Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

হাসপাতালের জানলা দিয়ে আত্মীয়কে ডাকলেন কোভিডে ‘মৃত’ রোগী!

সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ কোভিড ওয়ার্ডের জানলা দিয়ে এক আত্মীয় দাউদ গাজিকে দেখে হাত নেড়ে ডাকেন। সেই দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান পরিজনেরা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রসেনজিৎ সাহা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২১ ০৫:১৪
Share: Save:

জীবিত রোগীকে মৃত বলে দেখিয়েছিল খাস সরকারি ওয়েবসাইট। পরে জানা যায়, হাসপাতালের শয্যায় বসে ফল খাচ্ছেন ৭৯ বছরের ওই বৃদ্ধ। এ বার সেই একই অভিযোগ উঠল শহরের একটি সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থল: ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের বাসিন্দা, সাবির মোল্লা (৫০) নামে এক রোগীর করোনায় মৃত্যু হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার তাঁর পরিবারকে জানিয়েছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রাতে পরিজনেদের হাতে ডেথ সার্টিফিকেটও তুলে দেওয়া হয়।

কিন্তু শুক্রবার সকালে ‘মৃত’ সেই রোগীই ওয়ার্ডের জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে পরিবারের এক সদস্যকে ডাকেন। এর পরেই হাসপাতাল চত্বরে বেধে যায় হুলস্থুল।

পরিবারের অভিযোগ, খাতায়-কলমে সাবিরের মৃত্যু হলেও তিনি যে বেঁচে আছেন, সেটা প্রথমে মানতেই চাননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

প্রৌঢ়ের ছেলে মোস্তাফার অভিযোগ, বাবার বেঁচে থাকার খবর চিকিৎসকদের জানাতে গেলে তাঁকে চরম অপমানিত হতে হয়। এমনকি কয়েক জন চিকিৎসক ও নার্স মোস্তাফাকে তাঁর বাবার নাচের ভিডিয়ো এনে দেখাতেও বলেন।

এর পরেই বেনিয়াপুকুর থানার দ্বারস্থ হন সাবিরের পরিজনেরা। পুলিশের হস্তক্ষেপে সমস্যা মেটে। ডেথ সার্টিফিকেট ফেরত দিয়ে হাসপাতালের বন্ডে সই করে সাবিরকে বাড়ি নিয়ে যান তাঁর স্ত্রী ও ছেলে। শুক্রবার হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, “একটা সমস্যা হয়েছিল। সেটা মিটে গিয়েছে। রোগীর আত্মীয়দের আর কোনও অভিযোগ নেই।’’

ক্যানিংয়ের কুমারশা মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা সাবির গত শনিবার সন্ধ্যায় বুকে ব্যথা ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। রবিবার রোগীর সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের দেখা করতে দেওয়া হয়েছিল। তার পরে আর দেখা করতে দেওয়া হয়নি।

রোগীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বুধবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানান, সাবির করোনা আক্রান্ত। বৃহস্পতিবার বিকেলে স্ত্রী মাবিয়া মোল্লার সাথে ফোনে কথাও বলেন সাবির।

সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যদের দ্রুত হাসপাতালে এসে দেখা করতে বলা হয়। অভিযোগ, জরুরি অস্ত্রোপচারের নাম করে তাঁদেরকে দিয়ে বেশ কয়েক জায়গায় সই করিয়ে নেওয়া হয়।

এর পরে বলা হয়, করোনায় মারা গিয়েছেন রোগী। তাই দেহ পরিবারের হাতে দেওয়া যাবে না। অভিযোগ, রাত ১১টা নাগাদ পরিবারের হাতে সাবিরের ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে দেওয়া হয়।

তা পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আত্মীয়েরা। বৃহস্পতিবার সারা রাত হাসপাতাল চত্বরে বসেই কেটে যায় তাঁদের।

পরিবারের দাবি, শুক্রবার সকালে তাঁরা ওয়ার্ডে ঢুকে এক বার সাবিরকে চোখের দেখা দেখতে চেয়ে অনুনয়-বিনয় করলেও বিশেষ লাভ হয়নি।

সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ কোভিড ওয়ার্ডের জানলা দিয়ে সাবির তাঁর এক আত্মীয় দাউদ গাজিকে দেখে হাত নেড়ে ডাকেন। সেই দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান পরিজনেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal COVID19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE