E-Paper

‘বাইরের লোক যখন তখন ঢুকে পড়ে হাসপাতালে’, কিছু বলতে গেলে চাকরি খেয়ে নেবে বলে হুমকি দেয়, বলছেন নিরাপত্তারক্ষীই

আর জি কর-কাণ্ডের পর থেকে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জেলার বহু হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসক, নার্সরা কেমন পরিবেশে কাজ করেন— তা সরেজমিন দেখতে গিয়ে উঠে এল বহু ক্ষোভ, আশঙ্কা, আতঙ্কের চাপা কাহিনী। আজ, কাকদ্বীপ মহকুমা ও কাকদ্বীপ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল

সমরেশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:০৮
হাতে গোনা নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়েই চলছে গোটা হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র

হাতে গোনা নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়েই চলছে গোটা হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র

পরিকাঠামো তো বটেই, নিরাপত্তা নিয়েও আগে একাধিক অভিযোগ উঠেছে কাকদ্বীপ মহকুমা ও কাকদ্বীপ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালকে ঘিরে। আর জি কর-কাণ্ডের পরে বিষয়গুলি আরও প্রকাশ্যে এসেছে।

মহকুমা ও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ভবন দু’টি পাশাপাশি। মহকুমা হাসপাতালের পুরনো ভবনে মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকেন ৪০ জনের কাছাকাছি। কিন্তু ওই ওয়ার্ডের দু’টি গেটেই দরজা বেহাল। যখন তখন যে কেউ ভিতরে ঢুকতে পারে। নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন দিনে দু’জন, রাতে মাত্র এক জন!

নামে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হলেও, নিরাপত্তার অভাব রয়েছে সেখানেও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা চিকিৎসক জানান, কিছু দিন আগে রাতে ডিউটিতে ছিলেন। সাড়ে ১১টা নাগাদ হঠাৎ পাঁচ-ছ’জন বাইরের লোক মহিলা ওয়ার্ডে চলে আসে। কেউ কেউ মদ্যপ ছিল। চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে তারা। চিকিৎসকের কথায়, ‘‘বাইরের লোক এ ভাবে কী করে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে পড়ে কে জানে!’’ তিনি জানান, চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য পৃথক ভাবে বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা আছে হাসপাতালের প্রত্যেক ওয়ার্ডে। কিন্তু ওই ঘরের দরজা পোক্ত নয়।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক নার্স বলেন, ‘‘হঠাৎ করে রাজনৈতিক দলের ১৫-২০ জন লোক হাসপাতালে ঢুকে এলে নিরাপত্তারক্ষীরা কিছু বলার সাহস পান না। তাঁরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। কিন্তু অভিযোগ করার কোনও জায়গা নেই।’’

কাকদ্বীপ মহকুমা ও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল মিলিয়ে ১২টি ওয়ার্ড রয়েছে। সেখানে প্রায় ৪১৪টি শয্যার ব্যবস্থা আছে। কাকদ্বীপ মহকুমার সাগর, ঘোড়ামারা, নামখানা, মৌসুনি, কাকদ্বীপ এবং পাথরপ্রতিমা ব্লকের একটা বড় অংশের মানুষ ওই হাসপাতালের চিকিৎসার উপরে নির্ভর করেন। সূত্রের খবর, হাসপাতালে ২০ জন নিরাপত্তা রক্ষী আছেন। তাঁদের মধ্যে ছ’জন করে দু’টি পর্যায়ে দিনে পাহারা দেন। রাতের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন তিন জন। বারোটি ওয়ার্ডের মধ্যে এক জন নিরাপত্তা রক্ষী জরুরি বিভাগের সামনে থাকেন, এক জন থাকেন মহকুমা হাসপাতালের পুরনো ভবনে। আর এক জন বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে কাজ করেন।

এক নিরাপত্তা রক্ষীর কথায়, ‘‘খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে দায়িত্ব পালন করতে হয়। হাসপাতালে বহিরাগতেরা যখন খুশি ঢুকে পড়ে। কিছু বলতে গেলে এ দাদা, সে দাদার নাম করে। কাজ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। কাকে কী বলব!’’

হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসক রয়েছেন আট জন। নার্সিং স্টাফ ২৭৬ জন। নার্সিং ট্রেনিং স্কুলে ১৪০ জন ছাত্রী থাকেন। তাঁদের নিরাপত্তার জন্য দিন-রাত মিলিয়ে মাত্র তিন জন নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন।

হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু রায় বলেন, ‘‘আগে আমাদের নিরাপত্তা কিছুটা ঢিলেঢালা ছিল। আর জি করের ঘটনার পরে আমরা সুন্দরবন পুলিশের সুপারের সঙ্গে কথা বলেছি। বর্তমানে দশ জন পুলিশ কর্মী শিফটিং ডিউটি করেন। হাসপাতালে সিসি ক্যামেরা আছে। আরও কয়েকটি লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার অভাব থাকলে তা দেখা হবে।’’

ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়ন্ত সুকুলের কথায়, ‘‘কাকদ্বীপ হাসপাতালে নিরাপত্তা ও পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। নিরাপত্তারক্ষী, সিসিটিভি আরও বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন দফতরে আবেদন জানানো হয়েছে। এ ছাড়া নার্স, চিকিৎসকদের জন্য শৌচাগার, শয্যার পরিকাঠামো ভাল করতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

kakdwip Kakdwip Hospital

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy