সাহায্য: চেক নিচ্ছেন ছায়ারানি ঘোষ। নিজস্ব চিত্র।
তেইশ বছরের সম্পর্ক। ছাড়ার সময়ে কষ্ট হয়েছিল খুব। তাই ছেড়েও ছাড়তে পারেননি ছায়ারানি ঘোষ। দাঁড়িয়েছেন গরিব পরিবারের স্কুলের ছেলেমেয়েদের পাশে।
২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছিলেন ছায়াদেবী। জীবনের শেষ সঞ্চয়, ৩ লক্ষ টাকা স্কুলকে দিয়েছেন গত জানুয়ারি মাসে। চেয়েছিলেন, স্কুলের অ্যাকাউন্টেই টাকাটা থাক। কিন্তু প্যান কার্ড তৈরিতে সমস্যা হওয়ায় নিজের নামেই আপাতত রেখেছেন টাকাটা।
কিন্তু কেন এই দান?
ভাটপাড়া পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের গুড়দহ এলাকায় শালবাগান প্রাথমিক বিদ্যালয়। নেহাতই সাধারণ খেটে খাওয়া পরিবারের ছেলেমেয়েদের প্রাথমিক পাঠ নেওয়ার জায়গা। সহায়িকা না এলে দিদিমনিই খিচুড়ি রাঁধেন আর নামতা পড়ান। ছায়ারানিদেবীর অভিজ্ঞতা, ‘‘আমাদের স্কুলে পড়ার কোনও খরচ নেই। কিন্তু এখানে তো চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। তারপরে হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হতে গেলে টাকা লাগে। অনেক শিক্ষার্থীই পড়া ছেড়ে দেয় শুধুমাত্র টাকার জন্য। আমার ইচ্ছে, এই টাকাটার যে বার্ষিক সুদ হবে, তা দিয়ে যেন ওদের ভর্তির খরচ মেটানো যায়।’’
এখনও মাঝে মধ্যে স্কুলে যান ছায়াদেবী। নিজে যখন প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন, তখন ছিল একটাই টালির ঘর। এখন ঘর পাকা হয়েছে। সংখ্যাও বেড়েছে। পাঁচ কামরার স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা দেড়শোর কিছু বেশি। পুরনো ‘বড়দি’কে পেলে কচিকাঁচারা আনন্দে মেতে ওঠে। নিঃসন্তান ছায়ারানিদেবীর স্বামী মারা যাওয়ার পরে এখন আপন বলতে এরাই।
পুরনো শিক্ষার্থীরা মনে রেখেছে? প্রশ্ন শুনে হাসেন সত্তরোর্ধ্ব দিদিমনি। ঘর ভর্তি জিনিসপত্র দেখিয়ে বলেন, ‘‘এ সব তো ওদেরই দেওয়া। সকলে এখন কত বড় হয়ে গিয়েছে। চাকরি করছে, ব্যবসা করছে। রাস্তায় দেখা হলে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে।’’ স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক প্রশান্তকুমার মারিকের কথায়, ‘‘উনি স্কুলকে অসম্ভব ভালোবাসেন। আদর্শ শিক্ষক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy