সমস্যা আছে।
কলেজ পরিচালন কমিটির সদস্য বাদল মিত্র জানান, কলেজের সাত হাজারের বেশি পড়ুয়া। এঁরা বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন। হাসনাবাদ, সন্দেশখালি ও হিঙ্গলগঞ্জের প্রান্তিক এলাকার অনেক পড়ুয়াও আসেন। ডে, মর্নিং ও ইভিনিং শিফটে কলেজ হয়। ১৬টি বিষয়ে অনার্স পড়ানো হয়। ১৯টি বিষয়ে জেনারেল কোর্স পড়ানো হয়। এই কলেজে ২০১২ সাল থেকে বাংলায় এমএ পাঠ্যক্রম চালু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এই কলেজ।
অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘কলেজ পরিচালন কমিটির সদস্য ও কলেজের শিক্ষক, অশিক্ষক সকলের সাহায্যে এই সাফল্য এল। এ বার আমাদের লক্ষ্য, কলেজের পঠন-পাঠনের মান এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, যেন এই প্রান্তিক পড়ুয়াদের আলাদা ভাবে গৃহশিক্ষকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন না হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy