Advertisement
১১ মে ২০২৪

মায়ের কোলে বসে পড়ে উচ্চ মাধ্যমিকে

এমন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও অবশ্য জীবনে হেরে যাওয়ার পাত্রী নয় সে। কাকলির লড়াইয়ের অবলম্বন হল তার পড়াশোনা। মেয়ের লক্ষ্য, ‘‘লেখাপড়া করে সরকারি চাকরি করতে চাই। শিক্ষিকা হতে পারলে মনে করব জীবনের একটা স্বপ্ন পূরণ করতে পারলাম।’’

পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে মায়ের সঙ্গে কাকলি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে মায়ের সঙ্গে কাকলি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৮ ০৩:২৩
Share: Save:

উচ্চতা মেরে কেটে সাড়ে তিন ফুট। জন্মের পর থেকে কখনও নিজের পায়ে উঠে দাঁড়াতে পারেনি বনগাঁর কলেজ পাড়ার বাসিন্দা কাকলি হোড়। হাত-পায়ের হাড় কতবার ভেঙেছে, ইয়ত্তা নেই। কোমর থেকে পায়ের নীচ পর্যন্ত কোনও সাড় নেই তার। সব হাড়ই ভাঙা।

এমন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও অবশ্য জীবনে হেরে যাওয়ার পাত্রী নয় সে। কাকলির লড়াইয়ের অবলম্বন হল তার পড়াশোনা। মেয়ের লক্ষ্য, ‘‘লেখাপড়া করে সরকারি চাকরি করতে চাই। শিক্ষিকা হতে পারলে মনে করব জীবনের একটা স্বপ্ন পূরণ করতে পারলাম।’’ অভাবের সংসারে বাবা-মায়ের পাশেও দাঁড়াতে বদ্ধপরিকর মেয়েটি।

কাকলি এ বার বসেছে উচ্চ মাধ্যমিকে। নিউ বনগাঁ গালর্স হাইস্কুলের ছাত্রী সে। সিট পড়েছে বাড়ির কাছে নিউ বনগাঁ হাইস্কুলে। মঙ্গলবার বাবা কালীকৃষ্ণবাবু মেয়েকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন পরীক্ষা কেন্দ্রে। মা মালাদেবীও সঙ্গে ছিলেন। পরীক্ষা কেন্দ্রে কাকলির জন্য আলাদা বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। হুইল চেয়ারের মাপে টেবিলেরও ব্যবস্থা হয়েছে তার জন্য। পরীক্ষা শেষে মায়ের কোলে ফিরেছে বাড়িতে।

নিজের পায়ে হাঁটা তো দূরের কথা, ঠিক করে বসতেও পারে না মেয়েটি। বৃহস্পতিবার ইংরেজি পরীক্ষা। বুধবার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত কাকলি। রঙ চটে যাওয়া জরাজীর্ণ বাড়ি। দারিদ্র্যের ছাপ স্পষ্ট। বিছানায় বসে কিছুক্ষণ লেখাপড়া করে কাকলি। বসতে না পারলে মা কোলে নেন তাকে। কখনও বসে বাবার কোলে। এ ভাবেই চলে পড়াশোনা। এ ভাবেই পরীক্ষার আগে দিনে ৬-৭ ঘণ্টা পড়াশোনা চালিয়েছে সে। এত কাল চলছে এ ভাবেই।

মা তাকে খাইয়ে-পরিয়ে দেন। ডান হাতে লিখতে পারে না কাকলি। সে হাতের হাড় সব ক’টা ভেঙেছে একাধিবার। বাঁ হাতেরও হাড় ভেঙেছে। তবে কব্জি থেকে আঙুল পর্যন্ত এখনও ঠিকঠাক আছে। বাঁ হাত দিয়েই এখনও তাই লেখালেখির কাজ করে কাকলি।

মা মালা বলেন, ‘‘মেয়ের তেরো দিন বয়স থেকে বুঝতে পারি ওর অসুস্থতার কথা। তারপর থেকে বনগাঁ ও কলকাতায় বহু চিকিৎসককে দেখিয়েছি। অতীতে চিকিৎসকেরা জানিয়ে ছিলেন এই রোগের ‌নাকি চিকিৎসা নেই। তবে চিকিৎসা থাকলেও আমাদের সেই আর্থিক সামর্থ্য নেই।’’

কাকলির বাবা সামান্য আয়ের সেলসম্যানের কাজ করেন। কোনও মতে সংসার চলে। কাকলির এক ভাই রয়েছে। সে পড়ে নবম শ্রেণিতে।

আর্থিক কারণে মেয়েকে গৃহশিক্ষক দিতে পারেননি বাবা-মা। তবে দেদার সাহায্য করেছেন স্কুলের শিক্ষিকারা। কাকলি বলে, ‘‘যখনই কোনও কিছু বুঝতে অসুবিধা হয়েছে, দিদিমণিরা আলাদা করে আমায় পড়িয়ে দিয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Student Hs Exam Bay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE