Advertisement
৩০ মার্চ ২০২৩

দুর্গন্ধে বাড়ি বেচে দিচ্ছেন অনেকেই!

এই অবস্থায় হাবড়ার নাগরিকদের খুশি হওয়ারই কথা ছিল। কিন্তু ধোঁয়ায় এলাকা ছেয়ে যাওয়ায় নাকাল হন তাঁরা। অনেকের আবার বক্তব্য, সমস্ত আবর্জনা নিয়মিত সাফ হয় না। বাণীপুর, মধ্য হাড়িয়া,  গোবিন্দপল্লি, এজি কলোনি, পদ্মাপল্লি এলাকার মানুষ  মশা-মাছির তাণ্ডব ও দুর্গন্ধে টিকতে পারছেন না। 

স্তূপীকৃত হয়ে জমছে আবর্জনা।ছবি দু’টি তুলেছেন সুজিত দুয়ারি

স্তূপীকৃত হয়ে জমছে আবর্জনা।ছবি দু’টি তুলেছেন সুজিত দুয়ারি

সীমান্ত মৈত্র
হাবড়া শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৯ ০২:১২
Share: Save:

প্রায় ৬ বিঘে জমির উপরে তৈরি হয়েছে পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ড। সেখানে ফেলা হয় গোটা এলাকার যাবতীয় আবর্জনা, বর্জ্য। তা আবার আগুনে পুড়িয়েও ফেলা হয়।

Advertisement

এই অবস্থায় হাবড়ার নাগরিকদের খুশি হওয়ারই কথা ছিল। কিন্তু ধোঁয়ায় এলাকা ছেয়ে যাওয়ায় নাকাল হন তাঁরা। অনেকের আবার বক্তব্য, সমস্ত আবর্জনা নিয়মিত সাফ হয় না। বাণীপুর, মধ্য হাড়িয়া, গোবিন্দপল্লি, এজি কলোনি, পদ্মাপল্লি এলাকার মানুষ মশা-মাছির তাণ্ডব ও দুর্গন্ধে টিকতে পারছেন না।

বাসিন্দারা জানালেন, দুর্গন্ধে ঘরে থাকা যাচ্ছে না। কিছু খেলে বমি পায়। সন্ধ্যার পরে ধোঁয়ার জন্য ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে থাকতে হয়। শিশু-মহিলাদের চর্ম রোগ দেখা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ। বয়স্কদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। অসুস্থ হয়ে নিয়মিত হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেকে। ডাক্তার দেখাতে হচ্ছে। ইতিমধ্যেই কেউ কেউ বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র চলে গিয়েছেন বলেও জানালেন পাড়া-পড়শিরা।

২০১৭ সালে এলাকায় জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়েছিল। কয়েকজন মারাও যান। সেই আতঙ্কে ভুগছেন সকলে। মণিমোহন বৈদ্য নামে এক ভ্যান চালক আবার মুখে মুখে ছড়া বেঁধে ফেলেছেন এই দশা নিয়ে। লোককে শোনাচ্ছেন, ‘রাতে সেথায় বেজায় মশা, দিনে গন্ধ, মাছি...।’

Advertisement

বিক্ষোভ স্থানীয় মানুষের

রিয়া রায় নামে এক তরুণী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘দুর্গন্ধের জেরে আমরা বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছি। ধোঁয়ায় চোখ-মুখ জ্বলে যায়। শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল।’’

এলাকার মানুষ অনেকেই ক্ষোভ উগরে দিলেন। রিনা রায় নামে এক মহিলা উত্তেজিত হয়ে বলছিলেন, ‘‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে আসা দুর্গন্ধ ও ধোঁয়ায় বাড়িতে টেকা যাচ্ছে না। দিনেও মশারি টাঙাতে হচ্ছে। চুলকানি, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ ছড়াচ্ছে।’’ সাবিনা মজুমদার নামে এক মহিলা জানালেন, চুলকানির জেরে হাত পিঠ-সহ সারা শরীরে চাকাচাকা কালো দাগ হয়েছে। গায়ে ব্যথা। হাত-পা ফুলে গিয়েছে।

ওই এলাকা থেকে ডাম্পিং গ্রাউন্ড সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা বহু দিন ধরেই সোচ্চার। পুরসভা ও প্রশাসনের কাছে তাঁরা একাধিকবার আবেদন জানিয়েছেন। সমস্যা মেটেনি। রবিবারও বাসিন্দারা একজোট হয়ে ডাম্পিং গ্রাউন্ড বন্ধ করার দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। হাবড়া থানার পুলিশ গিয়ে তাঁদের বুঝিয়ে বিক্ষোভ থামায়। প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করা হয়। সোমবার বাসিন্দারা থানায় স্মারকলিপি দিয়েছেন।

এলাকার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক শুভঙ্কর হালদার বলেন, ‘‘অনেকে বাড়ি বিক্রি করে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। আমরাও বাড়ি বিক্রি করতে চাই। কিন্তু কেউ কিনতেই রাজি হচ্ছে না। সমস্যা না মিটলে আমরা আইনের দ্বারস্থ হব।’’

হাবড়া পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস বলেন, ‘‘অশোকনগরে একটি ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি হচ্ছে। সে জন্য সরকার ৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। ওটি তৈরি হয়ে গেলে এখানকার ময়লা সেখানে নিয়ে ফেলা হবে।’’

পুরসভার প্রশাসক তথা মহকুমাশাসক তাপস বিশ্বাস বলেন, ‘‘সমস্যা মেটাতে বিকল্প জায়গা দেখা হয়েছে। বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে সমস্যা মেটাতে।’’

তবে এলাকার মানুষ শুধু আশ্বাসে খুশি নন। তাঁরা চান সমস্যার স্থায়ী সমাধান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.