Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
WB assembly election 2021

লোকসভায় ভরাডুবি ভুলতে চায় তৃণমূল

২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকে এখানে প্রতিটি ভোটেই তৃণমূল এগিয়েছিল। ছন্দ কাটে লোকসভা ভোটের ফলাফলে।

গতিহারা: যশোর রোডে যানজট এখনও ভোগাচ্ছে মানুষকে ও জলপথ: বর্ষায় কিছু ওয়ার্ড ভাসে জলে। ছবি দু’টি তুলেছেন সুজিত দুয়ারি।

গতিহারা: যশোর রোডে যানজট এখনও ভোগাচ্ছে মানুষকে ও জলপথ: বর্ষায় কিছু ওয়ার্ড ভাসে জলে। ছবি দু’টি তুলেছেন সুজিত দুয়ারি।

সীমান্ত মৈত্র
হাবড়া শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২১ ০১:৫৭
Share: Save:

এ বার ভোটে ‘হাইভোল্টেজ হাবড়া’— এমনটাই বলছেন স্থানীয় মানুষ।

২০১৬ সালে এই কেন্দ্র থেকেই তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ৪৫,৯৪৭ ভোটের ব্যবধানে জিতে তিনি আপাতত জেলায় দলের সভাপতি। রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীও বটে। গত লোকসভা ভোটে হাবড়া কেন্দ্রে বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষদস্তিদার আবার পিছিয়ে ছিলেন ১৯,০৫০ ভোটে। হাবড়া পুরসভার ২৪টি ওয়ার্ডেই পিছিয়ে পড়ে তৃণমূল। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট তাই জ্যোতিপ্রিয়র কাছে এ বার সম্মানের লড়াই, বলছেন তাঁর দলেরই অনেকে।

২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকে এখানে প্রতিটি ভোটেই তৃণমূল এগিয়েছিল। ছন্দ কাটে লোকসভা ভোটের ফলাফলে। শাসক দলের নেতৃত্বের কাছেও যা ছিল অপ্রত্যাশিত। লোকসভায় খারাপ ফলের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দলের অভ্যন্তরে যে কারণগুলি উঠে এসেছিল তা হল, সিপিএম তথা বামেদের ভোট বিজেপির দিকে চলে চাওয়া। স্থানীয় পুরসভা ও পঞ্চায়েত এলাকার দলীয় নেতৃত্বের একাংশের জনবিচ্ছিন্নতা এবং উদ্ধত আচরণ।

তবে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হলে এখনও ভোট না হওয়ায় নাগরিক পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ আছে। যা নিয়ে মানুষ ক্ষুব্ধ। এরও প্রভাব ভোটে পড়েছে বলে মনে করেন অনেকে। তা ছাড়া, পঞ্চায়েত ভোটে হাবড়া এলাকায় হিংসার ঘটনাও শাসক দলের বিরুদ্ধে গিয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের দিন এখানে দু’জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল।

গত কয়েক মাস ধরে জনসংযোগে জোর দিচ্ছে তৃণমূল। সপ্তাহে দু’তিন পুরসভায় বসছেন জ্যোতিপ্রিয় নিজে। মানুষের অভাব-অভিযোগের কথা শুনছেন। করোনা পরিস্থিতিতে বিধায়ক এলাকায় ঘুরে মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার বিলি করেছেন। করোনা ও আমপানের সময়ে দলের পক্ষ থেকে মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের বাড়ি গিয়ে মন্ত্রী সংবর্ধনা দিয়েছেন।

২০১১ সালের বিধানসভার পর থেকেই সিপিএমের এখানে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। লোকসভা ভোটেও তা অব্যাহত ছিল। তবে করোনা ও আমপানের সময় বামকর্মীরা জনসংযোগের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করেছে। সিপিএম পক্ষ থেকে করোনার অ্যান্টিবডি পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। বামেরা করোনা আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করেছেন। আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করেছেন। হাবড়া হাটথুবা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিতে টাকা রেখে কয়েক হাজার গরিব মানুষ বিপাকে পড়েছেন। বামেরা তাঁদের নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন।

সাম্প্রতিক সময়ে হাবড়ায় বিজেপি নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি বাড়িয়েছে অনেকটাই। নিয়মিত কর্মসূচির মাধ্যমে তৃণমূলের বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত করার কাজ করছে তারা। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীরা নিয়মিত আসছেন দলীয় কর্মসূচিতে। লোকসভা ভোটের সাফল্য বিধানসভা ভোটেও তারা ধরে রাখতে চেষ্টায় ত্রুটি রাখছে না বিজেপি। আমপান ও সমবায় সমিতির দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিজেপি শাসক দলকে চাপে রাখতে শুরু করেছে।

এলাকার কিছু সমস্যা প্রচারে বেরিয়ে শাসক দলকে ভোগাতে পারে বলে দলের অন্দরে গুঞ্জন আছে। গত পাঁচ বছরে রাস্তাঘাট, বিদ্যুতের ব্যবস্থা হয়েছে। থানার পরিকাঠামো নতুন করে তৈরি হয়েছে। শহরে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। তবে মূল দু’টি সমস্যার সুরাহা আজও হয়নি। যে কোনও ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলির আলোচনায় নিয়ম করে উঠে আসে যানজট ও নিকাশি সমস্যার কথা। যশোর রোডে উড়ালপুলের প্রতিশ্রুতি এখনও কার্যকর হয়নি। যশোর রোডের দু’পাশে জবরদখল করে অস্থায়ী দোকানপাট তৈরি হয়েছে। ফুটপাথ বলে কিছু নেই। অসংখ্য বেআইনি অটো সড়ক জুড়ে। পদ্মা খালের সংস্কার আজও হল না। পুর ও গ্রামীণ এলাকায় মানুষ এখনও জলবন্দি হয়ে পড়েন। এ বারও ব্যতিক্রম হয়নি। ঘরে মধ্যে জমা জলে পড়ে এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। পরবর্তী সময়ে পাম্প বসিয়ে জল সরানোর ব্যবস্থা করেন বিধায়ক। বাড়ি বাড়ি পাইপ লাইনের মাধ্যমে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল এখনও পৌঁছনো যায়নি।

সিপিএমের হাবড়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক আশুতোষ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘যানজট সমস্যা মেটাতে পারেননি বিধায়ক। হয়নি উড়ালপুল। নিকাশি নালায় জল জমে আছে। সমবায় ব্যাঙ্কে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে।’’ বিজেপির হাবড়া বিধানসভার যুগ্ম আহ্বায়ক বিপ্লব হালদার বলেন, ‘‘রেল ওভারব্রিজ হয়নি। যশোর রোড চওড়া ও সংস্কার করতে ব্যর্থ হয়েছেন বিধায়ক। জলনিকাশির ব্যবস্থা নেই। পরিকল্পনাহীন ভাবে নালা করা হয়েছে।’’

জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘বৃষ্টির জমা জল দ্রুত সরানো জল ২৮ কোটি টাকায় পাম্পিং স্টেশন তৈরি হচ্ছে। পানীয় জলের জন্য নৈহাটি থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গঙ্গার জল আনা কাজ হচ্ছে। হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নতুন করে পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। ৪৩০টি শয্যা থাকবে। ব্লাডব্যাঙ্ক তৈরি হচ্ছে। এলাকায় ৯৫ শতাংশ কংক্রিটের রাস্তা তৈরি করেছি। রাজ্যের একমাত্র বন্ধ ক্রীড়া বিদ্যালয় নতুন করে চালু করেছি। আদালতে মামলা চলার জন্য যশোর রোড সম্প্রসারণের কাজ থমকে আছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

WB assembly election 2021 TMC BJP Habra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE