করোনা আক্রান্ত তৃণমূল নেতার জন্য প্লাজমা দান করতে হাসপাতালে হাজির হলেন সিপিএম নেতা। রাজ্য রাজনীতির আকচা-আকচির মাঝে এই বিরল ঘটনার সাক্ষী থাকল হাবড়া।সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত হন হাবড়ার পুরপ্রশাসক, তৃণমূলের নীলিমেশ দাস। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। চিকিৎসকেরা প্লাজ়মা থেরাপি শুরু করেছেন।সে কথা জানতে পেরে সোমবার হাসপাতালে পৌঁছে যান পুরসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের ঋজিনন্দন বিশ্বাস। শেষমেশ ডাক্তাররা অবশ্য কিছু কারণে তাঁর প্লাজ়মা নিতে চাননি। কিন্তু ঋজিনন্দনের পদক্ষেপ এখন হাবড়ার মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে। শাসক শিবিরও প্রশংসায় পঞ্চমুখ। নীলিমেশ ঘটনাটি জানতে পেরে রোগশয্যা থেকেই বলেন, ‘‘এই হল হাবড়ার আসল স্পিরিট। এটাই হাবড়ার রাজনৈতিক সংস্কৃতি।’’
সেই ‘সংস্কৃতির’ উল্টো মুখটাও অবশ্য কম দেখেননি হাবড়ার মানুষ। অতীতে সিপিএম-তৃণমূলের একাধিক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটেছে হাবড়ার মাটিতে। দু’পক্ষেরই অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ। সিপিএমের দাবি, ২০১৩ সালের হাবড়া পুরসভা ভোট বা গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল এখানে ব্যাপক সন্ত্রাস চালিয়েছিল। বিরোধীদের মারধর করা হয়, প্রার্থীদের হুমকি দেওয়া হয়। পঞ্চায়েত ভোটে গণনার সময়ে সিপিএম প্রার্থীকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। সিটুর অফিসে হামলা, সিপিএমের কার্যালয় দখল করে নেওয়ার মতো অভিযোগও তুলেছিল বাম শিবির। স্থানীয় কলেজগুলিতে দু’দলের ছাত্র সংগঠনের সংঘর্ষে পঠনপাঠন ব্যাহত হয়েছে বহুবার। রক্তাক্ত হয়েছে কলেজ চত্বর। সিপিএমের হামলার নানা অভিযোগ তৃণমূলও তুলেছে নানা সময়ে। ঘাসফুল শিবিরের বক্তব্য, ক্ষমতায় থাকাকালীন সিপিএম পুরভোট, বিধানসভা ভোটে সন্ত্রাস করেছে। কলেজেও মারধর করেছে বিরোধীদের।
ঋজিনন্দনের ভূমিকার তারিফ করলেও বিস্মিতও কম নয় স্থানীয় রাজনৈতিক মহল। ঋজিনন্দন নিজে বলেন, ‘‘বিমান বসুর বক্তব্যে একবার শুনেছিলাম, আগে আমরা মানুষ। তারপরে কমিউনিস্ট। আমরা নিশ্চয়ই তৃণমূলের সমালোচনা করব। মতপার্থক্য থাকবে। কিন্তু মানুষের জীবনের মূল্য আগে। বিরোধী দলের কারও বিপদে এগিয়ে যাওয়া যাবে না, এমন অন্ধত্ব আমাদের দলে নেই।’’হাবড়া থেকে আরও কয়েকজন প্লাজ়মা দিতে গিয়েছিলেন। ঋজিনন্দনের প্লাজমা কেন নিলেন না চিকিৎসকেরা?