Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Farm Bill 2020

কৃষি বিল এ রাজ্যের চাষির কাছে আশীর্বাদ

নয়া কৃষি আইনে কি আদৌ লাভ হবে কৃষকের? নাকি ফায়দা লুটবে কর্পোরেট? এ নিয়ে ক্রমশ তপ্ত হচ্ছে রাজনীতি। কলম ধরলেন রাজনীতির আঙিনার ব্যক্তিত্বরাই।ভারতে এই প্রথম কোনও সরকার চাষির সামগ্রিক সমস্যার কথা বিবেচনা করেছে। সেই নিরিখেই এই কৃষি বিল দু’টিকে রচনা করা হয়েছে। মাছ, ব্রয়লার মুরগি চাষ ইত্যাদিতে কিছু সংস্থা এ রাজ্যে চুক্তি করে চাষ করে। এই চুক্তি একেবারেই মৌখিক।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মানবেন্দ্র রায়, অধ্যাপক (বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) ও বিজেপি নেতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:৩৬
Share: Save:

কৃষি বিল নিয়ে তোলপাড় দেশ। ব্যক্তিগত ভাবে আমার ধারণা, কেউ কৃষকের স্বার্থের কথা, আবার কেউ মধ্যসত্ত্বভোগীদের স্বার্থের কথা ভাবছেন। তবে দু'পক্ষই কিন্তু কৃষকদের জন্য ভাবিত বলে প্রচার করছেন। কারও ক্ষেত্রে এটা প্রকৃত কান্না আবার কারও ক্ষেত্রে মায়াকান্না।

পশ্চিমবঙ্গ এমনই একটি রাজ্য, যেখানে ফসল-প্রাণী-মাছ সব কিছুর মধ্যেই রয়েছে এক দারুণ বৈচিত্র। তবে এটাও ঠিক যে, কৃষকেরা এক অনিশ্চিত পরিবেশের মধ্যে ফসল ফলান। ধান-গম-আলু এবং বিভিন্ন আনাজ চাষ করতে বিঘাপ্রতি ১০-২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। ৩-৪ মাস অপেক্ষার পরে অনেক সময় প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় একেবারে শূন্য হাতে ফিরতে হয়। ফলন ভাল হলে ফড়েদের হাতে পড়ে কপাল পোড়ে তাঁদের।

ভারতে এই প্রথম কোনও সরকার চাষির সামগ্রিক সমস্যার কথা বিবেচনা করেছে। সেই নিরিখেই এই কৃষি বিল দু’টিকে রচনা করা হয়েছে। মাছ, ব্রয়লার মুরগি চাষ ইত্যাদিতে কিছু সংস্থা এ রাজ্যে চুক্তি করে চাষ করে। এই চুক্তি একেবারেই মৌখিক। কোনও কারণে যদি চাষ মার খায়, বা সেই সংস্থা মুরগি না কেনে, তা হলে যে লোকসান হয়, তা ওই চাষিকেই বহন করতে হয়। সরকারি রক্ষাকবচের ব্যবস্থা নেই।

সম্প্রতি পাস হওয়া কৃষি বিলে যে চুক্তি-চাষের কথা বলা হয়েছে, তা ফসল এবং ঋতুভিত্তিক। ধরা যাক, কোনও চাষি রবি মরসুমে আলু চাষে কোনও সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হল। সে ক্ষেত্রে ওই সংস্থার অধিকার ওই মরসুমে শুধুমাত্র আলুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আলু চাষ মার খেলে তার ভাগীদার ওই সংস্থাকেও হতে হবে। পাশাপাশি, কিসান মান্ডিতে আগে যেমন ফসল বিক্রি হত, তেমনই চলবে। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর চাষিদের আয় বেড়েছে। ফসলের সহায়ক মূল্য দু’-তিন গুণ বেড়েছে। নতুন কৃষি বিলে সহায়ক মূল্যের কোনও হেরফের হবে না। পাশাপাশি, চাষিরা চাইলে ভিন্ রাজ্যে ফসল বিক্রির স্বাধীনতা পাবেন।

এখন ভারতে খাদ্যশস্য ও অন্যান্য ফসল চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি উৎপাদিত হয়। খাদ্যশস্য গুদামে পড়ে থেকে নষ্ট হয়। ফলে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা থেকে কয়েকটি ফসল বাদ গেলে কোনও অসুবিধা হবে না। এই বিল চালু হলে বড় সংস্থা চাষির দোরগোড়ায় আসবে। ফলে, গ্রামের মধ্যেও গুদাম এবং প্রক্রিয়াকরণ শিল্প গড়ে উঠবে। অতিরিক্ত কর্মসংস্থান হবে। বিল কার্যকর হলে প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি হবে। ফড়েদের দাপাদাপির ফলে চাষিরা যে আলু ৮-১০ টাকা প্রতিকেজি দরে বিক্রি করেছিলেন, সেই আলু আমরা ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে কিনছি। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পথ এই বিল দেখাবে।

কল্যাণী থেকে কলকাতা যাওয়ার দু’টি সড়কপথ আছে। ধরা যাক, এ বার সরকার আরও একটা উড়ালপুল করে দিল। তা চালু হলে ওই দু’টি রাস্তার ধারে যে সব দোকান-হোটেল-পানশালা গড়ে উঠেছিল, কিছুটা হলেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু, রাস্তাগুলি তো মূলত যাত্রীদের কথা ভেবেই করা হয়েছিল। তাই যাত্রীদের কাছে উড়ালপুল আশীর্বাদ। ঠিক তেমনই, কৃষি ও কৃষিপণ্যকে নিয়ে গড়ে উঠেছে ছোট মাঝারি এবং বড় অসাধু দালাল চক্র। তাদের অনেকের সঙ্গেই রয়েছে রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা। যে সমস্ত ব্যক্তি এবং দল এই কৃষি বিলের বিরোধিতা করছেন, তাঁরা মূলত এ সব দালাল-চক্রের মুখপাত্র।

বড় বড় সংস্থা বিনিয়োগ করলে আধুনিক চাষের সুফল ছোট চাষিরাও ঘরে তুলতে পারবেন। বড় সংস্থার ঘাড়ে চাষের ঝুঁকি ন্যস্ত হওয়ার দরুণ ছোট চাষিরা নিশ্চিন্তে চাষ করতে পারবেন। এই আইনের সঠিক প্রয়োগের ফলে চাষির ছেলে আবার চাষবাসে আকৃষ্ট হবেন। ফলে, আত্মনির্ভর কৃষিভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠবে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farm Bill 2020 BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE