বিপজ্জনক: বাসে ওঠার জন্য হুড়োহুড়ি। নিজস্ব চিত্র।
ক্যানসার আক্রান্ত আত্মীয়কে গত ছ’মাস ধরে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন হাবড়ার বাসিন্দা রঞ্জিত নাগ। কিন্তু লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন তিনি। বাধ্য হয়ে রোগীকে এখন বাসে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হচ্ছে। শুক্রবার হাবড়া থেকে বাস ধরবেন বলে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। বললেন, “গতকালও বাসে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। বসার জায়গা মেলেনি। এত দিন ট্রেনে আরামেই যাতায়াত করেছি। কিন্তু বাসে খুবই সমস্যা হচ্ছে। দাঁড়ানোরও জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। খরচ হচ্ছে দ্বিগুণ। এ ভাবে ট্রেন বন্ধ না করে সম্পূর্ণ লকডাউন করে দিলেই তো পারত।”
বৃহস্পতিবার থেকে সরকারি নির্দেশে অন্যান্য শাখার পাশাপাশি বন্ধ বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখায় ট্রেন চলাচলও। ফলে কাজে বা অন্য প্রয়োজনে কলকাতা বা বারাসত যাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের প্রধান ভরসা এখন বাস। স্বাভাভিক ভাবেই বাসগুলিতে ভিড় উপচে পড়ছে। বাসের মধ্যে বসা তো দূরের কথা, দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। তারই মধ্যে গাদাগাদি করে মানুষ যাতায়াত করছেন। যাত্রীদের আশঙ্কা, এর ফলে করোনা সংক্রমণ আরও বেড়ে যাবে। কিন্তু পেটের টানে এ ভাবে যাতায়াত করা ছাড়া উপায় নেই।
শুক্রবার সকালে হাবড়া জয়গাছি বাস ডিপোয় গিয়ে দেখা গেল, বাসে ওঠার জন্য মানুষের লম্বা লাইন। বাসের লাইনেই শিকেয় উঠেছে দূরত্ব-বিধি। যাত্রীরা জানান, হাবড়া থেকেই বাসে এমন ভিড় হচ্ছে যে হাবড়া-অশোকনগর পেরনোর পরে আর কোনও যাত্রী বাসে উঠতে পারছেন না। দাঁড়ানোর জায়গা থাকছে না। যাত্রীদের অধিকাংশের দাবি, দ্রুত লোকাল ট্রেন চালু করা হোক। ট্রেনে অনেক জায়গা, ফলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা কম। সেই জায়গায় বাসে একজনের নিঃশ্বাস পাশের যাত্রীর গায়ে গিয়ে পড়ছে। ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ছে। এর মধ্যে বাসের সংখ্যাও কমিয়ে অর্ধেক করে দেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের অনেকেই বাসের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি তুলেছেন।
বাস ধরতে আসা যুবক সঞ্জীব দেবনাথ বলেন, “বাসে আমরা গাদাগাদি করে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছি। এ ভাবে চলতে থাকলে করোনা সংক্রমণ আরও বাড়বে। সংক্রমণ ঠেকাতে লোকাল ট্রেন চালু করা প্রয়োজন।” কর্মসূত্রে বিধাননগর যেতে হয় বলরাম দেবনাথকে। এত দিন হাবড়া থেকে ট্রেনে যাতায়াত করতেন। ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার কাজে যাননি। এ দিন বাস ধরেন তিনি। তাঁর কথায়, “কত দিন আর বাড়ি বসে থাকব? বাধ্য হয়ে বাসে যেতে হচ্ছে। সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা হলে না হয় একটা কারণ দেখানো যেত।” হাবড়া থেকে গড়িয়া যাতায়াত করেন যদু মন্ত্র। তিনি বলেন, “বাসের জন্য এক-দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তারপরেও বাসে উঠতে পারব কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। বাসের সংখ্যা বাড়ানো উচিত।”
হাবড়া শহরে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত শহরে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ২৪৪ জন। মারা গিয়েছেন ১২ জন। পুরপ্রশাসক নীলিমেশ দাস বলেন, “বাসে ভিড় হচ্ছে প্রচুর। কেউ যাবেন না, সেটা তো আমরা বলতে পারি না। তবে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে যাত্রীদের অনুরোধ করছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy