Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Panchayat Election 2023

ভোটই কি সমাধান, ধন্দে গ্রামের মানুষ

আমপানের পরে ক্ষতিপূরণ দুর্নীতি-সহ বহু বিষয়কে সামনে রেখে এ বার পঞ্চায়েত ভোটে ব্যালটে ছাপ দিতে চলেছেন গ্রামীণ বাংলার মানুষ। দাবি-দাওয়া কতটা পূরণ হল তাঁদের, শেষ মুহূর্তে ফিরে দেখল আনন্দবাজার।

An image of election

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৩ ০৭:২৭
Share: Save:

এক সময়ে একশো দিনের কাজ এবং গ্রামে টুকটাক কাজ করেই সংসার চালিয়ে ছেলের পড়াশোনা সামাল দিতেন সাগরের ধবলাট শিবপুর এলাকার বাসিন্দা, বছর বেয়াল্লিশের বকুলি রায়। বছর দশেক আগে স্বামীর মৃত্যুর পর এ ভাবেই চলছিল। একশো দিনের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বদলে গিয়েছে বকুলির জীবন। টাকার অভাবে বন্ধ হয়েছে ছেলের পড়াশোনা। প্রথম দিকে কোনও রকমে টেনেটুনে সংসার চলত। আর না পেরে গ্রামের অন্যদের মতোই ভিন্‌ রাজ্যে কাজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বকুলি। ছেলেকে নিয়েই বেঙ্গালুরু পাড়ি দিয়েছেন তিনি। সেখানে ডিম কুড়োনোর কাজ করেন মা-ছেলে।

দীর্ঘ দিন একশো দিনের কাজ বন্ধ থাকায় বকুলির মতো জীবন বদলে গিয়েছে দুই ২৪ পরগনার গ্রামীণ এলাকার অনেকেরই। প্রভাব পড়েছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে। স্থানীয় সূত্রের খবর, গ্রামীণ এলাকায় এক শ্রেণির মানুষ অনেকটাই নির্ভরশীল ছিলেন এই প্রকল্পের উপরে। এই কাজের সঙ্গে গ্রামে আরও কিছু কাজকর্ম করে সংসার চালিয়ে নিতেন। প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা অথৈ জলে পড়েছেন। স্থানীয় মানুষ জানান, একশো দিনের কাজ বন্ধ থাকায় বাইরে কাজে যাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে।

ভোটের বাজারে একশো দিনের কাজ নিয়ে যুক্তি-পাল্টা যুক্তি দিচ্ছে শাসক-বিরোধী দু’পক্ষ। তৃণমূল সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করছে। বিজেপি পাল্টা দায়ী করছে তৃণমূলের দুর্নীতিকে। এই টানাপোড়েনের মাঝে পড়ে সাধারণ মানুষ চাইছেন, রাজনৈতিক রেষারেষি দূরে সরিয়ে গরিবের স্বার্থে আবার শুরু হোক প্রকল্প।

কেন গ্রামে গ্রামে এত মানুষ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন এই প্রকল্পে?

স্থানীয় সূত্রের খবর, এর পিছনে রয়েছে গ্রামীণ কর্মসংস্থানের বেহাল চিত্র। দুই ২৪ পরগনাতেই কৃষিকাজের সুযোগ কমেছে। পর পর দুর্যোগে অনেক চাষের জমি নষ্ট হয়েছে। তার উপরে চাষের জমিতে কাজ করে ভাল মজুরিও মেলে না। এলাকায় তেমন বড় শিল্প না থাকায় অন্যান্য ক্ষেত্রে দিনমজুরির সুযোগও নেই। লকডাউনের পর থেকে গ্রামীণ এলাকার বহু ছোট ছোট শিল্প ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে আসছে। গ্রামের বহু মানুষ জানালেন, নোটবন্দির সময়েও বড়সড় ধাক্কা লেগেছিল কাজকর্মে।

এ সবের জেরে গ্রাম উজার করে ভিন্ রাজ্যের পথ ধরেছেন বহু মানুষ। যাঁরা নানা কারণে বাইরে যেতেপারেন না, তাঁরাই একশো দিনের কাজ করে কোনও রকমে চালাচ্ছিলেন। ক’দিন আগে বাহানাগায় রেলদুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ক্যানিং-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার অনেকে। সকলেই ভিন্‌ রাজ্যে কাজ করতেন। কেউ যাচ্ছিলেন, কেউ আসছিলেনসেখান থেকে।

বাইরে কাজে যাওয়া অনেকেরই ভোট দেওয়ার আগ্রহই নেই এ বার। বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে বকুলি বলেন, “ভোটের সময়ে এলাকায় ফেরার জন্য ফোন এসেছে। কিন্তু যেতে-আসতে তো অনেক খরচ। তার উপরে এখানেকাজ বন্ধ হলে রোজের টাকাটাও পাব না। কী হবে গিয়ে!” কেরালে শ্রমিকের কাজে যাওয়া দেগঙ্গার বাসিন্দা নাজমূল হক বলেন, “ভোট দিতে গিয়ে কী হবে? এতে নিজেরই আর্থিক ক্ষতি।” বাইরে কাজে যাওয়া বাগদার এক যুবক আবার বলেন, “কে আর পরিবার ছেড়ে বাইরে থাকতে চায়। পেটের টানে যেতে হয়। ভোটদিতে ফিরেছি। দিয়ে ফিরে যাব।একশো দিনের কাজটা চালু হলে কিছুটা সুবিধা হত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE