Advertisement
E-Paper

কাছা পরে পরীক্ষা, লেটার স্বপ্নজিতের

সেই ছেলে এ বার মাধ্যমিকে প্রায় ৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাস করেছে। সব ক’টি বিষয়েই লেটার।

নির্মল বসু 

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৮ ০১:৪৩
মায়ের ছবি হাতে ছেলে। নিজস্ব চিত্র

মায়ের ছবি হাতে ছেলে। নিজস্ব চিত্র

কাছা জড়িয়ে পরীক্ষার হলে যেতে হয়েছিল স্বপ্নজিৎকে— মায়ের শবদাহ সেরে, রাতভর কান্নাকাটির পরেও।

সেই ছেলে এ বার মাধ্যমিকে প্রায় ৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাস করেছে। সব ক’টি বিষয়েই লেটার।

বসিরহাট টাউন হাইস্কুলের ছাত্র স্বপ্নজিৎ এখন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চায়। কারণ, সেটা চাইতেন তার মা।

অন্য সব বিষয়ে যে ছেলের নম্বর ন’এর ঘরে, সেখানে ইংরেজিতে সে পেয়েছে ৮২। ইংরেজি পরীক্ষার আগের রাতেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন মা শেফালি। মারা যান রাতেই। বসিরহাট শ্মশানে মায়ের শেষকৃত্য সেরে রাতভর চোখের জল থামেনি স্বপ্নজিতের। কিন্তু সকালে উঠে চোখ মুছে পরীক্ষার হলে যায়। তখনই ঠিক করে, যা ঘটে ঘটুক, মায়ের ইচ্ছে ছিল ভাল ফল করবে সে। সেই ইচ্ছের মর্যাদা রাখতেই হবে তাকে। তার মনের জোর দেখে সে দিন শিক্ষকেরাও অবাক হয়েছিলেন।

বসিরহাট পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৩ নম্বর কলোনিতে থাকেন মাধবচন্দ্র দাস। হাসনাবাদের রামেশ্বরপুর নাসিরউদ্দিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তাঁর দুই সন্তান, স্বপ্নজিৎ-শুভজিৎ। ছোট থেকে পড়াশোনায় বেশ ভাল স্বপ্নজিৎ। বাংলা পরীক্ষার দিন সন্ধ্যায় মা ছেলের কাছে জানতে চান, পরীক্ষা কেমন হয়েছে, কত নম্বর পেতে পারে। স্বপ্নজিৎ বলেছিল, ৯৬-৯৭ তো হবেই। ইংরেজিটাও যেন ভাল হয়। চিকিৎসক হতে হবে কিন্তু, সে দিন ছেলের মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন মা। এটাই ছিল মা-ছেলের শেষ কথা। পড়তে পড়তে ক্লান্ত ছেলেটার চোখ যেন ঘুমে জুড়িয়ে না আসে, সে জন্য রান্নাঘরে চা করতে গিয়েছিলেন বছর পঁয়ত্রিশের শেফালি। আঁচল ধরে মায়ের পিছু নেয় ছোট ছেলে শুভজিৎ। রান্না ঘরের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন শেফালি। শুভজিৎ রান্না ঘর থেকে ছুটে এসে বলে, মা পড়ে গিয়েছে বাবা। গাড়ি ডেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাঁচানো যায়নি শেফালিকে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। বুধবার দুপুরে স্বপ্নজিৎদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, মায়ের ছবির সামনে চুপ করে দাঁড়িয়ে স্বপ্নজিৎ। সে বলে, ‘‘মা চাইতেন ডাক্তার হই। সেই চেষ্টাই করব।’’

বসিরহাট টাউন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক যোগেশচন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘‘ওর মায়ের অকাল মৃত্যুটা দুঃখজনক। এমনটা না হলে হয় তো আরও ভাল ফল করত। তবে যে মনের জোর দেখিয়েছে ও, সেটা সকলের মনে থাকবে।’’

Madhyamik examination মাধ্যমিক
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy