Advertisement
E-Paper

ছেলের নামে টাকা, ‘ভুল স্বীকার’ বাবার

পঞ্চায়েতের সুপারভাইজারের মায়ের নামে বাড়ি ভাঙার ক্ষতিপূরণের টাকা ঢুকেছে গাইঘাটার পঞ্চায়েতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২০ ০৩:৫৯
অসম-বণ্টন: পঞ্চায়েতের সুপারভাইজার আনন্দ ঘোষের বাড়ি। পেয়েছেন ক্ষতিপূরণের টাকা।

অসম-বণ্টন: পঞ্চায়েতের সুপারভাইজার আনন্দ ঘোষের বাড়ি। পেয়েছেন ক্ষতিপূরণের টাকা।

এক দিকে ক্ষতিপূরণ পাননি প্রকৃতই যাঁদের বাড়ি ভেঙেছে। অন্য দিকে, টাকা পেয়েছেন এমন অনেকে, যাঁরা প্রভাবশালী তো বটেই— বাড়িঘরের ক্ষতিও হয়নি আমপানে।

উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় পর পর এমন বহু অভিযোগ সামনে আসছে। পঞ্চায়েতের সুপারভাইজারের মায়ের নামে বাড়ি ভাঙার ক্ষতিপূরণের টাকা ঢুকেছে গাইঘাটার পঞ্চায়েতে। যদিও তাঁর বাড়ির তেমন কোনও ক্ষতিই হয়নি আমপানে। সুপারভাইজারের দাবি, আমপানে যতটুকু ক্ষতি হয়েছিল, তা পাটের গুদামের টিনের চাল, আর জলের ট্যাঙ্কের।

বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় সোমবার গ্রামের বাসিন্দারা অনেকে বিক্ষোভ দেখান ওই বাড়িতে। সুপারভাইজারের মাকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। টাকা ফিরিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন সুপারভাইজার। তাঁর দাবি, ‘‘ভুল করে তাঁর নাম উঠেছিল ক্ষতিপূরণের তালিকায়।’’

উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার ঝাউডাঙা পঞ্চায়েতের সুপারভাইজার আনন্দ ঘোষের বাড়ি বর্ণবেড়িয়া ঘোষপাড়ায়। একতলা পাকা বাড়ি। উপরে জলের ট্যাঙ্ক। আনন্দর দাবি, আমপানে তাঁর পাটের গুদামের টিন উড়ে যায়। ক্ষতি হয় জলের ট্যাঙ্কের। কিন্তু তা বলে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির তালিকায় নাম উঠবে? সুপারভাইজারের যুক্তি, ‘‘তালিকা তৈরির সময়ে এলাকায় ছিলাম না। শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলাম। পঞ্চায়েত সদস্য নাম তুলে দিয়ে থাকবেন তালিকায়।’’ ক্ষতিপূরণের তালিকায় তো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরও লাগে। মায়ের কাছ থেকে অ্যাকাউন্ট নম্বর নিয়ে গিয়েছিল পঞ্চায়েতের লোকজন, দাবি আনন্দর।

গ্রামবাসীদের দাবি, নিজের তিন নিকট আত্মীয়, এক পরিচিত যুবকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও সরকারি ক্ষতিপূরণের ২০ টাকা করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন আনন্দ। সে কথা অবশ্য মানেননি তিনি।

ঝাউডাঙা পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের সমীর বিশ্বাস বলেন, ‘‘অভিযুক্ত সুপারভাইজারকে শোকজ করা হয়েছে। তাঁকে কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর মায়ের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

এ দিন ওই এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য, তৃণমূলের সদানন্দ বিশ্বাসের বাড়িতেও গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন কিছু গ্রামবাসী। ঘেরাও করে রাখা হয় তাঁকে। অভিযোগ, তাঁর ছেলে সৌরভের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণের টাকা ঢুকেছে। যদিও বাড়িঘরের কোনও ক্ষতিই হয়নি তাঁর। চাপের মুখে সদানন্দকে সকলের সামনে ভুল স্বীকার করতে হয়েছে বলে দাবি গ্রামবাসীদের একাংশের।

সদানন্দর যুক্তি, ‘‘নিজের অজান্তে তালিকা তৈরি করতে কিছু ভুলভ্রান্তি হয়ে গিয়েছে। আমার টিনের বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আমি ভুল স্বীকার করছি। ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েছেও যাঁরা টাকা পেয়েছেন, সেই টাকা ফিরিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব পালন করব। আর আমার ছেলে নামে আসা টাকাও ফিরিয়ে দেব।’’ গ্রামবাসীদের দাবি, ঝাউডাঙা পঞ্চায়েতের কয়েকজন সদস্য বাদে বেশিরভাগই তাঁদের আত্মীয়-স্বজন, পরিচিতদের টাকা পাইয়ে দিয়েছেন। এ দিনই বিজেপির তরফে ঝাউডাঙা পঞ্চায়েত অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা জড়ো হয়েছিলেন। ভিতর থেকে পঞ্চায়েত অফিসে কর্মীরা তালা দিয়ে দেন। প্রধান বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সদস্যদের বলা হয়েছিল প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা জমা দিতে। একদিনের মধ্যে তালিকা বিডিও অফিসে জমা দিতে হয়েছিল। ফলে খতিয়ে দেখার সময় পাওয়া যায়নি। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তেরা যাতে সকলেই টাকা পান, ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’

Cyclone Amphan Gaighata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy