Advertisement
E-Paper

সমস্যা সীমান্ত-বাণিজ্যে, চিন্তায় পেট্রাপোল

ক্রমশ অচলাবস্থার দিকে এগোচ্ছে পেট্রাপোল। প্রভাব পড়ছে সীমান্ত বাণিজ্যে। কমছে বাংলাদেশিদের যাতায়াত। পেট্রাপোল থেকে কলকাতাগামী বাস সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে রাস্তার পাশে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫৬
যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে বাস। পেট্রাপোলে নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে বাস। পেট্রাপোলে নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

ক্রমশ অচলাবস্থার দিকে এগোচ্ছে পেট্রাপোল।

প্রভাব পড়ছে সীমান্ত বাণিজ্যে। কমছে বাংলাদেশিদের যাতায়াত। পেট্রাপোল থেকে কলকাতাগামী বাস সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে রাস্তার পাশে। মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রগুলিও কার্যত ঝাঁপ ফেলার মতো অবস্থায়। বাংলাদেশে যাওয়া পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে।

সব মিলিয়ে লোকসানের মুখে দাঁড়িয়ে বহু মানুষ।

পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে রোজ কয়েক হাজার মানুষ পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে যাতায়াত করেন। দিনভর ভিড়ে গমগম করে সীমান্তবর্তী এই এলাকা।

সোমবার দুপুরে বন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, সব সুনসান। দীর্ঘ দিন মুদ্রা বিনিময় ব্যবসা করছেন কার্তিক ঘোষ। বললেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে গত কয়েক দিনে। কারণ, আমরা তাঁদের টাকা ভাঙিয়ে দিতে পারছি না। শুধুমাত্র এ দেশে যেখানে যাবেন, সেই যাতায়াত খরচটুকু দিতে পারছি।’’ এক কাউন্টার মালিক বিশ্বজিৎ ঘোষ জানালেন, ভারত থেকে যাঁরা বাংলাদেশে যাচ্ছেন, তাঁদেরও দু’একশো টাকার বেশি দেওয়া যাচ্ছে না। কার্তিকবাবু জানালেন, কাউন্টার খোলা রেখেছেন, স্রেফ নিজেদের সুনামের কথা ভেবে। বাংলাদেশিদের মুদ্রা বিনিময় করে হাতে অন্তত একশো-দু’শো টাকা তো দিতে পারছেন! বন্দর এলাকায় প্রায় একশোটি মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র আছে। তার সঙ্গে জড়িয়ে বহু মানুষের জীবন। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁদের জীবিকায় টান পড়ছে।

কথা হচ্ছিল ঢাকার বাসিন্দা শেখ গোলামের সঙ্গে। দু’দিন আগে এ দেশে এসেছিলেন কলকাতায় চিকিৎসা করাবেন বলে। সোমবার দেশে ফিরে যাচ্ছিলেন। কেন? বললেন, ‘‘অনেক চেষ্টা করেও চিকিৎসার জন্য বাংলা টাকা ডলার ভাঙিয়ে ভারতীয় টাকা পেলাম না প্রয়োজন মতো। তাই ফিরে যাচ্ছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের আসব।’’

একই অবস্থা বেসরকারি পরিবহণ ব্যবসাতেও। বাংলাদেশিরা না আসায় পরিবহণ ব্যবসাও থমকে গিয়েছে। পেট্রাপোল চেকপোস্ট ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দীপক ঘোষ বলেন, ‘‘এখানে ৬টি পরিবহণ সংস্থার বাসে সাধারণত দিনে হাজারখানেক বাংলাদেশি যাত্রী কলকাতায় যাতায়াত করেন। কিন্তু এখন সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে দেড়শো জনের মতো।’’

প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও। পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানানো হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে এ দেশ থেকে রোজ গড়ে ৪০০টি ট্রাক পণ্য নিয়ে বেনাপোলে যাচ্ছিল। কিন্তু ওই সংখ্যাটা কমে গিয়েছে। রবিবার গিয়েছে মাত্র ১৭৪টি ট্রাক। শনিবারও সংখ্যা ছিল ২৭১টি। ভিনরাজ্যের ট্রাক বন্দরে আসা কমে গিয়েছে উল্লেখযোগ্য ভাবে।

সংগঠনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানালেন, সব থেকে বেশি প্রভাব পড়েছে পচনশীল পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে। আগে রোজ ১৫টি ট্রাক পান নিয়ে গেলে এখন যাচ্ছে মাত্র ৪টি। কারণ, মাছ বা পানের মতো পচনশীল পণ্য নগদ টাকায় লেনদেন হয়। পুরনো ৫০০-১০০০ টাকার নোট না চলায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তা ছাড়া, ট্রাক মালিকেরা নগদ টাকায় ট্রাক ভাড়া দেন পণ্য পরিবহণের জন্য। সেটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বন্দর এলাকায় সরকারি পার্কিংয়ে ৫০০-১০০০-এর নোট না চলায় রফতানিকারীরা ট্রাক রাখতে সমস্যায় পড়েছেন। এ ভাবে চলতে থাকলে বাণিজ্য প্রচুর ক্ষতি হবে বলে কার্তিকবাবুর আশঙ্কা। যার সুদূর প্রভাব পড়বে বনগাঁর অর্থনৈতিক পরিকাঠামোতেও। কারণ এখানে শিল্প বলতে কিছু নেই। চাষবাস ও বন্দর বাণিজ্য বহু মানুষের রোজগারের উপায়।

Border business Suffer Demonetization
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy