Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

সীমান্ত বন্ধ, সঙ্কট বনগাঁয়

সুনসান পেট্রাপোল। নিজস্ব চিত্র

সুনসান পেট্রাপোল। নিজস্ব চিত্র

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২০ ০৮:০২
Share: Save:

অনেক দোকানপাট বন্ধ। মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রগুলিও ফাঁকা। বাস, অটো বা অন্য যানবাহন স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে। বন্ধ বেশ কিছু হোটেলও। মালপত্র বহন করা শ্রমিকেরা বসে রয়েছেন। হাতে কাজ নেই। অভিবাসন, শুল্ক দফতরের সামনে যাত্রীদের লম্বা লাইনটা রাতারাতি উধাও। সোমবার এই চিত্রই দেখা গেল বনগাঁর পেট্রাপোল বন্দরে।

পেট্রাপোল বন্দর এলাকা দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে শুক্রবার রাত থেকে। চলবে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। তার জেরেই বন্দর এলাকার অর্থনীতি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে।

বনগাঁয় শিল্পকারখানা তেমন নেই। কয়েক হাজার মানুষ পেট্রাপোল বন্দরের উপরে জীবিকার জন্য নির্ভরশীল। যাতায়াতের উপরে নিষেধাজ্ঞার জেরে রোজগারে টান পড়েছে তাঁদের।

হোটেল, পরিবহণ ব্যবসা, মুদ্রা বিনিময় ব্যবসা ধুঁকছে। অনেক ছোটখাটো দোকানি রয়েছেন। তাঁদের অবস্থাও খারাপ। অভিবাসন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন কেবলমাত্র ভারতে থাকা বাংলাদেশিরা দেশে ফিরতে পারছেন। বাংলাদেশ থেকে নতুন করে কাউকে এ দেশে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। একই ভাবে যে সব ভারতীয় বাংলাদেশে রয়েছেন, একমাত্র তাঁদেরই দেশে ফিরতে দেওয়া হচ্ছে। নতুন করে কোনও ভারতীয়কে বাংলাদেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।

বন্দরের এক হোটেল মালিক সুভাষকুমার দে জানালেন, ১৩ মার্চের আগে পর্যন্ত রোজ তাঁর হোটেলে গড়ে দেড়শোজন মানুষ খাওয়া-দাওয়া করতেন। রবিবার সংখ্যাটা নেমে দাঁড়িয়েছে ৪০! স্বপন বলেন, ‘‘একদিনে কর্মীদের বেতন ও জ্বালানির খরচই ২ হাজার টাকা। সেই খরচই উঠছে না। ভাবছি, আপাতত হোটেল বন্ধ রাখব।’’

পেট্রাপোল থেকে কলকাতা পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য বন্দরে রয়েছে কয়েকটি বেসরকারি পরিবহণ সংস্থার বাস পরিষেবা। সেই ব্যবসা থমকে গিয়েছে। এখন কলকাতা থেকে সারা দিনে কয়েকজন বাংলাদেশি দেশে ফিরবেন বলে আসছেন। যাত্রীর অভাবে কোনও বাস পেট্রাপোল থেকে কলকাতা যাচ্ছে না। বন্দরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে বেশির ভাগ বাস। হতাশ বাস মালিকেরাও। যাত্রীদের মালপত্র বহন করতে বন্দরে রয়েছেন শ্রমিকেরা (কুলি)। যাত্রীদের অভাবে তাঁদেরও কোনও কাজ নেই। এক শ্রমিকের কথায়, ‘‘কী ভাবে পেট চলবে জানি না।’’ বাস ছাড়া ছোট গাড়ি যাত্রী নিয়ে কলকাতা যাতায়াত করে। স্ট্যান্ডে সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। বন্দর থেকে বনগাঁ স্টেশন পর্যন্ত রয়েছে অটো পরিষেবা। উত্তম মণ্ডল নামে এক অটো চালক বলেন, ‘‘অন্য সময়ে সারা দিনে যাত্রী নিয়ে ১২ বার যাতায়াত করতাম। এখন যাচ্ছি ৪ বার। তা-ও অটোতে যাত্রী থাকছে কম।’’

মুদ্রাবিনিময় কেন্দ্রগুলি খোলা থাকলেও অর্থ বিনিময় করার জন্য কোনও যাত্রী নেই। বিনিময় সংস্থার ম্যানেজার আশিস দে বলেন, ‘‘বন্দরে প্রায় ৩০০টি মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র রয়েছে। যাত্রীর অভাবে ব্যবসা কার্যত বন্ধ।’’ মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রের কর্মী বাপ্পা ঘোষ বললেন, ‘‘এ ভাবে কয়েক দিন চললে বেকার হয়ে যাব। রুটিরুজি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’

চা, পান, বিড়ি, সিগারেটের দোকানেও বিক্রি কমে গিয়েছে। তবে দু’দেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রফতানি চলছে। এ দিন দেখা গেল, বন্দরে আসা লোকজনের বেশির ভাগই মাস্ক না পরে ঘুরছেন।

তবে আপাতত পেট্রাপোল বন্দরের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন ভাইরাসের থেকেও রুজি হারানোর আতঙ্কে ভুগছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Petrapole Bongaon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE