এই গামছা কেটেই নামানো হয় তুহিনের (ইনসেটে) দেহ। নিজস্ব চিত্র।
চিকিৎসাধীন এক যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করল পুলিশ। সোমবার ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম তুহিন মণ্ডল (৩০)। তিনি বাথরুমে জলের পাইপের সঙ্গে গলায় গামছা দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে অনুমান পুলিশের। নার্স ও আয়াদের গাফিলতিতেই এমন পরিণতি, অভিযোগ তুহিনের বাড়ির লোকের।
হাসপাতালের সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘ওই যুবকের মৃত্যুর বিষয়ে আমরা পুলিশকে জানিয়েছি। পাশাপাশি আমরাও নিজস্ব ভাবে তদন্ত শুরু করেছি। কারও গাফিলতি থাকলে পদক্ষেপ করা হবে।’’
মৃতের আত্মীয়দের প্রশ্ন, তুহিন শয্যা থেকে হাতের স্যালাইনের চ্যানেল খুলে বাথরুমে গেলেন, কর্তব্যরত নার্স বা টাকা দিয়ে রাখা আয়া তা দেখতে পেলেন না কেন? গোটা ঘটনার তদন্ত দাবি করে মৃতের জামাইবাবু রামপ্রসাদ বিশ্বাস এ দিন সকালে বনগাঁ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ রয়েছে আয়াদের বিরুদ্ধে। তাঁদের দাবি, হাসপাতালে এখন আয়াদের দৌরাত্ম্যে টেঁকা যায় না। কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও কোনও লাভ হয় না।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জ্বর ও কালো পায়খানা নিয়ে শুক্রবার দুপুরে স্থানীয় কালুপুর এলাকার বাসিন্দা তুহিনকে হাসপাতালের মেল মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল। চিকিৎসক দেখে তাঁকে ওই দিন সন্ধ্যায় ডায়েরিয়া ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করেন। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। পরিবারের সদস্যেরা জানান, রক্ত পরীক্ষায় তুহিনের ডেঙ্গিও ধরা পড়েছিল।
২০০৮ সালে বনগাঁ দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয় থেকে বিএ পাশ করে তুহিন এখন চাকরির জন্য পড়াশোনা করছিলেন। বাবা তপনবাবু চাষবাস করেন। দুই ভাই বোনের মধ্যে তুহিন বড়। রামপ্রসাদবাবু বলেন, ‘‘রবিবার রাত সাড়ে ১১টার সময়ে আমরা তুহিনকে দেখে বাড়ি যাই। ও তখন সুস্থই ছিলেন। রাত সাড়ে ৪টা নাগাদ থানা থেকে ফোন করে বাড়িতে আত্মহত্যার খবর জানানো হয়।’’ তবে এই ঘটনা কখন ঘটেছে, তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাতে পারেনি বলে দাবি ওই যুবকের পরিবারের।
রোগীদের আত্মীয়দের অভিযোগ, হাসপাতালের আয়াদের বিরুদ্ধে মুখ খোলা যায় না। একজন আয়া এক সঙ্গে পাঁচ ছ’জন রোগীর ভার নেন। ফলে কোনও রোগীর দিকেই ঠিকমতো নজর দিতে পারেন না। রাতে কর্তব্যরত আয়ারা বেশির ভাগ ঘুমিয়ে কাটান। তুহিনের বাড়ির লোকের দাবি, তাঁরা রোগীর সঙ্গে থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এই আয়ারাই থাকতে দেননি। হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘আয়াদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কয়েকজন আয়াকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঘটনা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য বলেন, ‘‘ওই যুবকের মৃত্যুতে কারও গাফিলতি আছে কিনা, তা জানতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, নার্স-আয়াদের সঙ্গে কথা বলা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy