বিশেষ পেশার মানুষদের ভ্যাকসিন দিতে উদ্যোগী হল প্রশাসন। সকাল থেকে ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজার এলাকায় ঘুরে দোকানিদের হাতে ভ্যাকসিন নেওয়ার কুপন তুলে দিলেন ভাঙড় ২ বিডিও কার্তিকচন্দ্র রায়। যে সব ব্যবসায়ী ও দোকানিরা এখনও টিকা নেননি তাঁদের করোনার প্রতিষেধক নিতে উৎসাহও দিলেন। টিকাকরণ কেন্দ্রে গিয়ে সবাই ঠিকঠাক ভ্যাকসিন নিচ্ছেন কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখেন তিনি। বিজয়গঞ্জ বাজার উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভ্যাকসিন নিতে ভোর থেকে এক হাজারেরও বেশি মানুষ লাইন দেন। নলমুড়ি ব্লক হাসপাতালেও ভোর থেকে ভ্যাকসিন নিতে লাইন ছিল রবিবার। ভাঙড় ২ ব্লকের চিলেতলা গ্রামের কানাই মণ্ডল বলেন, ‘‘শনিবার ভ্যাকসিনের জন্য লাইন দিয়েও ভ্যাকসিন পাইনি। তবে আগে থেকে কুপন নিয়ে ভোর ৪টে থেকে লাইন দিয়ে ভ্যাকসিন নিতে পেরেছি।’’
ভাঙড় ২ ব্লকের ১৩টি বাজারের প্রায় ৭ হাজার ব্যবসায়ীকে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ করা হয়েছে। বিজয়গঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘‘আগে আমাদের কেউ ভ্যাকসিন নেওয়ার কথা বলেননি। আমরা নিজেদের উদ্যোগে ভ্যাকসিন নিতে গেলে বলা হয়েছিল, ৪৫ বছরের কম বয়স্কদের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে না। বিডিও আমাদের ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করেছেন। তাতে আমরা খুশি। ব্যবসা করতে গিয়ে আমাদের প্রতিনিয়ত বহু মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয়। সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি।’’
রবিবার নলমুড়ি ব্লক হাসপাতাল থেকে ১২০০ ও বিজয়গঞ্জ বাজার উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে প্রায় ১০০০ জনের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে বলে ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। বিডিও বলেন, ‘‘হাটে-বাজারে এক সঙ্গে বহু মানুষ জমায়েত হন। সেখান থেকে করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়াতে পারে। সে কারণেই বিশেষ কোটায় ব্যবসায়ীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনা স্বাস্থ্য জেলা সূত্রে জানানো হয়েছে, চাহিদা মতো পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন সরবরাহ না থাকার কারণে ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে মানুষদের টিকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে বিশেষ কোটায় জেলার অধিকাংশ মহকুমা হাসপাতাল, ব্লক হাসপাতাল উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও পুরসভা এলাকায় ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ হয়েছে।
রবিবার ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল, বাসন্তী ও গোসাবা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতাল সব জায়গাতেই সাধারণ মানুষদের ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ বন্ধ ছিল। এ দিন বিশেষ টিকাকরণ কর্মসূচি চলেছে। ব্যবসায়ী, হকার ও পরিবহণ কর্মীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলায় ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ১৮০ জন প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকা পেয়েছেন এ দিন। ডায়মন্ড হারবার ও কাকদ্বীপ দুই মহকুমায় কেন্দ্রগুলিতে সাধারণের পাশাপাশি বিশেষ কোটার ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ, বসিরহাট, বারাসত, ব্যারাকপুর মহকুমার বেশিরভাগ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে রবিবার ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি।
ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় টিকাকরণ হয়নি বলেই ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানিয়েছেন। তবে আশার কথা শুনিয়েছেন জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা। তিনি বলেন, ‘‘রবিবার জেলায় নতুন করে ৫০ হাজার ভ্যাকসিন এসেছে। সোমবার থেকে জেলায় ভাল করে টিকাকরণ কর্মসূচি চলবে।’’