Advertisement
E-Paper

তরুণীকে খুন করে ধর্ষণ, পরে অপরাধ স্বীকার

বছর খানেক আগে নিজের স্ত্রীকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাকে। সম্প্রতি জামিন পেয়ে গ্রামে ফিরেছিল বছর তেইশের আরিজুল মিদ্দে। কয়েক দিন আগে পুলিশের হাতে ফের ধরা পড়ল সে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৬ ০১:২০
আরিজুল মিদ্দে।

আরিজুল মিদ্দে।

বছর খানেক আগে নিজের স্ত্রীকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাকে। সম্প্রতি জামিন পেয়ে গ্রামে ফিরেছিল বছর তেইশের আরিজুল মিদ্দে। কয়েক দিন আগে পুলিশের হাতে ফের ধরা পড়ল সে। পুলিশের অভিযোগ, এ বার মাসতুতো বোনকে খুন করেছে বসিরহাটের আরিজুল। সেখানেই শেষ নয়, মৃতদেহ পরীক্ষা করে তদন্তকারীদের দাবি, গলায় ওড়নার ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরোধ করে মারার পরে মাসতুতো বোনকে চালিয়েছে।

মৃতদেহের উপরে ধর্ষণ কাণ্ডকে মনস্তত্ত্বের পরিভাষায় নেক্রোফেলিয়া বলা হয়। আরিজুল এ রকম কোনও মনস্তাত্ত্বিক রোগের শিকার কি না তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। মনোবিদ জয়রঞ্জন রাম জানালেন, নেক্রোফেলিয়া এ দেশে সচরাচর দেখা যায় না। চূড়ান্ত মানসিক ভারসাম্যহীনতা এবং বিকার থেকেই এই প্রবণতার জন্ম হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ঘনিষ্ঠ কারও মৃতদেহের সঙ্গেই বিকারগ্রস্ত মানুষটি এই কাণ্ড করে থাকে।

গত ১১ জুন থেকে বসিরহাটের শাঁকচুড়ো-বাগুন্ডি পঞ্চায়েত এলাকার এক তরুণী নিখোঁজ ছিল। ১৬ জুন বাড়ির কাছের পুকুর থেকে তাঁর অর্ধনগ্ন দেহ উদ্ধার হয়। এই ঘটনায় প্রথমে ওই এলাকার রিয়াজুল গাজি নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু তদন্ত এগোলে পুলিশ জানতে পারে রিয়াজুল দোষী নয়। এর পর নির্দিষ্ট তথ্যে পেয়ে আরিজুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, রিয়াজুলকে ধরার পরে এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি বসিরহাট থানার আইসিকে ফোন করে জানান, খুন করেছে আরিজুল। এর পরেই তদন্তকারী অফিসারদের সন্দেহের তির রিয়াজুলের থেকে আরিজুলের দিকে ঘুরতে শুরু করে। এর পর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন দেখে শনিবার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা ইটিন্ডা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রবিবার আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

তদন্তকারী পুলিশ অফিসারেরা জানান, প্রথমে গ্রেফতার হওয়া রিয়াজুল গাজির সঙ্গে খুন হওয়া তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সেই সম্পর্ক মানতে পারেনি আরিজুল। গত ১১ জুন মোবাইল হাতে ছাগল চরাতে গিয়েছিল ওই তরুণী। তখনই আরিজুল তাঁর পিছু নেয়। পুলিশের দাবি, পাট খেতের মধ্যেই সে নিজের মাসতুতো বোনকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। বাধা দিলে ধস্তাধস্তি হয়। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওড়না দিয়েই তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করে আরিজুল। পুলিশ জানিয়েছে, জেরার সময়ে আরিজুল বলে, খুনের পরে মৃতদেহ ধর্ষণ করে সে। তার পর বাড়ি ফিরে এসে স্নান, খাওয়া করে শুয়ে পড়ে। সন্ধ্যা নামার পরেও ওই তরুণী বাড়ি না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। তখন আরিজুল গ্রামবাসীদের বিভ্রান্ত করতে জানায়, ওই তরুণীকে সে আমবাগানের দিকে যেতে দেখেছিল। পুলিশের দাবি, জেরায় মুখে নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে আরিজুল। পুলিশ তাকে গ্রামে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করেছে। পাটখেত থেকে একটি জামার বোতাম উদ্ধার করেছে। আরিজুল জানিয়েছে, ধস্তাধস্তির সময়ে ওই বোতামটি তার জামা থেকে খুলে গিয়েছিল। বোতাম-ছেঁড়া জামাটিও উদ্ধার হয়েছে।

আরিজুলের এই নৃশংসতা অবশ্য এ বারই প্রথম নয়। পুলিশ জানিয়েছে, বছর খানেক আগে তার স্ত্রীকে বাড়ির সামনের মাঠে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেই ঘটনাতেও পুলিশ প্রথমে আরিজুলকে সন্দেহ করেনি। আদালতে পুলিশ দাবি করেছে, অন্য ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এই অভিযোগে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে খুন করে সে। সেই ঘটনায় আরিজুল এখন জামিনে রয়েছে।

বসিরহাট থানার আইসি দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই ঘটনা আমার দেখা অন্যতম নৃশংস ঘটনা। ওই তরুণীকে খুন করে ধর্ষণ করা হয়েছে। প্রকৃত দোষীকে গ্রেফতার করা পুলিশের বড় সাফল্য।’’

Rape murder Crime police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy