Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

হ্যাপা পোহাতে চাইছেন না চাষি, ফায়দা ফড়ের

বনগাঁর চাষি শঙ্কর মণ্ডল এ বার দু’বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। এক বিঘে জমির ১১ বস্তা ধান ফড়েদের কাছে বিক্রি করেছেন। বস্তা-পিছু দাম পেয়েছেন ৮৩০ টাকা

  সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ: শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:১৪
Share: Save:

বনগাঁর চাষি শঙ্কর মণ্ডল এ বার দু’বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। এক বিঘে জমির ১১ বস্তা ধান ফড়েদের কাছে বিক্রি করেছেন। বস্তা-পিছু দাম পেয়েছেন ৮৩০ টাকা। সরকারি ক্রয়কেন্দ্র থেকে বস্তা-প্রতি ধান কেনা হচ্ছে ১০২০ টাকায়। তা হলে সরকারি জায়গায় গিয়ে ধান বিক্রি করলেন না কেন?

প্রশ্ন শুনে উত্তেজিত শঙ্কর। বললেন, ‘‘সরকারের ঘরে ধান নিয়ে গেলে প্রতি বস্তায় (৬০ কেজি) ৪ থেকে ৭ কেজি তো প্রথমেই বাদ দিয়ে দেয়। ধান বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য খরচ পড়ে প্রায় ৩০ টাকা। এত সব হ্যাপায় না গিয়ে ফড়ের কাছে বেচাই ভাল।’’

সরকারি ভাবে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য বনগাঁ ব্লকের কিষান মান্ডিতে ক্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। কিন্তু বনগাঁর বহু ধান চাষি সেখানে না গিয়ে ধান বিক্রি করছেন ফড়েদের কাছে। কারণ খুঁজতে গিয়ে উঠে এল নানা প্রসঙ্গ। জানা গেল, সরকারি কেন্দ্রে বস্তা-পিছু ধান বাদ দেওয়ার ফলে বিরক্ত অনেকেই। তুলনায় ফড়েদের কাছে ধান বিক্রি তাঁদের কাছে সহজ।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এক বিঘে জমিতে ধান চাষ করতে খরচ প্রায় ৬ হাজার টাকা। জমিতে ধান রোয়া, লাঙল ও সারের খরচ আরও হাজার তিনেক টাকা। ধান কাটা ও ঝারাতে গুনতে হয় ৩ হাজার টাকা। এক বিঘে থেকে ১১ বস্তা ধান পাওয়া গেলে ফড়েদের কাছে বিক্রি করলে পাওয়া যাচ্ছে ৯,৩৫০ টাকা। তাতেই সন্তুষ্ট বহু চাষি।

শুক্রবার দুপুরে বনগাঁর নতুনগ্রামে গিয়ে দেখা গেল, খেতে চাষিরা বস্তায় ধান ভরার কাজ করছেন। প্রায় সকলেই ফড়েদের পক্ষে সাওয়াল করলেন। চাষিদের একজন মন্টু ঘোষ। তিনি জানালেন, যে বস্তায় ধান তোলা হচ্ছে, তা ফড়েরাই দিয়েছে। ধান ঝাড়ার মেশিনও ওদের দেওয়া। খেত থেকেই ধান কিনে নিয়ে যাচ্ছে তারা। দাম দিচ্ছে বস্তা-প্রতি ৮৩০ টাকা।

কেন সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন না? মন্টুর কথায়, ‘‘আমাদের কিসান কার্ড নেই। কার্ড করতে নানা ঝামেলা। তারপরে বস্তা প্রতি কয়েক কেজি ধান কম দিচ্ছে। পরিবহণ খরচ তো আছেই। সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে ধান বিক্রির করতে দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করতে হয়। দিনের কাজের ক্ষতি হয়। ফড়েদের কাছে ধান বিক্রি করলে লাভ হয় তো একটু কম, কিন্তু কাজটা সহজ।’’

খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানাচ্ছেন, ‘‘কিছু চাষি ভিজে ধান বা ধানের বস্তায় নানা জিনিস রেখে ওজন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। সেই সব ধান তো বাদ দেওয়াই হবে।’’ তবে তিনি জানিয়েছেন, চাষিদের কাছ থেকে আরও দ্রুত ধান কিনতে রাজ্যে আরও ২০০০ হাজার কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। বর্তমানে রয়েছে ২২৮৬টি কেন্দ্র। জানা গেল, চাষিদের মন পেতে ফড়েরা তাদের বছরভর চাষের কাজে আগাম টাকা দিয়ে সাহায্য করে। সেই ঋণ শোধ করার দায়ও এসে পড়ে চাষির ঘাড়ে।

বৃহস্পতিবার বনগাঁ থানার পুলিশ তাপস মণ্ডল নামে এক ফড়েকে গ্রেফতার করেছে। তার কাছ থেকে পুলিশ বিভিন্ন চাষিদের নামে ধান বিক্রির কয়েকটি সরকারি কিসান কার্ড উদ্ধার করেছে। কোথা থেকে সে কার্ড সংগ্রহ করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। অবৈধ ভাবে ধান বিক্রি করতে এসে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে বাদুড়িয়ার এক ফড়ে। পুলিশ জানায়, বাসুদেবপুরের বাসিন্দা ওই ব্যক্তির নাম সিরাজুল ইসলাম। শুক্রবার দুপুরে ৯০ বস্তা ধান-সহ বাদুড়িয়ার পাইকারি বাজার থেকে তাকে ধরা হয়েছে। পুলিশের দাবি, জেরায় সে জানিয়েছে, চাষিদের কাছ থেকে কুইন্টাল-পিছু ধান সাড়ে ৮ শো টাকা করে কিনেছিল সে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corruption Middleman Agriculture Farmers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE