সুনসান: আগে এই এলাকাতেই চলত দিনভর কেনাবেচা। নিজস্ব চিত্র
রোজগার বন্ধ হওয়ায় ভোট নিয়ে আগ্রহ হারিয়েছেন হাসনাবাদ এবং পার হাসনাবাদ ফেরিঘাট সংলগ্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা। তাঁদের বক্তব্য, সংসার চালানোই যখন দায় হয়ে পড়েছে তখন ভোট নিয়ে মাথাব্যথা করে লাভ কী?
সম্প্রতি হাসনাবাদ এবং পার হাসনাবাদের মধ্যে বনবিবি সেতুর উদ্বোধন হয়েছে। এর ফলে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামবাসীরা অবশ্যই উপকৃত হয়েছেন। তবে হাসনাবাদ এবং পার হাসনাবাদ ফেরিঘাট সংলগ্ন বাজারের প্রায় শ’চারেক ব্যবসায়ী এ জন্য সঙ্কটে পড়েছেন। ক্রেতার অভাবে তাঁদের বন্ধ করে দিতে হচ্ছে দোকান। অথচ ক’দিন আগেও ভোর থেকে রাত পর্যন্ত বাজারটি গমগম করত। সেতু হওয়ার পরে সব সুনসান। ঠিক নির্বাচনের মুখে এ ভাবে রুটি-রুজি বন্ধ হওয়ায় ভোট নিয়ে আগ্রহ হারিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।
কয়েক দিন আগের কথা। তখন সেতু হয়নি। পার হাসনাবাদ ফেরিঘাটের পাশে ছিল হিঙ্গলগঞ্জ-লেবুখালি-সহ রূপমারি, শিতলিয়া, বাইলানি-সহ বিভিন্ন রুটের বাস এবং অটোস্ট্যান্ড। হাসনাবাদ ফেরিঘাটের পাশে সার সার দোকান। প্রতিদিন দু’পারের অসংখ্য মানুষ এ পথে যাতায়াত করতেন। যাত্রীদের জন্য গড়ে উঠেছিল বেশ কয়েকটি সাইকেল-বাইক রাখার গ্যারাজও। এখন দু’একটি গ্যারাজ কোনও মতে চালু থাকলেও অধিকাংশই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এক গ্যারাজ মালিক তুলসী পালের কথায়, ‘‘সেতু চালু হওয়ায় অনেকেরই সুবিধা হয়েছে। কিন্তু আমাদের সর্বস্বান্ত হতে হয়েছে। সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। নিজের দোকান ছেড়ে অন্যের দোকানে কাজ নিতে হচ্ছে।’’ আর এক গ্যারাজ মালিক রাজু পাল বলেন, ‘‘কুড়ি বছর ধরে গ্যারাজ চালিয়ে সংসার টেনেছি। সেতু হওয়ার পরে সব পাল্টে গেল। কোনও দলের নেতানেত্রীই তো দুর্দিনে আমাদের পাশে থাকার কথা বলছেন না। তাই ভোট নিয়ে মাতামাতির আগ্রহও আমরা হারিয়েছি।’’
এক পাড়ের বাজার কমিটির সম্পাদক অশোক ঘোষ বলেন, ‘‘এখানে প্রায় ১৮০টি দোকান ও ৮টি গ্যারাজ রয়েছে। রাস্তার দু’পাশে অস্থায়ী দোকান শতাধিক। খরিদ্দারের অভাবে সব প্রায় বন্ধের মুখে।’’ ব্যবসায়ীদের কথায়, ‘‘সারা দিন বসে থেকে ৫০-৬০ টাকা আয় হলে তাতে কি সংসার চলে? ফলে দোকান বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।’’
ব্যবসার অবস্থা খারাপ হওয়ায় শুভঙ্কর পাল ছেলে-বৌকে নিয়ে দোকান খুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘সেতু হোক আমরাও চাই। তবে আমাদের দিকটা দেখা হলে আজ হয় তো এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হত না।’’ প্রশাসনের পক্ষে জানানো হয়েছে, নৌকোর মাঝি এবং ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের জন্য পার হাসনাবাদে ‘কর্মতীর্থ’ হচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীরা তাতে খুশি নন। তাঁরা মনে করেন, যেখানে ‘কর্মতীর্থ’ হচ্ছে সেই জায়গাটা ব্যবসার পক্ষে উপযুক্ত নয়। তাঁদের দাবি, সেতুর নীচে যদি অটো-বাসস্ট্যান্ড করা যায় তা হলে ব্যবসার সুদিন ফিরবে। অন্যথায় কাজের খোঁজে ভিন রাজ্যে চলে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy