ইংরেজি পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে স্বপ্নজিৎ।—নিজস্ব চিত্র
জড়ানো কাছার উপরেই স্কুলের ইউনিফর্মটা চাপিয়ে নিল স্বপ্নজিৎ। চোখের জল মুছে বেরোল বাড়ি থেকে। মাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষা বলে কথা।
সোমবার পরীক্ষার শুরুর দিনটা অবশ্য অন্য রকম ছিল তার জীবনে। মাকে প্রণাম করে বেরিয়েছিল বাড়ি থেকে। ফিরে এসে মা জানতে চেয়েছিলেন পরীক্ষা কেমন হয়েছে। এ নিয়ে মা-ছেলের কথা হয় টুকটাক।
কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমূল বদলে গেল স্বপ্নজিতের জীবন। সোমবার সন্ধ্যায় হঠাৎই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন স্বপ্নজিতের মা শেফালি দাস (৩৫)।
বসিরহাটের ৩ নম্বর কলোনিতে থাকেন মাধবচন্দ্র দাস ও তাঁর স্ত্রী শেফালি। হাসনাবাদের রামেশ্বরপুর নাসিরউদ্দিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন মাধববাবু। দুই ছেলে স্বপ্নজিৎ ও শুভজিৎ। বসিরহাট টাউন হাইস্কুল থেকে এ বার মাধ্যমিক দিচ্ছে স্বপ্নজিৎ। আসন পড়েছে ভ্যাবলা হাইস্কুলে।
সোমবার বাংলা পরীক্ষার শেষে বাড়ি ফিরে শুয়ে পড়েছিল। সন্ধের দিকে মা জানতে চেয়েছিলেন, পরীক্ষা কেমন হয়েছে। মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন, মন দিলে পরীক্ষা দিলে আরও ভাল ফল হবে। এটাই ছিল মা-ছেলের শেষ কথা।
কথা শেষে রান্না ঘরে চা করতে গিয়েছিলেন শেফালিদেবী। আঁচল ধরে মায়ের পিছু নেয় ছোট ছেলে শুভজিৎ। মাধববাবু দূর থেকে বলেন, ‘‘আমার জন্যও এক কাপ চা এনো।’’ উত্তর আসে, ‘‘আনছি।’’
কিন্তু চা বানানোর আগেই রান্নাঘরে নেতিয়ে পড়েন মহিলা। শুভজিৎ ছুটে এসে জানায় সে কথা। বাবা, বড় ছেলে দ্রুত গাড়ি ডেকে হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁকে। কিন্তু বাঁচানো যায়নি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হৃদরোগেই মৃত্যু হয়েছে ওই মহিলার। বসিরহাট শ্মশানে মায়ের দেহ সৎকার করতে মঙ্গলবার ভোর হয়ে যায় স্বপ্নজিতের। সকালে জানিয়ে দেয়, পরীক্ষায় সে বসবেই। খবর জানতে পেরে মাধ্যমিকের জেলা পর্যবেক্ষক দেবদাস সরকার গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যান স্বপ্নজিতের বাড়িতে। গাড়িতে ওঠার সময়ে চোখের জল মুছে স্বপ্নজিৎ বলে, ‘‘বাবা আর ভাইয়ের পাশে থাকতে হবে। মায়ের স্বপ্নপূরণ করতে হবে। ভাল ভাবে পরীক্ষা না দিয়ে যে আমার উপায় নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy