Advertisement
১৮ মে ২০২৪

রাত জেগে বাঁধ পাহারা

আয়লায় ভেসে গিয়েছিল সর্বস্ব। সেই স্মৃতি এখনও টাটকা গ্রামবাসীদের মনে। ফণীর আগমন বার্তায় তাই আতঙ্কে ছিলেন কুলতলি ব্লকের নদীতীরবর্তী গ্রামের মানুষ।

কাঁধে-কাঁধ: গোসাবার সজনেখালিতে বাঁধ সারাচ্ছেন গ্রামবাসীরাই। ছবি: সামসুল হুদা

কাঁধে-কাঁধ: গোসাবার সজনেখালিতে বাঁধ সারাচ্ছেন গ্রামবাসীরাই। ছবি: সামসুল হুদা

সমীরণ দাস
কুলতলি শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৯ ০৪:২৭
Share: Save:

আয়লায় ভেসে গিয়েছিল সর্বস্ব। সেই স্মৃতি এখনও টাটকা গ্রামবাসীদের মনে। ফণীর আগমন বার্তায় তাই আতঙ্কে ছিলেন কুলতলি ব্লকের নদীতীরবর্তী গ্রামের মানুষ। নদীর ধার থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল তাঁদের। তবে রাত জেগে বাঁধ পাহারায় ছিলেন শ’য়ে শ’য়ে মানুষ। শেষ পর্যন্ত বড় ক্ষতি না হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন সকলেই।

গ্রামবাসীরা জানান, মূল আতঙ্ক ছিল নদীবাঁধ নিয়েই। আয়লার সময়ে বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে ভেসে গিয়েছিল গ্রামের পর গ্রাম। এ বার তাই বাঁধ নিয়ে বাড়তি সতর্ক ছিলেন তাঁরা। বেশ কিছু জায়গায় রাত জেগে পাহারা দেন গ্রামবাসীরা। গুড়গুড়িয়া ভুবনেশ্বরী গ্রাম পঞ্চায়েতের হূকাহারানিয়া বাজারের কাছে একটি নদীবাঁধে পাহারায় ছিলেন প্রায় শ’খানেক গ্রামবাসী। পঞ্চায়েত প্রধান ধনঞ্জয় ভুঁইয়া জানান, এই বাঁধ দিয়ে আয়লার সময়ে জল ঢুকেছিল। আবার যাতে সেই বিপর্যয় না হয়, তাই গ্রামবাসীরা সারা রাত ধরে মাটির বস্তা, ত্রিপল নিয়ে পাহারা দিয়েছেন। তবে ভাগ্য ভাল, বাঁধ ভাঙার পরিস্থিতি হয়নি।

মৈপীঠ পঞ্চায়েতে বেশ কয়েকটি এলাকায় নদীবাঁধ নিয়ে সতর্ক ছিলেন স্থানীয়রা। তবে বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি কোথাও। মৈপীঠ পঞ্চায়েতের প্রধান নমিতা জানা বলেন, ‘‘কোনও কোনও জায়গায় বাঁধের ছোটখাটো ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় মানুষজন কিছু কিছু সারিয়ে নিয়েছেন। সেচ দফতর থেকেও কিছু মেরামতের কাজ করে দেওয়া হয়েছে।’’

স্থানীয় বাসিন্দা ও কুলতলি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য রাজু সিট বলেন, ‘‘আয়লায় এই এলাকায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এ বার তাই খুবই আশঙ্কায় ছিল গোটা এলাকা। তবে বড় অঘটন ঘটেনি।’’ আর এক বাসিন্দা পিন্টু মণ্ডল বলেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঝড় নিয়ে অনেকে অনেক রকম ঠাট্টা-তামাশা করছে। কিন্তু আমাদের কাছে এটা খুবই ভয়ঙ্কর। যতটা বলা হয়েছিল, ততটা হলে কী হত, ভেবেই শিউরে উঠছি। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।’’

আবহাওয়া দফতরের যা পূর্বাভাষ ছিল, সেই তুলনায় ফণীর দাপট ছিল অনেকটাই কম। তবু নদী তীরবর্তী গ্রামগুলিতে বেশ কিছু কাঁচা বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। কুলতলির মৈপীঠ, গুড়গুড়িয়া-ভুবনেশ্বরী পঞ্চায়েত এলাকায় একাধিক মাটির বাড়ি ভেঙেছে। অনেক জায়গায় উড়ে গিয়েছে অ্যাসবেস্টসের চাল। ভুবনেশ্বরীর চারের ঘেড়িতে বাড়ির চাল ভেঙে একজন আহতও হয়েছেন। ধান চাষের ক্ষতি হয়েছে বেশ কিছু জায়গায়। চারের ঘেড়ির এক চাষি জানালেন, ঝড়ের সতর্কবার্তা শুনে ক্ষেত থেকে ধান কেটে এনে বাড়িতে রেখেছিলেন। কিন্তু প্রবল বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছে সেই ধানও।

পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, নদীতীরে বসবাসকারী বহু মানুষকে শুক্রবার নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। গুড়গুড়িয়া ভুবনেশ্বরী পঞ্চায়েত এলাকায় সরকারের তৈরি দু’টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এই দু’টি কেন্দ্রের পাশাপাশি আরও একটি স্কুলে ত্রাণ শিবিরের ব্যবস্থা করা হয়। প্রায় ১০০০ জন গ্রামবাসীকে তিনটি শিবিরে ভাগ করে রাখা হয়েছিল বলে পঞ্চায়েত সূত্রের খবর। মৈপীঠ পঞ্চায়েত এলাকায় ফ্লাড সেন্টার, স্কুল ও স্থানীয় ক্লাব ভবন মিলিয়ে ছ’টি শিবির খোলা হয়। আশ্রয় পান হাজার দু’য়েক মানুষ। গবাদি পশুদেরও আনা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Fani Dam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE