পরিদর্শন: জমির কী হাল ঘুরে দেখছেন চাষি। নিজস্ব চিত্র
বৃষ্টি কমেছে। তবে মাঠে জমা জল নামেনি। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আনাজ ফসল ও ধানের বীজতলা। পাশাপাশি, বিভিন্ন ব্যারাজ থেকে ছাড়া জল নীচের দিকে ইছামতী নদী হয়ে নামার ফলে প্লাবনের আশঙ্কাও করছেন বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর ও বাদুড়িয়ার মানুষ। মহকুমার কৃষি আধিকারিক প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেন, “মাঠে জমা জল বার করে দেওয়া না গেলে ক্ষতি হবে আনাজ ফসল ও ধানের চারার।”
হিঙ্গলগঞ্জের সাহেবখালির বাসিন্দা টিমে মণ্ডল, হরসিত মণ্ডলরা জানিয়েছেন, আমন ধানের বীজতলার উপর এক হাঁটু জল দাঁড়িয়ে যাওয়ার তা পচে যাচ্ছে। অতিবৃষ্টির ফলে দ্রুত দাম বাড়ছে আনাজ ও ফসলের। এক সপ্তাহ দ্বিগুণ হয়েছে পটল, ঝিঙে, উচ্ছে, সসা, পেঁপে, ঢেঁড়সের দাম— ২৫ টাকার শশা ৮০ টাকায়, ২০ টাকার ঢেঁড়স ৪০ টাকায়, ৩০ টাকার লঙ্কা ৮০ টাকায়, ১৫ টাকার ঝিঙে ৪০ টাকায়, ২০ টাকার বরবটি ৬০ টাকায়, ১২ টাকার কচুরমুখির ৪০ টাকায়, ১৫ টাকার পটল ৪০ টাকায়, ১৫ টাকার পেঁয়াজ ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাদুড়িয়া পুরসভার ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড পান্তাপাড়া, গোয়ালাপাড়ার বাসিন্দারা লিখিত ভাবে পুরপ্রধানকে জানিয়েছেন, নিকাশির অব্যবস্থার কারণে তাঁদের এলাকার কয়েকশো বিঘা জমির ফসল এখন চরম ক্ষতি মুখে। নুর হোসেন মণ্ডল, আজগর আলি মণ্ডল, রেজ্জাক মণ্ডলদের কথায়, “ইছামতী নদী থাকা সত্ত্বেও বেহাল নিকাশির কারণে আমাদের কয়েকশো বিঘা জমির ধান এবং আনাজ, সবই এখন জলের তলায়। ফলে কয়েক লক্ষ টাকার ফসলের নষ্ট হয়েছে।” স্থানীয় সূত্রে খবর, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সুন্দরবন এলাকার চাষের জমি ২ ফুট জলের নীচে। নষ্ট হতে বসেছে সেখানকার আমন ও আউস ধানের বীজতলা। একই অবস্থা স্বরূপনগর ও বাদুড়িয়ায়। মাটি নরম হওয়ার কারণে ভেঙে পড়ছে পেঁপে ও কলা গাছ। মাঠের জল নামার নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক না থাকায় উচ্ছে, শশা, পটল, বেগুন, ঝিঙে, লঙ্কা, লাউ, চিচিঙ্গার মতো প্রচুর আনাজ ফসল জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। মহকুমা কৃষি দফতরের দেওয়া প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, অতিরিক্ত জলের ফলে আমন ও আউস ধারের বীজতলার বড় রকম ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বসিরহাট মহকুমায় আমন ধানের বীজতলা লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল ৮০০০ হেক্টর জমিতে। সেখানে লাগানো হয়েছে ৭২১২ হেক্টরে। আর তার মধ্যে ৬২৮৮ হেক্টর জমির বীজতলা এখন এক থেকে দেড় ফুট জলের তলায়। আউস ধান লাগানো হয় ৩৩৫০ হেক্টর জমিতে। এখন তার মধ্যে ১৯৬৫ হেক্টর জমি জলের তলায়। স্বরূপনগর ও বাদুড়িয়া, দু’টি ব্লকের ক্ষতির হিসেবই রয়েছে এখানে। অতিবৃষ্টির ফলে আমন ধানের বীজতলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকে। সেখানে ১২৯০ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা পুরোটাই পূরণ করা সম্ভব হয়েছিল। এখন ওই পুরো জমির বীজতলাই জলমগ্ন।
ফসলের ক্ষতি তো হচ্ছেই, এখন প্লাবন নিয়েও চিন্তিত স্থানীয়েরা। ব্যারাজের ছাড়া জল ইছামতি দিয়ে নামলে ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy