তীক্ষ্ণ আর্তনাদ। গলায় হাত চাপা দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন বছর চব্বিশের এক তরুণী। রক্তমাখা ছুরি হাতে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড় দিল এক যুবক।
জনতা রে রে করে ধেয়ে যাওয়ার আগেই পগারপার সে।
বুধবার বেলা তখন ১টা নাগাদ হাবরা বাজারে শিববাড়ি গলি মুখের এই ঘটনায় নিমেষে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর যায় থানায়। স্থানীয় মানুষজন রক্তাক্ত তরুণীকে নিয়ে যান হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয়েছে আরজিকর হাসপাতালে। লিটন বিশ্বাস নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে মহিলার পরিবার।
ওই যুবকের সঙ্গে ২০১২ সালে ওই তরুণীর রেজিস্ট্রি বিয়ে হয়েছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। দীর্ঘ দিন এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তাঁর। কিন্তু ক্রমশ দূরত্ব বাড়ে। ২০১৫ সালে অন্য এক যুবককে মালাবদল করে বিয়ে করেন ওই তরুণী। লিটনের ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, বহুবার মেয়েটিকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, বিবাহ বিচ্ছেদ না করায় আইনত লিটনই এখনও তাঁর স্বামী। কিন্তু তরুণী সে কথায় কান দেননি। উল্টে নানা সময়ে তিনি লিটনের থেকে টাকা-পয়সা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ ওই যুবকের পরিবার-পরিজনের।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, পুরনো আক্রোশেই স্ত্রীকে খুনের চেষ্টা করেছিল লিটন। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মহিলা আপাতত সুস্থ আছেন। তাঁর বয়ান লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। অভিযুক্ত যুবকের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।’’
এ দিন দ্বিতীয় স্বামীর (আইনত না হলেও) মাকে নিয়ে বাজারে কার্তিক পুজোর কেনাকাটা করতে এসেছিলেন ওই বধূ। ব্যাগ হাতে আগে আগে হাঁটছিলেন শাশুড়ি। পিছনে ছিলেন বৌমা। আশপাশে তখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে বহু লোক। পাশেই যশোর রোড দিয়ে হু হু করে ছুটে যাচ্ছে যানবাহন।
ওই ভিড়ের মধ্যেই হঠাৎ মহিলার চিৎকার শুনে থমকে যান আশপাশের লোকজন। দেখা যায়, এক যুবক হাতে রক্তমাখা ধারাল অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বাজারে। অনেকে কেনাকাটা না সেরেঅ দ্রুত বাড়ির পথ ধরেন।
দিন দুপুরে বাজার এলাকার এই ঘটনায় এলাকার মানুষ সন্ত্রস্ত। তাঁদের কারও কারও কথায়, ‘‘লোকজন দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। যখন তখন যেখানে সেখানে আক্রমণ করার সাহস পাচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসনকে ভয়ই করছে না কেউ।’’ ব্যবসায়ীরা অনেকে মনে করেন, দিনেও পুলিশি টহল আরও বাড়ানো উচিত।
স্থানীয় বাসিন্দা তথা বিজেপি নেতা বিপ্লব হালদার বলেন, ‘‘হাবরার আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, এ দিনের ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। পুলিশ শুধু মন্ত্রীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যস্ত।’’ পুরপ্রধান তৃণমূলের নীলিমেশ দাস অবশ্য বলেন, ‘‘এটা বিচ্ছিন্ন একটা ঘটনা। হাবরার আইন-শৃঙ্খলা যথেষ্ট ভাল। পুলিশ-প্রশাসন নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছে। মহিলার উপরে হামলার ঘটনায় পুলিশ দোষীকে অবশ্যই গ্রেফতার করবে।’
কিন্তু ভরা বাজারের মধ্যে ওই যুবক পালানোর সুযোগ পেলেন কী করে? প্রত্যক্ষদর্শীরা অনেকে জানিয়েছেন, ঘটনাটি এত দ্রুত ঘটে যায়, কিছু বুঝে ওঠার আগেই পালায় ওই যুবক।