E-Paper

রায়ে প্রায় স্তব্ধ বাগদার ‘মাস্টারপাড়া’

গ্রামে চোখে পড়ল ইতিউতি জটলা। গ্রামবাসীরা জানান, কেউ জমি বিক্রি করে চাকরি পেতে টাকা দিয়েছিলেন চন্দনকে।

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৫ ১০:১৩
বাগদার মামা ভাগিনা গ্রামে তালা দেওয়া চন্দন মণ্ডলের বাড়ি।

বাগদার মামা ভাগিনা গ্রামে তালা দেওয়া চন্দন মণ্ডলের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র।

একের পর এক বাড়ি কার্যত স্তব্ধ!

কোনও বাড়িতে সকাল থেকে রান্নাই চড়ল না। কোনও বাড়িতে ডাকাডাকিতেও কারও সাড়া মিলল না। কোনও বাড়ির দরজা-জানলা বন্ধ হয়ে গেল বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের রায় শোনার পরেই। বাগদার ‘মাস্টারপাড়া’র এ যেন এক অন্য ছবি!

বাগদার মামাভাগিনা শক্তিগড় গ্রামের প্রৌঢ় চন্দন মণ্ডলের ‘হাতযশে’ স্কুলে চাকরি পেয়েছিলেন এখানকার অন্তত ৩৫ জন, এমনটাই দাবি গ্রামবাসীর। তাঁরা নিজেদের আলোচনায় বলতেন, চন্দন যাঁর কপালে টিকা পরিয়েছেন, তিনিই চাকরি পেয়েছেন। আর সে কারণেই মুখে মুখে গ্রামের নাম হয়ে গিয়েছিল ‘মাস্টারপাড়া’। এ দিন সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালের এসএসসি-তে নিয়োগের পুরো প্যানেল বাতিল করায় গ্রামের পরিবেশটাই পাল্টে গেল।

গ্রামে চোখে পড়ল ইতিউতি জটলা। গ্রামবাসীরা জানান, কেউ জমি বিক্রি করে চাকরি পেতে টাকা দিয়েছিলেন চন্দনকে। কেউ ঋণ করে টাকা জোগাড় করে চন্দনকে দিয়ে স্কুলের চাকরি পেয়েছিলেন। চাকরি পেয়ে কেউ বিয়ে করেছেন, কেউ বাড়ি করেছেন। বাড়ি তৈরির ঋণের টাকা এখনও পুরো শোধ হয়নি। তার মধ্যেই বৃহস্পতিবার থেকে তাঁদের জীবন অনিশ্চয়তায় পড়ল।

গ্রামের এক যুবক দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি স্কুলে শিক্ষকতা করছিলেন। তিনিও চাকরি হারিয়েছেন। তাঁর মায়ের কথায়, ‘‘ছেলে বেকার ঘুরে বেড়াত। পড়াশোনায় ভাল ছিল। তাই স্বামী ধারদেনা করে টাকা দিয়ে ছিল। এখন কী ভাবে সংসার চলবে জানি না।’’ শম্পা বিশ্বাসের স্বামী মিঠুন বিশ্বাস নামখানা স্কুলে শিক্ষাকর্মীর কাজ করছিলেন। তাঁরও চাকরি গিয়েছে। শম্পা বলেন, ‘‘আমাদের দশ বছরের একটি মেয়ে আছে। এর পরে কী হবে জানি না। বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’

নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত অভিযোগে চন্দনকে সিবিআই গ্রেফতার করে। এখনও তিনি হাতজবাস করছেন। এ দিন তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, গ্রিলের গেটে তালা ঝুলছে। তাঁর কথা প্রথম সকলকে একটি ভিডিয়ো-বার্তায় জানিয়েছিলেন বাগদার প্রাক্তন বিধায়ক তথা প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন বিশ্বাস। তবে, সেই ভিডিয়ো-বার্তায় তিনি চন্দনের নাম নেননি। বলেছিলেন, ‘সৎ রঞ্জন’ নামে এক ব্যক্তির কথা। যিনি লোকের থেকে টাকা নিয়ে সকলকেই চাকরি দেন। পরে জানা যায়, এই ‘সৎ রঞ্জন’ আসলে চন্দন।

এ বার কি তাঁরা চন্দনের কাছে টাকা ফেরত চাইবেন? চাকরি হারানো এক যুবকের বাবার কথায়, ‘‘কার কাছে আর টাকা চাইব। চন্দন তো এলাকাতেই থাকেন না।’’

গ্রামবাসীদের মনে পড়ছে কয়েক বছর আগের ছবি। যখন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত স্কুলে চাকরি পাওয়ার জন্য লোকজনের দীর্ঘ লাইন পড়ত চন্দনের বাড়িতে। তাঁদের হাতে টাকার ব্যাগ থাকত। সেই টাকা তাঁরা চন্দন বা তাঁর এজেন্টদের হাতে তুলে দিতেন। ওই গ্রামের বাসিন্দা তথা বাগদার একটি সমবায় সমিতির বিদায়ী সভাপতি হারান বিশ্বাস বলেন, ‘‘অবশেষে সত্যের জয় হল। আদালতের উপর মানুষের ভরসা বাড়ল।’’ আর এক মহিলা বলেন, ‘‘জানি, সকলে টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু এখন খারাপ লাগছে, চাকরিহারাদের পরিবারগুলির কথা ভেবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SSC Bagda

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy