নাবালিকা প্রসূতির মৃত্যুর হার নিয়ে চিন্তা বাড়ছে রাজ্যের। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে যত প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, তার অন্তত ১৪ শতাংশ নাবালিকা। আরও জানা গিয়েছে, গত আর্থিক বছরে রাজ্যে যত প্রসব হয়েছে, তার মধ্যে নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা প্রায় ১৫ শতাংশ। নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যার ভিত্তিতে বেশ কিছু জেলাকে উদ্বেগজনক বলে চিহ্নিতও করেছে স্বাস্থ্য দফতর। সেই তালিকায় উপরের দিকেই রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা। নাবালিকা প্রসূতি নিয়ে এই উদ্বেগের মধ্যেই শনিবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কুলতলিতেও সন্তানের জন্ম দিল বছর তেরোর এক কিশোরী!
কুলতলি ব্লক হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত বছরের শেষ দিকে মাত্র বারো বছর বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হয় মেয়েটি। তারপর থেকে ব্লক হাসপাতালের অধীনেই চিকিৎসাধীন ছিল। পয়লা জুলাই তার প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ ছিল। সে সময়েই হাসপাতালে ভর্তি হয়। কিন্তু পরিবার সূত্রের খবর, কয়েক দিন ভর্তি থাকার পরেও স্বাভাবিক প্রসব হয়নি। ক্রমশ শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। গ্রামীণ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের (সিজ়ার) সুবিধা না থাকায় শনিবার সকালে তাকে সেখান থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ওই এলাকা থেকে মহকুমা হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার। নাবালিকা প্রসূতিকে নিয়ে সেখানে গেলে পুলিশি ঝামেলায় জড়ানোর ঝক্কি ছিল। তাই বাড়ির লোকজন মেয়েটিকে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যান। সেখানেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্ধ্যায় কন্যাসন্তানের জন্ম দেয় মেয়েটি।
কুলতলিব্লক গ্রামীণ হাসপাতাল সূত্রের খবর, নাবালিকা প্রসূতির সন্তান প্রসবের ঘটনা নতুন কিছু নয়। এমনকী, ১৫ বছরের নীচে মা হওয়ার ঘটনাও আকছার ঘটছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত জুন মাসে ওই হাসপাতালে ১৫ বছরের কম বয়সী এক কিশোরী সন্তান প্রসব করে। ১৫-১৯ বছর বয়সি ৩১ জন ওই মাসে সন্তান প্রসব করেছে। ১৯ বছর বা তার কমবয়সি পাঁচ জন দ্বিতীয় বার সন্তান প্রসব করেছেন গত মাসে। এমনকী, ১৯ বছরের এক তরুণী ওই মাসেই ওই হাসপাতালে তৃতীয় সন্তান প্রসব করেন। হাসপাতালের এক আধিকারিক জানান, প্রত্যন্ত এই এলাকায় অন্যান্য মাসেও ছবিটা প্রায় একই রকম। জেলার আরও এক প্রত্যন্ত ব্লক ক্যানিং ২ এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সেখানে যত প্রসব হচ্ছে, তার ৩০ শতাংশই নাবালিকা!
এই পরিসংখ্যান উদ্বেগ বাড়াচ্ছে চিকিৎসকদের। তাঁরা মনে করছেন, প্রত্যন্ত এলাকায় সচেতনতার অভাব এবং আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির কারণেই কম বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার ঘটনা বাড়ছে। বাড়ছে নাবালিকা বিয়ের সংখ্যাও। নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা বৃদ্ধি তার অন্যতম ফল। ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা, কুলতলি ব্লকেই প্রচুর নাবালিকা বিয়ে হচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রশাসন চেষ্টা করেও তা রুখতে পারছে না।
ক্যানিং ১ ব্লকের সিডিপিও বলেন, “নাবালিকা বিয়ের হিড়িক ইদানীং বেড়েছে। আমরা খবর পেলেই পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে পদক্ষেপ করছি।” ক্যানিং ২ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক হরিপদ মাঝি বলেন, “নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করতে এবং কমবয়সি মেয়েদের গর্ভবতী হওয়া আটকাতে আমরা দল তৈরি করেছি। প্রতিটি বাড়ি বাড়ি, স্কুলে তারা যাচ্ছে।” কুলতলি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অয়ন্তিকা মণ্ডলের কথায়, “কম বয়সে গর্ভবতী হওয়া আটকাতে নানা চেষ্টা চলছে। তবে লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে আমরা প্রায় একশো শতাংশ প্রসূতিকে হাসপাতালে আনতে পেরেছি। এতে মৃত্যুর হার কমানো গিয়েছে।”
তথ্য সহায়তা: সামসুল হুদা ও প্রসেনজিৎ সাহা
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)