উত্তর ২৪ পরগনার অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রের বেশির ভাগ শিশু-মহিলা মঙ্গলবার খাবার পাননি। তবে কয়েকটি জায়গায় শিশুরা স্কুলে না এলেও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা রান্না করা খাবার পৌঁছে দিয়েছেন বাড়িতে।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন দুপুর পর্যন্ত এ ব্যাপারে সরকারি নির্দেশ নবান্ন থেকে জেলায় এসে পৌঁছয়নি। তবে সেই নির্দেশ যখন তখন চলে আসতে পারে ধরে নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ দিন সে কথা জানিয়ে জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সরকারের ঘোষণা মতো ইতিমধ্যেই ঘরে-ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। নিয়মমাফিক সবার কাছে তা পৌঁছে যাবে।’’
সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকেই জেলার সব কটি অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী এটাও জানিয়েছিলেন যে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সতর্কতার কারণে অঙ্গনওয়াড়ির কেন্দ্রগুলি বন্ধ থাকলেও উপভোক্তাদের ঘরে-ঘরে খাবার নিয়মিতভাবে পৌঁছে দেওয়া হবে। আজ, বুধবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজ্য ও জেলাস্তরে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তারপরই থেকেই সমস্ত পরিষেবা স্বাভাবিক হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর।
জেলার অঙ্গনওয়াড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প আধিকারিক সুহৃদকুমার দাস এ দিন বলেন, ‘‘সমস্ত মহিলা ও শিশুর বাড়ি চাল এবং আলু পৌঁছে দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই জেলার মোট ৯৮০০ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলছে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রত্যেককে ২ কিলো চাল, ২ কিলো করে আলু পৌঁছে যাবে।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, এই জেলার মোট ১০,২০০টি অঙ্গনওয়াড়ির কেন্দ্রে মোট ৬ লক্ষ মহিলা ও শিশু উপভোক্তা রয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি যাতে খাবার পৌঁছে দেওয়া যায় সে জন্য কোন কেন্দ্রে কত পরিমাণ চাল, আলু মজুত রয়েছে তার হিসেবনিকেশ চলছে। বাড়ি-বাড়ি সরবরাহের জন্য যে পরিমাণ খাবার প্রয়োজন, জেলা প্রশাসন থেকে সে সব জোগানের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
এ দিকে, এই সংক্রান্ত কোনও নির্দেশ এখনও আসেনি বলে জানিয়েছেন ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক আবুল কালাম আজাদ ইসলাম। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আইসিডিএস সংক্রান্ত কোনও নির্দেশ জেলা থেকে এখনও মহকুমায় আসেনি। নির্দেশ এলে শিশুপ্রকল্প আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করে কার্যকর করা হবে।’’
স্কুল ছুটি থাকলে কী ভাবে মহিলা ও শিশু পড়ুয়াদের চাল-আলু বিতরণ হবে তা নিয়ে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত সরকারি বিজ্ঞপ্তি আসেনি বসিরহাটে। এ দিন ওই মহকুমার প্রায় ৩ হাজার স্কুলের শিশুদের রান্না করা খাবার দেওয়া হয়। তবে জেলা প্রকল্প দফতর সূত্রের খবর, বুধবার থেকে বাড়ি গিয়ে চাল, আলু দেওয়া হবে। এ বিষয়ে বসিরহাট শহর শিশু বিকাশ সেবা প্রকল্পের আধিকারিক জ্যোতিরিন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের অধীনে থাকা ৭৫টি অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রে রান্না করা খাবার দেওয়া হয়েছে। সরকারি নির্দেশ এলে সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ সোভানা ইয়াসমিন, ছন্দা সরকার, মমতা বসু, টুম্পা ঘোষের মতো অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেন। টুম্পা বলেন, ‘‘স্কুলে এক-দু’জন এসেছিল। তাদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। রান্না করা ভাত, খিচুড়ি বাড়ি-বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’’
বনগাঁ মহকুমাতেও বেশির ভাগ অঙ্গনওয়াড়িরকেন্দ্র এ দিন বন্ধ ছিল। কয়েকটি কেন্দ্রে শিশুদের রান্না করা খাবারই দেওয়া হয়। তবে এ দিনও মহিলা ও শিশুদের বাড়ি-বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়া যায়নি বনগাঁতেও। বনগাঁর সিডিপিও জ্যোতির্ময় সমাদ্দার জানিয়েছেন, এখনও এ বিষয়ে সরকারি নির্দেশ আসেনি।
(তথ্য সহায়তা: সুপ্রকাশ মণ্ডল, সীমান্ত মৈত্র ও নির্মল বসু)