Advertisement
E-Paper

জঙ্গলে মিলল কিশোরীর দেহ, সন্দেহভাজন যুবককে পিটিয়ে মারল জনতা

ভোরবেলা উঠে পুকুর পাড়ে বাসন মাজতে গিয়েছিল বাড়ির মেয়েটি। তারপর থেকে বেপাত্তা। লোকজন তন্ন তন্ন করে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। দেখা যায়, পুকুর পাড়ে একটি খেজুর গাছের নীচে পড়ে আছে মহিলাদের অন্তর্বাস, পুরুষের ছেঁড়া গেঞ্জি। সন্দেহ বাড়ে।

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:১১
তদন্তে এসেছে পুলিশ। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

তদন্তে এসেছে পুলিশ। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

ভোরবেলা উঠে পুকুর পাড়ে বাসন মাজতে গিয়েছিল বাড়ির মেয়েটি। তারপর থেকে বেপাত্তা। লোকজন তন্ন তন্ন করে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। দেখা যায়, পুকুর পাড়ে একটি খেজুর গাছের নীচে পড়ে আছে মহিলাদের অন্তর্বাস, পুরুষের ছেঁড়া গেঞ্জি। সন্দেহ বাড়ে। আরও খানিকটা খোঁজাখুঁজির পরে পুকুর-লাগোয়া ঝোপ-জঙ্গলে বছর সতেরোর মেয়েটির অর্ধনগ্ন দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। মুখে আঁচড়ের দাগ। অত্যাচারের চিহ্ন স্পষ্ট।

বুধবার বাদুড়িয়ার শায়েস্তানগরের এই ঘটনায় ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে নিমেষে রটে যায় এলাকায়। পরে সন্দেহভাজন এক বাংলাদেশি যুবককে এলাকার লোকজন পিটিয়ে মেরেছে। দু’টি দেহই ময়না-তদন্তের জন্য বসিরহাট জেলা হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। সন্ধের দিকে এলাকায় আসেন উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, মেয়েটিকে ধর্ষণ করে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। সেই মর্মে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। গণপিটুনিতে খুনের আরও একটি পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নয়ন সর্দার (৩৫) নামে যে যুবককে পিটিয়ে মেরেছে এলাকার বাসিন্দারা, সে ঘটনায় জড়িত ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা। গণপিটুনিতে খুনের পৃথক মামলাও রুজু হয়েছে। তবে ওই ঘটনায় কেউ ধরা পড়েনি। গণপিটুনির ঘটনায় কারা জড়িত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় র‌্যাফ, পুলিশ টহল দিচ্ছে।

কী হয়েছিল বুধবার ভোরে?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মেয়েটি এ বছরই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। প্রতিদিনই ভোরে উঠে বাড়ির কাছে পুকুরে বাসন ধুতে যায় সে। এ দিনও ভোর সাড়ে ৬টা নাগাদ পুকুর পাড়ে গিয়েছিল। বাড়ির লোকজন সবে ঘুম থেকে উঠেছেন। বেশ খানিকক্ষণ কেটে গেলেও মেয়ে বাড়ি না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই জানাজানি হয় বাকি ঘটনা।

কিন্তু নয়নের উপরে সন্দেহ গিয়ে পড়ল কেন গ্রামের লোকের?

প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই যুবক কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ থেকে এ দেশে চোরাপথে এসে গ্রামেরই মেয়েকে বিয়ে করে ঘরজামাই থেকে যায়। ট্রাকের খালাসির কাজ করত সে। গ্রামের মেয়েদের উত্যক্ত করার জন্য দুর্নাম ছিল এলাকায়। মেয়েটির পরিবারের লোকজনের দাবি, তাকে একাধিক বার কুপ্রস্তাব দিয়েছিল নয়ন। কিন্তু ‘গ্রামের জামাই’ হওয়ায় কেউ বিশেষ কিছু বলত না।

এ দিন ভোরে যখন মেয়েটির দেহ পাওয়া যায়, সে সময়ে স্থানীয় এক মহিলা দাবি করেন, নয়নকে ভোরবেলা ওই পুকুরেই স্নান করতে দেখেছিলেন তিনি, যেখানে মেয়েটি বাসন মাজতে গিয়েছিল। মহিলাকে দেখে নয়ন নাকি জল থেকে উঠে তড়িঘড়ি পালিয়ে যায়।

এতেই গ্রামবাসীদের সন্দেহ গিয়ে পড়ে ওই যুবকের বিরুদ্ধে। শুরু হয় খোঁজ খোঁজ।

নয়নও ততক্ষণে গ্রাম ছেড়েছে। বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ কয়েক কিলোমিটার দূরে তার দেখা মেলে। সেখানেই শুরু হয় মারধর। ক্ষিপ্ত জনতা তাকে মারতে মারতে নিয়ে আসে ঘটনাস্থলের দিকে। পথে আরও লোকজন জুটে যায়। বাঁশ, রড, গাছের ডাল দিয়ে চলে এলোপাথাড়ি মার।

ইতিমধ্যে খবর গিয়েছিল পুলিশের কাছে। কিন্তু গ্রামে ঢুকতে গেলে পুলিশকেও বাধা দেন মহিলারা। পরে এসডিপিও শ্যামল সামন্ত বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নয়নকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। পথেই মারা যায় সে।

মেয়েটির বাবা জানালেন, গত বছরই বজ্রাঘাতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল মেয়ে। তিন ভাই, চার বোনের সংসারে পড়াশোনাটা চালিয়ে যাচ্ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘দুর্বল মেয়েটাকে ভয়ঙ্কর অত্যাচার করে মেরেছে। এর বিচার চাই।’’ নয়নের বদ স্বভাবের কথা অজানা ছিল না স্ত্রী আমেনার। মারধরের সময়ে তিনিও ছিলেন এলাকায়। স্ত্রীর আক্ষেপ, ‘‘অন্য মেয়েদের উপরে স্বামীর নজর ছিল। এ নিয়ে চিন্তায় থাকতাম। বহুবার বললেও শোধরায়নি। শেষে এমন পরিণতি হল!’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, নয়নের মতোই সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে অনেক বাংলাদেশি চোরাপথে এসে দিব্যি সংসার পেতে জাঁকিয়ে বসেছে। তাদের অনেকেই নানা অনৈতিক কাজে জড়িত।

lynching public death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy