E-Paper

পরিষেবা চালু রেখেই আন্দোলনে শামিল চিকিৎসকেরা

বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবিউল ইসলাম গায়েন বলেন, ‘‘বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার ১০টি ব্লক হাসপাতালে পরিষেবা স্বাভাবিক আছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২৪ ০৯:০৯
জরুরি বিভাগে ভিড় রোগীদের। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে।

জরুরি বিভাগে ভিড় রোগীদের। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা।

আরজি কর কাণ্ডের বিরুদ্ধে এবং চিকিৎসকদের সার্বিক নিরাপত্তার দাবিতে দেশজুড়ে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। দুই জেলার বড় হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসকেরা পরিষেবা স্বাভাবিক রেখেই প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। আরজি কর ও বিসি রায় হাসপাতালে অচলাবস্থা চলায় ‘রেফার’ও কমেছে বলে জানা গিয়েছে।

বনগাঁ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে শনিবার পরিষেবা ছিল স্বাভাবিক। বহির্বিভাগে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বনগাঁ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের চিকিৎসক গোপাল পোদ্দার বলেন, ‘‘আমরা চিকিৎসকেরা ব্যক্তিগত চেম্বার বন্ধ রেখেছি। কিন্তু হাসপাতালে আমরা সরকারি চিকিৎসক। তাই সরকারি নির্দেশ মেনে পরিষেবা দিচ্ছি।’’ হাবড়া হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে হাসপাতাল থেকে কোনও রোগীকে কলকাতায় রেফার করা হচ্ছে না।

বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবিউল ইসলাম গায়েন বলেন, ‘‘বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার ১০টি ব্লক হাসপাতালে পরিষেবা স্বাভাবিক আছে। বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ওপিডি বন্ধ। তবে জরুরি বিভাগ চালু আছে। রোগীর সংখ্যা কম আছে অন্যান্য দিনের তুলনায়। তবে কাউকে ফেরানো হচ্ছে না।’’ সন্দেশখালি ১ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবব্রত বিশ্বাস বলেন, ‘‘আন্দোলনে আমাদের নৈতিক সমর্থন আছে। তবে এই প্রান্তিক এলাকার মানুষের কাছে সরকারি হাসপাতাল ছাড়া বিকল্প স্বাস্থ্য পরিষেবা কিছু নেই। তাই মানবিক কারণে পরিষেবা চালু রাখা হয়েছে।’’

এ দিন স্বাভাবিকের চেয়ে রোগীর সংখ্যা কম ছিল আমডাঙা গ্রামীণ হাসপাতাল, দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুর হাসপাতাল ও বারাসত জেলা হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, জরুরি পরিষেবা খোলা ছিল। পাশাপাশি, বিভিন্ন বিভাগে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়েছে।

আইএমএ-এর ডাকা কর্মবিরতির জেরে ভাঙড় ২ ব্লকের জিরেনগাছা ব্লক হাসপাতালে রোগী দেখা বন্ধ করেননি চিকিৎসকেরা। জরুরি বিভাগ খোলা ছিল। বহির্বিভাগে ৩৭৮ জন রোগীর চিকিৎসা করা হয়। প্রসূতিদের অস্ত্রোপচার হয়েছে। হাসপাতাল চত্বরে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল। সাধারণত, অন্যান্য সময়ে জিরেনগাছা ব্লক হাসপাতাল থেকে রোগীদের আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে তা বন্ধ আছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। গত কয়েক দিন ধরে ভাঙড়, রাজারহাট ও নিউটাউনের কিছু মানুষ জিরেনগাছা ব্লক হাসপাতালে ভিড় করছেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, সচরাচর দিনে ৪-৫ জন মহিলার প্রসব হত, গত দু’তিন দিনে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮-১০ জন। এ বিষয়ে হাসপাতালের বিএমওএইচ হিরন্ময় বসু বলেন, ‘‘আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসকেরা চিকিৎসা পরিষেবা দিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। তাই এ দিন সমস্ত কাজকর্ম স্বাভাবিক ছিল।’’

তবে ভাঙড় ১ ব্লকের নলমুড়ি ব্লক হাসপাতালে কর্মবিরতির জেরে বহির্বিভাগ বন্ধ ছিল। বহু রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যান। জরুরি বিভাগ অবশ্য খোলা ছিল। এ বিষয়ে নলমুড়ি ব্লক হাসপাতালের বিএমওএইচ মিলন মহান বলেন, ‘‘আইএমএ-র ডাকা কর্মবিরতিতে আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসকেরা যুক্ত ছিলেন। তবে জরুরি বিভাগ চালু রাখা হয়েছিল।’’

ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে এদিন বন্ধ ছিল বহির্বিভাগ। কিন্তু জরুরি বিভাগ খোলা ছিল সকাল থেকেই। বহির্বিভাগে আসা আশঙ্কাজনক রোগীদেরও জরুরি বিভাগে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়েছে।

কাকদ্বীপ মহকুমা এলাকার সাগর, নামখানা ও পাথরপ্রতিমা গ্রামীণ হাসপাতালে বহির্বিভাগে রোগী দেখা বন্ধ থাকলেও জরুরি বিভাগে পরিষেবা চালু ছিল। কাকদ্বীপ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালেও খোলা ছিল জরুরি বিভাগ। এ দিন, নামখানার পাতিবুনিয়া এলাকা থেকে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন বছর পঞ্চান্নের এক মহিলা কবিতা দাস। বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় ফিরে যান। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়ির উঠোনে পড়ে গিয়ে হাতে-পায়ে চোট পেয়েছি। তাই ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম। কর্মবিরতি চলছে জানতাম না।’’ কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু রায় বলেন, ‘‘আউটডোর পরিষেবা বন্ধ থাকলেও জরুরি বিভাগে পর্যাপ্ত ডাক্তার ছিলেন। কারও খুব একটা সমস্যা হয়নি।’’

গত কয়েক দিন ধরেই ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সকাল থেকে হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের গেটের সামনে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সকালের দিকে বন্ধ থাকছে বহির্বিভাগ। যদিও জরুরি বিভাগে পরিষেবার কাজ চলছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

R G Kar Medical College and Hospital

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy