বেপরোয়া: মাস্ক ছাড়াই বাইরে বেরিয়েছেন মানুষ। বনগাঁ শহরের বিভিন্ন জায়গায় চোখে পড়ল এমনই চিত্র। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ কমছে না উত্তর ২৪ পরগনায়। চলতি ডিসেম্বর মাসে এখনও পর্যন্ত জেলায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৬৩ জনের। প্রায় রোজই একশোর কাছাকাছি মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন। রবিবারই জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১০৪ জন। এর মধ্যেই চোখ রাঙাচ্ছে ওমিক্রন আতঙ্ক। তবে সাধারণ মানুষের এসবের তোয়াক্কা নেই। পথে-ঘাটে, বাজার-হাটে, যানবাহনে দেখা নেই মাস্কের। মানা হচ্ছে না কোনও বিধিই।
কেন রোখা যাচ্ছে না মৃত্যু? স্বাস্থ্য কর্তাদের একাংশের মতে, উপসর্গ থাকলেও করোনা-পরীক্ষা করাচ্ছেন না অনেকে। শারীরিক অবস্থার খুব অবনতি হলে হাসপাতালে যাচ্ছেন। ফলে অনেককেই বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। এখন যাঁরা করোনায় মারা যাচ্ছেন, তাঁদের বেশিরভাগই বয়স্ক। তাঁরা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, রক্তচাপের সমস্যা বা ক্যানসারে ভুগছেন।
স্বাস্থ্যকর্তাদের আশঙ্কা, মানুষের বেপরোয়া মনোভাবের ফলে দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তাই বারবার মানুষকে সতর্ক থাকার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, “ভ্যাকসিন নেওয়া শেষ কথা নয়। মানুষ ভাবছেন টিকা নিয়েছি, ফলে যা কিছু করতে পারি। তাঁরা মাস্ক পরছেন না। শারীরিক দূরত্ব বিধি বজায় রাখছেন না। বিপদটা হল, পঁচিশ বছরের যুবক করোনায় আক্রান্ত হলে সে হয়তো সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সেই যুবকের মাধ্যমে বাড়িতে থাকা বয়স্ক বাবা-মা আক্রান্ত হচ্ছেন। তাছাড়া ওমিক্রনের আশঙ্কাও আছে।”
আমজনতার একটা বড় অংশ বেলাগাম জীবন যাপন করছেন বলে অভিযোগ। বিভিন্ন এলাকায় জলসা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিচিত্রানুষ্ঠান, ফুটবল প্রতিযোগিতা, রাজনৈতিক সমাবেশের আয়োজন হচ্ছে। মানুষ ভিড় করছেন। শারীরিক দূরত্ব-বিধি বজায় থাকছে না। বাসিন্দাদের বেশিরভাগই বাড়ির বাইরে বেরোনোর সময়ে মাস্ক পরছেন না। বাজার এলাকায় শারীরিক দূরত্ববিধি মানা হচ্ছে না। বেশির ভাগ ক্রেতা-বিক্রেতার মাস্ক নেই। অনেকেই থুতনিতে মাস্ক নামিয়ে বেচা-কেনা করছেন। সকাল-বিকেল চায়ের ঠেকে ও পাড়ার মোড়ে যুবকেরা আড্ডা দিচ্ছেন মাস্ক ছাড়াই। ট্রেন, বাস, অটো, টোটো-সহ যানবাহনেও মানুষ মাস্ক ছাড়া যাতায়াত করছেন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে অনেকেই মাস্ক নামিয়ে ধূমপান করছেন।
এর মধ্যে প্রশাসনের তরফে টিকাকরণ চলছে জোরকদমে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, জেলায় ভোটারের সংখ্যা ৭৪ লক্ষ ৪৬ হাজার ৮৬৪ জন। এর মধ্যে ৭০ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষ প্রথম ডোজ় ভ্যাকসিন পেয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ় পেয়েছেন সাড়ে ৪৪ লক্ষ মানুষ।
সচেতন নাগরিকদের দাবি, পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করলেই বিধি মানবে মানুষ। কিন্তু অভিযোগ, পুলিশকে সেই ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না। জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, “মানুষকে সচেতন করতে আমরা লাগাতার কর্মসূচি পালন করছি। তারপরও মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।” ওমিক্রনে এখনও জেলায় কেউ আক্রান্ত হননি বলে জানান তিনি। তবে ওমিক্রন নিয়ে সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের তরফে ওমিক্রনের সম্ভাব্য সংক্রমণ রুখতে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, সেফ হোমগুলি প্রস্তুত করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। হাসপাতাল গুলিতে করোনা রোগীদের জন্য শয্যা বাড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা স্বাস্থ্য জেলায় সিএমওএইচ মুক্তিসাধন মাইতি বলেন, “ওমিক্রন রুখতে আমরা সবরকমভাবে প্রস্তুত। ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে যে সমস্ত যাত্রীরা ফিরছেন, তাঁদের পরীক্ষার পাশাপাশি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনে সেফ হোম গুলি চালু করা হবে। তবে এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।” তিনি জানান, টিকাকরণের পাশপাশি সচেতনতা কর্মসূচিও চলছে জোর কদমে। কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সার্ভে করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy