Advertisement
E-Paper

খোরপোষের দাবি এড়াতে স্ত্রীকে খুনের অভিযোগ, গ্রেফতার স্বামী

জঙ্গলের মধ্যে থেকে উদ্ধার হল বধূর আধপোড়া দেহ।বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করেছিলেন তিনি। মাসে হাজার তিনেক টাকা খোরপোষের দাবি করেছিলেন। অভিযোগ, মামলায় হেরে খোরপোষের টাকা যাতে দিতে না হয়, সে কারণেই স্ত্রীকে মেরে দেহ লোপাট করতে চেয়েছিল স্বামী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৫
ছায়মা বিবি।

ছায়মা বিবি।

জঙ্গলের মধ্যে থেকে উদ্ধার হল বধূর আধপোড়া দেহ।

বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করেছিলেন তিনি। মাসে হাজার তিনেক টাকা খোরপোষের দাবি করেছিলেন। অভিযোগ, মামলায় হেরে খোরপোষের টাকা যাতে দিতে না হয়, সে কারণেই স্ত্রীকে মেরে দেহ লোপাট করতে চেয়েছিল স্বামী। পুলিশ গ্রেফতার করেছে তাকে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার মহকুমার নেতড়ার মালঞ্চ বৈদ্যপাড়ার বাসিন্দা ছায়মা বিবির (৩০) সঙ্গে ২০১১ সালে আলাপ হয় বুনোরহাটের বাসিন্দা ইমরান শেখের। ডায়মন্ড হারবারের একটি নার্সিংহোমে আয়ার কাজ করতেন ছায়মা। পেশায় ব্যবসায়ী ইমরানের সঙ্গে দ্রুত তাঁর প্রেম জমে ওঠে। বাড়ির অমতে ইমরানকে বিয়েও করেন ছায়মা।

কিন্তু সংসার সুখের হয়নি। ছায়মা জানতে পারেন, স্বামীর আগের পক্ষের স্ত্রী আছে। সতীনের সঙ্গেই ঘর করতে হবে তাঁকে। বেঁকে বসেন ছায়মা। শুরু হয় অশান্তি। কয়েক মাসেই অতিষ্ঠ হয়ে বাপের বাড়িতে ফিরে আসেন ছায়মা। কিছু দিন আগে ডায়মন্ড হারবার আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা দায়ের করেন।

মাসখানেক ধরে ইমরান ছায়মার বাড়িতে যাতায়াত শুরু করে বলে জানাচ্ছেন ওই তরুণীর আত্মীয়েরা। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য কাকুতি-মিনতি করতে থাকে ইমরান। ছায়মাকে ফোনও করত মাঝে মধ্যে।

পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে ছায়মার দাদা আকবর বৈদ্য দাবি করেছেন, ১৮ জানুয়ারি ইমরান তাদের বাড়িতে আসে। আদালতের বাইরে দু’জনে মিটমাট করে নেবে বলে প্রস্তাব দেয়। স্বামীর নিয়মিত অনুরোধে তত দিনে ছায়মারও মন গলতে শুরু করেছে। ইমরান ছায়মাকে বেড়াতে নিয়ে যেতে চায়। আপত্তি ওঠেনি। ওই দিন সন্ধে সাড়ে ৭টা নাগাদ ছায়মার মেজো বৌদি সর্বাণী বিবিকে ছায়মা ফোন করেন। বলেন, দু’জনে বকখালি বেড়াতে এসেছেন। ভাল সময় কাটাচ্ছেন। পর দিন বাড়ি ফিরবেন।

কিন্তু পর দিন থেকে আর কোনও খোঁজ মেলেনি ছায়মার। সর্বাণী বহুবার ননদকে ফোন করেন। কিন্তু ফোন বেজে বেজে থেমে যায়। এ দিকে ইমরানের ফোন নম্বর ছিল না তাঁদের কাছে। সর্বাণী বলেন, ‘‘অনেক দিন জামাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। ফোন নম্বরও পাচ্ছিলাম না। অনেক খুঁজে পেতে নম্বর জোগাড় করি।’’ ছায়মার আত্মীয়দের দাবি, স্ত্রীর অন্তর্ধান নিয়ে টেলিফোনে কোনও স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেনি ইমরান। কখনও বলে, স্ত্রী আলাদা গাড়ি ধরে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। কখনও বলে, স্ত্রীর খবর সে জানেই না। সন্দেহ বাড়তে থাকে বাড়ির লোকজনের। সোমবার সন্ধ্যায় ডায়মন্ড হারবার থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। ইমরানকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ।

তদন্তকারী অফিসারদের দাবি, একটা সময়ে জেরায় ভেঙে পড়ে বছর পঁয়ত্রিশের ওই যুবক। বলে, স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে মেরে বকখালির জঙ্গলে ফেলে রেখেছে। গ্রেফতার করা হয় তাকে। দেহ উদ্ধারের জন্য ডায়মন্ড হারবারের পুলিশ বকখালির ফেজ্রারগঞ্জ কোস্টাল থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে। বুধবার সকালে সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার ভিতরে জঙ্গলের মধ্যে থেকে আধপোড়া দেহ মেলে ছায়মার। পুলিশ তা উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠায়।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ইমরানের আশঙ্কা ছিল, প্রথম বিয়ের খবর চেপে দ্বিতীয় বিয়ে করায় মামলা সহজেই হেরে যাবে সে। সে ক্ষেত্রে খোরপোষের দাবিও এড়ানো যাবে না। তাই স্ত্রীকে সরিয়ে দিতে ফন্দি আঁটে। কিন্তু স্বচ্ছল ব্যবসায়ী ইমরান সামান্য তিন হাজার টাকা মাসে খোরপোষ বাঁচাতে গিয়ে কেন এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিল, তা ভাবাচ্ছে পুলিশকে। ছায়মাকে খুনের পিছনে অন্য কারও ইন্ধন ছিল কিনা, ইমরানের সঙ্গে ঘটনাস্থলে আর কেউ হাজির ছিল কিনা, সে সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বকখালির যে হোটেলে ছায়মাকে নিয়ে উঠেছিল ইমরান, সেখানকার রেজিস্ট্রার বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। খতিয়ে দেখা হচ্ছে হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ।

আকবর জানিয়েছেন, ২৩ জানুয়ারি আদালতে মামলার শুনানি ছিল। খোরপোষের ফয়সালা হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল ওই দিন। ইমরানকে কেউ বোঝায়, ছায়মা আদালতে গরহাজির থাকলে রায় যাবে ইমরানের পক্ষে। ২৩ তারিখ কোনও পক্ষই অবশ্য হাজির হয়নি আদালতে। ছায়মার আধপোড়া দেহ তখন পড়ে নির্জন জঙ্গলের আড়ালে।

Murder Husband Wife
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy