জলস্তর বেড়ে ইছামতীর পাড় ছাপিয়ে কৃষিজমিতে ঢুকে পড়েছে জল। ডুবে গিয়েছে ফসলের খেত। বনগাঁর মাধবপুর এলাকায় ছবিটি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক
কয়েক দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে বনগাঁ মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় কৃষি খেতে জল জমে গিয়েছে। এর জেরে ফুল ও আনাজ চাষের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে বলে জানান চাষিরা। ক্ষতি হয়েছে ধান ও কলাই চাষেও।
গত শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত প্রায় চার দিনে বনগাঁ মহকুমায় বৃষ্টি হয়েছে ৩০০ মিলিমিটার। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ মহকুমার তিনটি ব্লকের ৩৮টি পঞ্চায়েত এলাকাতেই কমবেশি চাষের ক্ষতি হয়েছে।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির ফুল চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উঁচু এলাকার জমি থেকে জল দ্রুত বের করা সম্ভব হলেও, নিচু এলাকার জমি থেকে জল বের করা যাচ্ছে না। ফলে গাঁদা, রজনীগন্ধা, দোপাটি, জবা ফুলের ক্ষতি হয়েছে।
গাইঘাটা ব্লকের এক ফুল চাষি দু’বিঘে জমিতে ফুল চাষ করেছিলেন। বৃষ্টিতে দেড় বিঘে জমির ফুল জলের তলায় চলে গিয়েছে। তিনি বলেন, “পুজোর মরসুম শুরু হয়েছে। ফুলের চাহিদা বাড়ছে। এমন সময়ে এই বিপর্যয়!” এলাকার আর এক চাষি দু’বিঘে জমিতে ফুলের চাষ করেছিলেন। তিনি জানান, খেত এখন জলমগ্ন। শ্রমিক লাগিয়ে যা ফুল অবশিষ্ট আছে, তা দ্রুত তুলে ফেলছেন। ফুল চাষিরা জানান, পুজোর আগে ফুল বিক্রি করেই পুজোর কেনা কাটা করেন। এ বার চাষে ক্ষতির জেরে তাঁদের পুজোর আনন্দ অনেকটাই ফিকে হতে চলেছে।
বনগাঁ মহকুমার আনাজ রাজ্য এবং ভিন্ রাজ্যে রফতানি হয়। আনাজ চাষেও বড় ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এলাকার এক চাষির কথায়, “আনাজ খেত এখন জলমগ্ন। বেগুন, পটলের ক্ষতি হয়েছে।” কৃষি দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, মহকুমায় ৩ হাজার হেক্টর জমির আনাজ চাষের ক্ষতি হয়েছে। কলাইয়ের ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার হেক্টর জমির। জমা জলে ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ধান চাষেও।
বনগাঁ মহকুমার সহ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) নারায়ণ দেবনাথ অবশ্য বলেন, “চলতি মরসুমে মহকুমায় ধান চাষ হয়েছিল ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে। ২০ হাজার হেক্টর জমিতে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। তবে বৃষ্টি থামায় এবং জল সরে যাওয়ায় ধান চাষে ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কম হবে।” তিনি আরও বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের বলা হচ্ছে, দ্রুত ফসল-বিমা করিয়ে নেওয়ার জন্য। এই বিমা করাতে চাষিদের কোনও টাকা দিতে হয় না। কৃষি অফিস বা পঞ্চায়েত থেকে এই ফসল বিমা করা যায়।”
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী বলেন, “বনগাঁ মহকুমায় বাগদা এবং গাইঘাটা ব্লকে আনাজ চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষিমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি দেখা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy