প্রায় ১৪০০ বিঘে জমির ম্যানগ্রোভ কেটে ভেড়ি তৈরির অভিযোগ উঠেছিল বাসন্তীতে। আদালত সেই জমিতে ম্যানগ্রোভ ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু অভিযোগ, বছরের পর বছর কেটে গেলেও সেই নির্দেশ মানেনি রাজ্য। সম্প্রতি নতুন করে মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে রাজ্যকে ভর্ৎসনা করেছে আদালত। তিন সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, ‘‘এ ধরনের কোনও নির্দেশিকা হাতে পাইনি। পেলে খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে ম্যানগ্রোভ যাতে কোনও ভাবে ধ্বংস না হয়, সে বিষয়ে প্রশাসনের সবস্তরে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে।’’
২০১৯ সালে বাসন্তীর ভরতগড় পঞ্চায়েতের আনন্দাবাদ ও গরানবোস মৌজায় প্রায় ১৪০০ বিঘা জমির ম্যানগ্রোভ কেটে ফেলা হয় বলে অভিযোগ। এর বিরুদ্ধে ২০২০ সালে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন বাসন্তীর বাসিন্দা কালাম পৈলান। সেই মামলার শুনানিতে হাই কোর্টের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে ভর্ৎসনা করে এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলেন। রাজ্য সরকারের গড়িমসি দেখে উচ্চ আদালত এই ম্যানগ্রোভ রক্ষার জন্য তৎকালীন এডিজি (পরিকল্পনা) অজয় মুকুন্দ রানাডের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করে দেয়। সেই কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়। যার ভিত্তিতে আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, আনন্দাবাদ ও গরানবোস মৌজার ওই জমিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি, ম্যানগ্রোভ নিধনের কাজে যারা জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়।
কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেলেও ভেড়ি ধ্বংস করে নতুন করে ওই এলাকায় ম্যানগ্রোভের বনভূমি তৈরি করা হয়নি বলে অভিযোগ। ২০২২-’২৩ সালে একাধিক বার আদালত এ বিষয়ে নির্দেশ দিলেও রাজ্য সরকার কার্যত কোনও উদ্যোগ করেনি বলে অভিযোগ। চলতি বছরে কালাম বিষয়টি নিয়ে ফের হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। পয়লা অগস্ট এই মামলার শুনানিতে আরও এক বার রাজ্য সরকারকে ভর্ৎসনা করে আদালত।
মামলার আইনজীবী তমাল ঘোষ ও দেবজ্যোতি দেব বলেন, “বিচারপতি সুজয় পাল ও স্মিতা দাসের এজলাসে ওঠে মামলাটি। মামলার শুনানিতে বিচারপতি বলেন, ২০২২-’২৩ থেকে এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকার সঠিক কোনও রিপোর্ট জমা দিতে পারল না। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য সরকারকে এ বিষয়ে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ হয়েছে।”
বাসন্তীর বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল বলেন, “ম্যানগ্রোভ কাটলে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা আছে। এই এলাকায় যে ম্যানগ্রোভ কাটা হয়েছিল, তা অনেক দিন ধরেই বন্ধ। ব্লক প্রশাসনের তরফে জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্টও দেওয়া হয়েছে। নতুন করে এলাকায় কোনও সমস্যা নেই।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)