Advertisement
০৫ মে ২০২৪

মা-কাকিমাদের তৈরি মিষ্টিরও বিপণন

সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই ধোপদুরস্ত হয়ে মিষ্টির দোকানে লম্বা লাইন। ভাইফোঁটা বলে কথা। একটা সময় ছিল, যখন ভাইফোঁটায় গিলে করা পাঞ্জাবির সঙ্গে কোঁচানো ধুতি আর খড়ের বিড়ে দেওয়া রসগোল্লার হাঁড়ি নিয়ে ভাইয়েদের দেখা মিলত।

—নিজস্ব চিত্র।

—নিজস্ব চিত্র।

বিতান ভট্টাচার্য
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১২
Share: Save:

সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই ধোপদুরস্ত হয়ে মিষ্টির দোকানে লম্বা লাইন। ভাইফোঁটা বলে কথা।

একটা সময় ছিল, যখন ভাইফোঁটায় গিলে করা পাঞ্জাবির সঙ্গে কোঁচানো ধুতি আর খড়ের বিড়ে দেওয়া রসগোল্লার হাঁড়ি নিয়ে ভাইয়েদের দেখা মিলত। এখন পোশাকও যেমন পাঁচমিশালি হয়েছে তেমনি মিষ্টিও। আমের রসগোল্লা, ক্যাটবেরি রসগোল্লা, স্ট্রবেরি রসগোল্লা এ সব তো বছরভর মেলে কিন্তু ভাইফোঁটা স্পেশাল মিষ্টিতে একটা বিশেষত্ব প্রথম এসেছিল সন্দেশে। কড়াপাকের সন্দেশে ‘ভাইফোঁটা’ লেখা। এরপর এক এক করে অমৃতি থেকে গজা সবেতেই ‘ভাইফোঁটা’ লেখার চল হল। ভাইফোঁটার দিন এই মিষ্টির চাহিদাও দেদার। শহর ছাড়িয়ে শহরতলিতে মিষ্টির পরিমার্জন প্রতি বছরই হয়। ভাইফোঁটায় নতুন মিষ্টির উদ্ভাবন নিয়ে প্রতিযোগিতা চলে মফস্বলের মিষ্টির দোকানগুলিতেও।

রসগোল্লা, সন্দেশ, অমৃতি, গজার বৈচিত্র্যের পরে বাড়িতে তৈরি ক্ষীরের নাড়ু, তক্তি বা নারকেলের ছাপ সন্দেশ, তিলের গজাও এ বার মিষ্টির দোকানের বারকোশে জায়গা করে নিয়েছে। বছর কয়েক ধরেই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলেও ভাইফোঁটার মিষ্টিতে পরিবর্তন আনতে বেশ কিছু মিষ্টি বিক্রেতা বিভিন্ন পুজো পার্বণে বাড়িতে তৈরি মিষ্টিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। মিষ্টির দোকানের হালুইকরদের পাশাপাশি বহু মহিলা এই তক্তি, নাড়ু তৈরির কাজ করছেন। শ্যামনগরের নিউ সরকার সুইটস এর মালিক জয়ন্ত সরকার বলেন, ‘‘বাড়িতে তৈরি মিষ্টির চাহিদা বাড়ছে। লক্ষ্মীপুজো, ভাইফোঁটায় এই মিষ্টির ক্রেতা বেশি। তবে এ বার ভাইফোঁটার মিষ্টিতে খাজার বাজার ভাল। পুরীর খাজা, পদ্ম খাজা, ভাইফোঁটা স্পেশাল খাজা আছে। এই মিষ্টিগুলো হালকা আর বেশি দিন থাকে বলে চাহিদাও বেশি।’’

তবে শুধু মিষ্টির দোকানেই ভাইফোঁটা স্পেশাল মিষ্টি আটকে নেই। মুদির দোকানেও লাড্ডুর পাশাপাশি মিলছে, প্লাস্টিক প্যাকেটে নারকেল নাড়ু, হরেক রকম মোয়া আর তক্তি। সঙ্গে রয়েছে ভাইফোঁটা লেখা কাগজের বাক্স। বরাহনগর থেকে বীজপুর পর্যন্ত প্রায় কুড়িটি বড় মিষ্টির দোকানের মালিকেরা একমত যত দিন যাচ্ছে মা-মাসিমাদের হাতে তৈরি মিষ্টি হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই প্রজন্মের মানুষও বিশেষ বিশেষ দিনে সেই সব মিষ্টির কদর করছেন। তাই ঘরে করা মিষ্টির স্বাদ এবং ঐতিহ্য ধরে রাখতে শীতকালে যেমন বিভিন্ন রকম পিঠে-পুলি তৈরিতে জোর দিচ্ছেন দোকানদারেরা তেমনি পুজোর মরসুমে লবঙ্গলতিকা থেকে নাড়ু, তক্তি তৈরিতে এ বার মিষ্টি বিক্রেতাদের পরিবারের প্রবীণ মহিলাদের হাত লাগাতে হচ্ছে। ব্যারাকপুর স্টেশনের কাছে শহরের অন্যতম পুরনো মিষ্টির দোকানের মালিকের মা সবিতা ঘোষ বলেন, ‘‘এক সময়ে পুজোতে নারকেল আর ক্ষীর দিয়ে অনেক মিষ্টি তৈরি করেছি পরিবারের লোকেদের জন্য। এখন আবার নতুন করে তৈরি করতে হচ্ছে সে সব বিক্রি হবে বলে। এই মিষ্টি তৈরিটা মেয়েদের সহজাত ছিল। এখন তা’ও বাজারে বিক্রি হচ্ছে।’’

ভাইফোঁটার মিষ্টির লাইন অবশ্য সোমবার থেকেই পড়েছে দোকানগুলিতে। মঙ্গলবার সকালের ভিড় এড়ানোর জন্যই। সোদপুরের এক মিষ্টি বিক্রেতা তরুণ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ভাইফোঁটার বাজার ভাল। এখন ক্রেতারা অভিনব কিছু থাকলে তার কদর করেন। এই বিশেষ দিনের মিষ্টিতে নারকেল আর ক্ষীরের উপরে আমরাও জোর দিয়েছি।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Homemade sweets Market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE