Advertisement
E-Paper

সালিশিতে টাকা আদায়ে সিদ্ধহস্ত তাপস

এখানে সে-ই অলিখিত প্রশাসন! সামাজিক বা পারিবারিক সমস্যা সমাধানের জন্য পুলিশ প্রশাসন রয়েছে। কিন্তু ডায়মন্ড হারবারের হরিণডাঙা পঞ্চায়েতের বাহাদুরপাড়ায় সে-ই সব। তার ফরমানেই সালিশি সভা বসত। আর সেখানে জরিমানার টাকা অবলীলায় সে পকেটস্থ করত!

শুভাশিস ঘটক ও দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৬ ০১:৩৩
এখানে বসেই নিহত কৌশিক ফোনে কথা বলছিলেন। সোমবার সেখানেই তদন্তে যায় সিআইডি। নিজস্ব চিত্র।

এখানে বসেই নিহত কৌশিক ফোনে কথা বলছিলেন। সোমবার সেখানেই তদন্তে যায় সিআইডি। নিজস্ব চিত্র।

এখানে সে-ই অলিখিত প্রশাসন!

সামাজিক বা পারিবারিক সমস্যা সমাধানের জন্য পুলিশ প্রশাসন রয়েছে। কিন্তু ডায়মন্ড হারবারের হরিণডাঙা পঞ্চায়েতের বাহাদুরপাড়ায় সে-ই সব। তার ফরমানেই সালিশি সভা বসত। আর সেখানে জরিমানার টাকা অবলীলায় সে পকেটস্থ করত! সে, ডায়মন্ড হারবারের আইটিআই ছাত্র কৌশিক পুরকাইতকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় ধৃত তৃণমূল নেতা তাপস মল্লিক। তাকে জেরা করে এবং তদন্তে নেমে এমনটাই দাবি করেছে সিআইডি।

সিআইডি জেনেছে, যে মোষ চুরির অপবাদ দিয়ে দিনকয়েক আগে কৌশিককে পিটিয়ে মারা হয়, রক্ষাকালী পুজোর বলির জন্য চাঁদা তুলে ২০ হাজার টাকায় সেই মোষ কিনেছিলেন গ্রামবাসীরা। দিন কয়েক আগে কৌশিককে মারধরের সময় তার মা ও মাসির কাছে মোষ বাবদ ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দাবি করেছিল তাপস। সে দিন কৌশিকের মায়ের কাছ থেকে মোষ বাবদ ৬০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ মুচলেকাও লিখিয়ে নিয়েছিল ওই তৃণমূল নেতা। তারপরই মারধর থামে। কিন্তু কৌশিক বাঁচেনি।

তদন্তকারীদের দাবি, ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তাপস সব জায়গায় নিজের দাপট বজায় রাখার চেষ্টা করত। বন্দরের শ্রমিক সরবরাহ মারফত দিনে প্রায় লক্ষাধিক টাকা আদায় করত সে। পাশাপাশি নিজের পঞ্চায়েত এলাকায় সালিশিতে জরিমানার মাধ্যমে টাকা নেওয়াটা এক রকম নিয়ম করে ফেলেছিল।

পশ্চিমপাড়ার এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘সপ্তাহে প্রায় চার দিন নানা পরিবারের সমস্যা নিয়ে নিজের বাড়িতেই সালিশি-সভা করত তাপস। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর তাপস-বাহিনীর দাপটে সকলে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। নানা অজুহাতে সালিশি ডাকা হতো। তারপর মোটা টাকা ক্ষতিপূরণ।’’ আর এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘তাপসের দাপটে কেউ মুখ খুলতে পারতেন না। সে দিন তাপস অনুগামী দেবরাজ ও যুববরাজ মারধর করেছিল কৌশিককে। তারপর তাপসকে ডেকে নিয়ে এসে সালিশি-সভা বসিয়ে জরিমানা আদায়ের চক্রান্ত করেছিল।’’

তদন্তকারীদের অনুমান, ওই দিন বেধড়ক মারধরের পর পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে তাপস টাকার টোপ দিয়ে বিষয়টি মিটমাটের চেষ্টা করেছিল। শাসক দলের লোক হওয়ায় তাপস মূল অভিযুক্ত জানা সত্ত্বেও কৌশিকের মা তাই ভয়ে প্রথমে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছিলেন। পরে তিনি নির্দিষ্ট ভাবে তাপস ও তার অনুগামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেই অভিযোগই বয়ান হিসেবে গৃহীত হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী তদন্ত হচ্ছে।

তবে জেরায় তাপস কোনও মুচলেকা লেখায়নি এবং মারধরের ঘটনাতেও সে জড়িত নয় বলে তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেছে। তদন্তকারীরা জানান, তাপসের বয়ানের সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির কোনও মিল পাওয়া যাচ্ছে না। ওই দিন তাপস উদ্যোগী হলেই কৌশিকের উপর মারধর বন্ধ হয়ে যেত। কিন্তু তাপস উদ্যোগী হয়নি। উল্টে মারধরের মাত্রা বাড়িয়ে জরিমানা আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে। তাপস জেরায় দাবি করেছে, হাসপাতালে গিয়ে সে-ই কৌশিকের চিকিৎসার খরচ দিয়েছেন। কিন্তু তদন্তকারীরা জেনেছেন, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কৌশিককে মৃত ঘোষণা করা হয়। চিকিৎসার কোনও পরিস্থিতি ছিল না।

এ পর্যন্ত কৌশিককে খুনের ঘটনায় তাপস-সহ ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু এখনও অধরা কয়েক জন। তাদের খোঁজ চলছে এবং তাপস ও তার সঙ্গীদের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশনের চেষ্টা হচ্ছে বলে সিআইডি জানিয়েছে। ধরপাকড়ের ভয়ে বর্তমানে পশ্চিমপাড়ার অনেকে ঘরছাড়া। সোমবার পশ্চিম বাহাদুরপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, ১৫ জন ছাত্রছাত্রীর কেউ নেই। প্রধান-শিক্ষক-সহ দুই শিক্ষক শুধু বসে রয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী অতিরিক্ত গরমের জন্য ছুটির পরে এ দিনই স্কুল খোলে। তাপস ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি। দিন কয়েক পরেই স্কুলে গরমের ছুটি পড়ে যাবে। তখনও পড়ুয়ারা আসবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন শিক্ষকেরা। প্রধান শিক্ষক আশিরূপ জামান বলেন, ‘‘তেমন হলে বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হবে।’’

গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, বেশির ভাগ বাড়ি ফাঁকা। দরজা খোলা অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে। কয়েকজন মহিলা জানান, এখন ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ থাক। পুলিশ কখন কাকে ধরবে জানা নেই। সকলে আতঙ্কে রয়েছেন। দুপুর আড়াইটে নাগাদ সিআইডি-র একটি দল পশ্চিম বাহাদুরপুরের যে গাছতলায় বসে ফোনে সে দিন কৌশিক কথা বলছিলেন, সেখানকার ম্যাপ তৈরি করেন। কৌশিকের মাসির বাড়ির পড়শিদের নামও নথিভুক্ত করেন।

diamond harbour
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy