E-Paper

একশো দিনের কাজের টাকা হাতানোর নালিশ

সালমার দাবি, টাকা ঢোকার পর পরই তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য বিশ্বজিৎ ঘোষের সঙ্গী প্রণবেশ মণ্ডল ও আরও এক জন এসে টাকা তুলে দিতে বলেন।

নবেন্দু ঘোষ 

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৪ ০৬:৫০
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

কেন্দ্র-রাজ্য দীর্ঘ দিন ধরে টালবাহানা চলছে একশো দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা নিয়ে। প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে কেন্দ্র টাকা আটকে রাখায় রাজ্য সরকার এই বকেয়া টাকা পাঠিয়েছে শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে। এ দিকে, কাজ না করেও অনেকের অ্যাকাউন্টে কিছু কিছু টাকা ঢুকেছে বলে কিছু মানুষের দাবি। সেই টাকা ঘুরপথে তৃণমূল নেতারা তুলে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে। তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা অবশ্য বিষয়টিকে দুর্নীতি বলে মানতে নারাজ।

হিঙ্গলগঞ্জের স্যান্ডেলবিল পঞ্চায়েতের বাঁকড়া জমাদার পাড়ায় একাধিক এমন অভিযোগ উঠেছে। বছর সত্তরের নুরজাহান বিবির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে একশো দিনের কাজের মজুরি বাদদ ২৮ ফেব্রুয়ারি দু’দফায় ৫,৩২৫ টাকা ঢোকে। নুরজাহানের দাবি, ‘‘স্থানীয় বাসিন্দা, তৃণমূল কর্মী প্রণবেশ মণ্ডল আমার কাছে এসে বলেন, ওই টাকা তুলে তাঁর হাতে দিতে হবে। ৫ হাজার টাকা দিতে বাধ্য হলাম।’’ ঠিক ভাবে হাঁটতে পারেন না নুরজাহান। লাঠি ধরে কোনও রকমে চলাচল করেন। জানালেন, একশো দিনের শ্রমিকের কাজ তো দূরের কথা, তিনি নিজের দৈন্ন্দিন কাজটুকুও ভাল ভাবে করতে পারেন না!

সালমা বিবি জানালেন, তাঁর শ্বশুর, স্বামী ও নিজের জবকার্ড আছে। তিনটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে একশো দিনের কাজে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঢুকেছে। তবে তাঁরা কেউ সেই কাজ করেননি। সালমার দাবি, টাকা ঢোকার পর পরই তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য বিশ্বজিৎ ঘোষের সঙ্গী প্রণবেশ মণ্ডল ও আরও এক জন এসে টাকা তুলে দিতে বলেন। সালমার শ্বশুরের অ্যাকাউন্টে প্রায় ১১ হাজার ঢুকেছিল। সব নিয়ে গিয়েছে। সালমাকেও মাত্র ৫০০ টাকা রেখে ৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। সালমার স্বামী তাঁর অ্যাকাউন্টে ঢোকা সাড়ে ১১ হাজার টাকার মধ্যে আড়াই হাজার টাকা আটকে দিতে পেরেছিলেন। সালমা বলেন, ‘‘আমরা কেউ জবকার্ডের কাজ করি না। প্রণবেশ ও আরও এক জন এসে বলেছিল, জবকার্ডের কাজ না করলে কার্ড বাতিল হয়ে যাবে। তাই ওঁরা চেয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন ওই কার্ড ব্যবহার করার জন্য। আগেও একাধিক বার টাকা ঢুকেছিল। সেই টাকা তুলে দিতে হয়েছে ওঁদের হাতে।’’

স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল গাজি জানালেন, জবকার্ডের কাজ না করলেও ৭ হাজার ৮০০ টাকা ঢুকেছিল। সামান্য কয়েকশো টাকা রেখে হাজার সাতেক টাকা তুলে দিতে হয় বিশ্বজিৎকে। তিনি বাড়ি এসে টাকা নিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানালেন জয়নাল।

বিশ্বজিতের ব্যাখ্যা, জয়নালের জামাই নাকি কাজ করেছিলেন একশো দিনের প্রকল্পে। তাঁর পারিশ্রমিক বিশ্বজিৎ সে সময়ে মিটিয়ে দিয়েছিলেন। জামাইয়ের ক্ষেত্রে জয়নালের জবকার্ড ব্যবহার করা হয়েছিল। জয়নালের অ্যাকাউন্টে টাকা এলে তা তিনি নিয়েছেন বলে অস্বীকার করেননি বিশ্বজিৎ।

এই কৌশলের মধ্যে দুর্নীতির গন্ধ পাচ্ছে বিরোধীরা। বিজেপি নেতা তুলসী দাস বলেন, ‘‘এ ভাবে এক জনের কাজের টাকা অন্য জনের অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারে না। আসলে এ ভাবেই কারচুপি করে তৃণমূলের লোকজন টাকা আত্মসাৎ করে। সরকারি টাকা লুট করে। এ সব কারণেই কেন্দ্র টাকা আটকে দিয়েছে।’’

বিশ্বজিতের দাবি, প্রণবেশ তাঁর লোক নন। স্থানীয় আর এক তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য নুরুল ইসলাম সর্দারের ঘনিষ্ঠ। নুরুলের বক্তব্য তিনি সরকারি ঠিকাদার। নিয়ম মেনে কাজ করেছেন। কোনও দুর্নীতি হয়নি। তবে টাকা তুলতে বাড়িতে লোক পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে কোনও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা দিতে পারেননি নুরুল।

তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তথা হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সইদুল্লা গাজির ব্যাখ্যা, ‘‘বিরোধীরা কোনও দিন কোনও কাজ করেনি, তাই শুধু সমালোচনা করে। একশো দিনের কাজে অনেক সময়ে যে শ্রমিকেরা কাজ করেন, তাঁদের জবকার্ড না থাকলে নিকটজন বা অন্য কারও জবকার্ড ব্যবহার করেন। এখানে কোনও দুর্নীতি নেই।’’ সিপিএম নেতা রবি বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল একশো দিনের কাজের বকেয়া টাকা সাধারণ মানুষকে মিটিয়ে দিয়েছে বলে গলা ফাটাচ্ছে। আসলে তৃণমূল সরকার তাদের নেতাদের সরকারি টাকা ভোটের আগে লুট করার সুযোগ করে দিয়েছে। বহু দিন ধরে এই পদ্ধতিতে লুট করছে সরকারি প্রকল্পের টাকা।’’ হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও দেবদাস গঙ্গোপাধ্যায় সমস্যার কথা মেনে নিয়ে বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজের টাকা যার কাছে যা এসেছে, কেউ যেন কাউকে না দেয়। কেউ যদি এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ করে, তা হলে আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Hingalganj

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy