কারও সঙ্গে দেখা হলেই ছেলেটা জিজ্ঞেস করত, ‘‘আমাকে একটু বাড়ি পৌঁছে দেবে?’’
কিন্তু বাড়ি কোথায়, জানতে চাইলে মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকত।
ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে অবশ্য সেই ছেলেকেই বাড়ি পৌছে দেওয়া গিয়েছে। সোমবার নতুন পোশাক পরিয়ে ছেলেটিকে ফিরিয়ে দিয়েছে হিঙ্গলগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতি। ভাইপোকে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর পিসিমা।
হিঙ্গলগঞ্জের সীমান্তবর্তী বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতীর তীরে দিন কুড়ি হল খেলা করতে দেখা যেত বছর আঠারোর একটি ছেলেকে। মানসিক সুস্থতা নেই পুরোপুরি। কেউ খেতে দিলে খেত। না দিলে অভুক্তই থাকত। শুধু তার একটাই প্রশ্ন, ‘‘আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে পারো?’’
পুলিশ জানায়, এক সীমান্তরক্ষীর সাথে ভাব জমেছিল ছেলেটির। তাকে সে বলেছিল, নাম সুকুমার রায়। বাড়ি নাকি জফালা গ্রামে।
কোথায় মিলবে সে গ্রামের খোঁজ?
ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ ইন্টারনেট ঘাঁটতে শুরু করেন। সম্প্রতি জানা যায়, পশ্চিম মেদিনীপুরে খড়্গপুর থানা এলাকায় জফালা নামে একটি গ্রাম আছে। সুকুমারের ছবি তুলে পাঠানো হয় থানায়। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। শেষে সেখানকার জফালা আদর্শ বিদ্যালয়ের এক কর্মী রাজা ঘোষের ফোন নম্বর জোগাড় করা হয়। রাজাবাবু জানান, তাঁদের স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে বিমল রায় নামে একটি ছেলে।
সেই সূত্র ধরে জানা যায়, জফালা গ্রামের গরিব পরিবারের ছেলে বিমল। মাস পাঁচেক আগে মামার বাড়ি যাবে বলে বেরিয়েছিল। আর ফেরেনি। ছেলের শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বাবা-মা। হারানো ছেলের খবর পেয়ে বিমলের পিসি জয়ন্তী নায়েক দুই প্রতিবেশীকে নিয়ে হিঙ্গলগঞ্জে আসেন। বিমল তাঁদের দেখে চিনতে পারে। জড়িয়ে ধরে।
সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘এই প্রথম নয়, এর আগেও কয়েকজন অসুস্থকে বাজারে ঘুরে বেড়াতে দেখে তাদের ঠিকানা জোগাড় করে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
এ দিন যাওয়ার আগে সকলের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল ব্যবসায়ী সমিতি। পথ খরচের টাকাও দেওয়া হয়। স্থানীয় বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল-সহ অনেকে ছিলেন সেখানে।
বিমল বলে, ‘‘সুস্থ হলে পথ চিনে ফের আসব তোমাদের গ্রামে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy