Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Coronavirus

করোনার জেরে বড় রকম ক্ষতির মুখে পোশাক শিল্প

নোটবন্দি ও জিএসটি-র ধাক্কায় আগে থেকেই নড়বড়ে অবস্থা ছিল ছোট শিল্প কারখানাগুলির। লকডাউনে এসে তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। মালিকেরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। শ্রমিকদের ক্রমশ দেওয়ালে পিঠ ঠেকছে। কেমন আছে জেলার ছোট শিল্প এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা শ্রমিক-মালিকের জীবন। খোঁজ নিল আনন্দবাজারসকলেই কবে লকডাউন উঠবে, কবে খুলবে কারখানা, সে দিকে তাকিয়ে।

বন্ধ: কারখানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে জিনিসপত্র। নিজস্ব চিত্র

বন্ধ: কারখানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে জিনিসপত্র। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২০ ০২:২১
Share: Save:

সপ্তাহের টাকা মালিক দিয়ে দিয়েছেন। তাতে কয়েকটা দিন চলে যাবে। কিন্তু তারপর? এই চিন্তাই এখন সালাম, জিয়ারুল, মফিজুল, আলাউদ্দিনদের মতো বসিরহাটের কয়েক’শো পোশাক শিল্পীর মাথায় চেপে বসেছে।

সকলেই কবে লকডাউন উঠবে, কবে খুলবে কারখানা, সে দিকে তাকিয়ে। কিন্তু তত দিন উপোস করেই কাটাতে হবে! কাপড় সেলাইয়ের কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পোশাক তৈরির সঙ্গে যুক্ত সকলেই এখন সঙ্কটে। ওই সব পোশাক শিল্পীদের অধিকাংশই এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি সাহায্য পাননি।

গত কয়েক বছর ধরে বসিরহাট মহকুমার হাসনাবাদ, শ্বেতপুর, খোলাপোতা, শশিনা, বাদুড়িয়ার আনাচে-কানাচে ধীরে ধীরে গড়ে উঠছিল একের পর এক পোশাক সেলাইয়ের কারখানা। অনেক অল্পবয়সি ছেলে সেখানে রেডিমেড পোশাক তৈরির কাজে যুক্ত। হাসনাবাদের বিভিন্ন প্রান্তে অন্তত এক হাজারের উপর রেডিমেড পোশাক তৈরির এরকম কারখানা আছে। এ ছাড়াও বাদুড়িয়া, বসিরহাট ১ ও ২ ব্লক এবং মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আরও বহু সেলাই কারখানা।

ওই সব কারখানায় কাজ করা লক্ষাধিক অসংগঠিত শ্রমিকদের একটা বড় অংশ আজ অথৈই জলে।

হাসনাবাদের তালপুকুর বাজারে রবিউল ইসলাম মল্লিক, শশিনার সারাফত গাজির রেডিমেড পোশাক তৈরির কারখানা আছে। লকডাউনের আবহে সুনসান ওই কারখানার সামনে দাঁড়িয়ে স্থানীয় আমিরুল ইসলাম জানান, কলকাতার মেটিয়াবুরুজ, বড়বাজার এলাকা থেকেই মূলত কাপড় এনে তা দিয়ে পোশাক তৈরি হয়। রেডিমেড পোশাক-শিল্পে অর্থনৈতিক সঙ্কটের কথা মনে করিয়ে কারখানা মালিক আয়ুব গাজি বলেন, ‘‘চড়া সুদে ঋণ করে কারখানা করেছি। ১৮ জন কাজ করেন। বাচ্চাদের প্যান্ট তৈরি হয়। একজন কারিগর সপ্তাহে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। মহিলারাও সুতো কাটা, বোতাম লাগানো, দড়ি পরানোর কাজ করে সপ্তাহে অন্তত পাঁচ-সাতশো টাকা আয় করেন।’’ তিনি আরও জানান, শ্রমিকদের এক সপ্তাহের টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারখানা বন্ধ। ফলে এরপর আর টাকা মিলবে না বলে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন তাঁর ধারের টাকা কী ভাবে শোধ দেবেন, তাই নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

কারখানা বন্ধ হওয়ায় মেশিনও অযত্নে পড়ে আছে। কারখানার মালিকদের থেকে জানা গিয়েছে, তাঁদের অনেকেরই ঘরে লক্ষাধিক টাকার পোশাক তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। গাড়ি বন্ধ। তাই সে সব মেটিয়াবুরুজে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না। রেডিমেড পোশাক বিদেশেও রফতানি হয়। সেটাও বন্ধ। ফলে কোনও উপায়েই টাকা আসছে না। বহু মানুষের পেটের ভাত জোগাড় হয় এই ব্যবসা থেকে।

কিন্তু লকডাউনে সব বন্ধ হওয়ায় পোশাক শিল্প লাটে ওঠার জোগাড়। লক্ষাধিক অসংগঠিত শ্রমিক রাতারাতি কাজ হারিয়ে বেকার হতে বসেছেন। পোশাক শিল্পী ওহাব গাজি বলেন, ‘‘কারখানা বন্ধ। সঙ্গের টাকাও শেষ। এ বার সংসার কী ভাবে চলবে, তা ভেবে ঘুম উবে যাচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE