Advertisement
E-Paper

পড়ে সরকারি জমি, তবু হল না দমকলকেন্দ্র

দেগঙ্গার বেড়াচাঁপা চৌমাথা থেকে একটু এগিয়ে গেলে পড়বে দেউলিয়া হাইস্কুল। তার সামনেই রাস্তার পাশে উঁচু পাঁচিলে ঘেরা অবস্থায় বছরের পর বছর ধরে পড়ে রয়েছে বিঘা পাঁচেক জমি।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৯ ০২:২২
পরিত্যক্ত অবস্থায় সেই জমি। ছবি: সুদীপ ঘোষ

পরিত্যক্ত অবস্থায় সেই জমি। ছবি: সুদীপ ঘোষ

একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাসিন্দাদের দাবির প্রেক্ষিতে উত্তর ২৪ পরগনায় জেলা প্রশাসনিক সভায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘শীঘ্রই দেগঙ্গায় একটি দমকল কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।’ তার পরে কেটে গিয়েছে বহু দিন। কেন সেই প্রকল্পে দেরি তার জবাবে রাজ্য সরকার ও জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছিল, প্রয়োজনীয় জমির অভাব দমকল কেন্দ্র গড়তে না পারার কারণ। অথচ সেই দেগঙ্গাতেই বিঘার পর বিঘা সরকারি জমি পড়ে রয়েছে অবহেলায়। প্রশাসনিক সদিচ্ছার অভাবেই দমকল কেন্দ্র তৈরি করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন দেগঙ্গার মানুষ।

শুধু তাই নয়, রাস্তার উপরেই বাস স্ট্যান্ড। অটো-টোটো দাঁড়িয়ে থাকে পথের উপরেই। সে কারণে বারাসত-টাকি রোড কিংবা বেড়াচাঁপা-হাড়োয়া রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যানজটের ঘটনা নিত্যদিনের। এমনকি দুর্ঘটনা এবং মৃত্যুও হয়। প্রতিবাদে প্রায়ই অবরোধও হয়। তাই দীর্ঘদিন ধরে একটি বাস টার্মিনাসের দাবি রয়েছে ওই এলাকায়। স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, পড়ে থাকা ওই বিশাল জমিতে গড়ে উঠুক দমকল কেন্দ্র। পাশেই তৈরি করা হোক বাস টার্মিনাস। পাশাপাশি এলাকার সংস্কৃতি ধরে রাখতে একটি সাংস্কৃতিক মঞ্চও গড়ে উঠুক।

দেগঙ্গার বেড়াচাঁপা চৌমাথা থেকে একটু এগিয়ে গেলে পড়বে দেউলিয়া হাইস্কুল। তার সামনেই রাস্তার পাশে উঁচু পাঁচিলে ঘেরা অবস্থায় বছরের পর বছর ধরে পড়ে রয়েছে বিঘা পাঁচেক জমি। স্থানীয় মানুষ জানালেন, এক সময় এখানেই ছিল জেলা পূর্ত ও সড়ক নির্মাণের দফতর। আধিকারিক থেকে কর্মীদের যাতায়াতে সব সময়ে জমজমাট থাকত গোটা এলাকা। পরে সেই অফিস সরে বারাসতে চলে যায়।

এর পর থেকে দীর্ঘদিন তা বন্ধ হয়ে পড়ে থাকায় সেই জায়গাটি জঞ্জাল, আগাছায় ভরে গিয়েছে। আধিকারিকের আবাসন থেকে অফিসঘর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে রাস্তা তৈরির বড় বড় যন্ত্রও। এই জমি দেখিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘‘সরকার বলছে জমির অভাবে কাজ করা যাচ্ছে না। অথচ রাস্তার পাশে এতটা জমি পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে, সে দিকে কারও নজর নেই কেন?

অভিযোগ প্রসঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘দমকল কেন্দ্রের জন্য জমি দেখা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে কিছু সমস্যার জন্য তা করা যায়নি। পূর্ত দফতরের এই জমির বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’’

বস্তুত বারাসত ও বসিরহাটের ঠিক মাঝখানে দেগঙ্গা, হাড়োয়ার মতো এলাকার প্রায় ২১ কিলোমিটারের মধ্যে দমকল কেন্দ্র নেই। ওই এলাকায় আগুন লাগলেই বারাসত বা বসিরহাট থেকে দমকলের ইঞ্জিন আসতে আসতে অনেক সময় লেগে যায়। সাম্প্রতিক কয়েকটি আগুনের ঘটনায় দেখা গিয়েছে, দমকল আসতে দেরি করায় ছোট আগুন ভয়াবহ আকার নিয়েছে। ক্ষতির পরিমাণও বেড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দমকলের জন্য সরকার জমির সমস্যার কথা বলছে। এই পড়ে থাকা সরকারি জমিতেই যদি দমকল কেন্দ্র গড়া যায় তাহলে দেগঙ্গা, হাড়োয়ার প্রচুর মানুষ উপকৃত হবেন।’’

এই এলাকায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাস্তার উপর বেআইনি ভাবে টোটো, অটো, বাস দাঁড়িয়ে থাকায় যানজট কাটাতে হিমশিম খেতে হয় ট্র্যাফিক পুলিশের। স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্বাস আলি মণ্ডল বলেন, ‘‘অবস্থা এমন যে, রাস্তা জুড়ে পরপর গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় ক্রেতারা দোকানেই আসতে পারেন না। যদি নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়ি রাখার ব্যবস্থা থাকত তা হলে যানজট হত না, এই সব সমস্যা থেকে রেহাই মিলত।’’ স্থানীয় এক নাট্য শিল্পী বলেন, ‘‘মঞ্চের অভাবে এলাকার ছেলেমেয়েরা অনুষ্ঠান করতে পারেন না। পরিত্যক্ত ওই জমিতে যদি একটি সাংস্কৃতিক মঞ্চ গড়ে তোলা যায় তাহলে অনেকে উপকৃত হবেন।’’

Land Fire Brigade Mamata banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy