Advertisement
০২ ডিসেম্বর ২০২৪
Azad Hind Fauz

Independence Day 2022: কথা না রাখার দিন, মনে হয় লক্ষ্মীদের

জরাজীর্ণ একটি ঘরে থাকেন দেগঙ্গার বেড়াচাঁপা চারাবাগানের বাসিন্দা প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী কৃষ্ণমোহন শীলের স্ত্রী-সন্তানেরা।

অসহায়: স্বামীর শংসাপত্র এখনও আগলে রেখেছেন লক্ষ্মী। নিজস্ব চিত্র

অসহায়: স্বামীর শংসাপত্র এখনও আগলে রেখেছেন লক্ষ্মী। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২২ ১০:০০
Share: Save:

দু’টো ওষুধ কিনতে গেলে হাত কাঁপে। ভাত-ডাল জোগাড় করতে ভাঁজ পড়ে কপালে।

এ ভাবেই দিন কাটছে নেতাজির তৈরি আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনানীর পরিবারের। জরাজীর্ণ একটি ঘরে থাকেন দেগঙ্গার বেড়াচাঁপা চারাবাগানের বাসিন্দা প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী কৃষ্ণমোহন শীলের স্ত্রী-সন্তানেরা। তাঁরা জানালেন, ১৫ অগস্ট সচরাচর তাঁদের কথা মনে পড়ে নেতা, প্রশাসনের কর্তাদের। নানা রকম প্রতিশ্রুতিও মিলেছে এর আগে। তবে দিনটা কেটে গেলেও তাঁদের জীবনের আঁধার কাটে না।

কৃষ্ণমোহনের ছিয়াশি বছরের স্ত্রী লক্ষ্মীরানি বলেন, ‘‘স্বাধীনতা পেয়েছি ঠিকই, কিন্তু দেশ আজও স্বাধীন হয়েছে বলে তো মনে হয় না। আমাদের মতো বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীর পরিবার লাঞ্ছিত, অপমানিত হয়ে দিন কাটাচ্ছেন।’’

বাড়িতে গিয়ে দেখে গেল, মাটির আঙিনায় প্লাস্টিকের ছাউনির নীচে উনুন পাতা। সেখানেই চলছে রান্নাবান্না। পরনে ছেঁড়া শাড়ি, উস্কোখুস্কো চুলে লক্ষ্মীরানি বসে সেখানেই। ছেলে শঙ্কর, মেয়ে সুধাও আছেন সেখানে। টাকার অভাবে ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিতে পারেননি বলে জানালেন লক্ষ্মী। ছেলে বিদ্যুৎ দফতরের অস্থায়ী কর্মী। মেয়ে গৃহসহায়িকার কাজ করেন। লক্ষ্মী বার্ধক্যভাতার টাকাটুকু পেয়েছেন অবশ্য। ।

স্বামীর কথা উঠতেই দু’চোখের জল কাপড়ের খুঁটো দিয়ে মোছেন তিনি। বলেন, ‘‘আমার স্বামীর আদি বাড়ি ছিল তৎকালীন বর্মার রেঙ্গুনে। সে সময়েই সাঁইত্রিশ বছর বয়সে উনি আজাদ হিন্দ বাহিনীতে যোগ দেন। স্বামীর কাছে শুনেছি, রেঙ্গুনে থাকাকালীন একদিন ইংরেজদের সঙ্গে গুলি বিনিময় হয়েছিল বাহিনীর। একটি গুলি এসে লাগে ওঁর কাঁধে। সতীর্থেরা তাঁকে চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেন। তারপর চিকিৎসার জন্য আনা হয় কলকাতায়। তবে কাঁধে গুলি লাগায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। পরে জেল খাটতে হয়েছিল।’’

১৯৬৪ সালে কৃষ্ণমোহন রেঙ্গুন থেকে এ দেশে আশ্রয় নেন। দেগঙ্গা বেড়াচাঁপা চারাবাগান টালির ছাউনি আর দরমার বেড়া দিয়ে ঘর তৈরি করেন। বিয়ে করেছিলেন মধ্যমগ্রামের মেয়ে লক্ষ্মীকে।

লক্ষ্মী জানান, স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ার পরে বহু সরকারি দফতরে ঘুরেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে স্বামীর পেনশনের আজাদ হিন্দ বাহিনীতে থাকার শংসাপত্র নিয়েও ঘুরেছেন। প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই মেলেনি বলে জানালেন বৃদ্ধা।

১৯৮৯ সালে রোগে ভুগে মারা যান স্বামী। টাকার অভাবে উপযুক্ত চিকিৎসাটুকু হয়নি। এখনও স্বামীর রেখে যাওয়া নথিপত্র আগলে রেখেছেন বৃদ্ধা।

স্থানীয় পঞ্চায়েতের তরফে জানান হয়, আমপানের পরে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল পরিবারটিকে।

দেগঙ্গা ব্লক তৃণমূল সভাপতি আনিসুর রহমান বলেন, ‘‘স্বাধীনতা সংগ্রামীরা আমাদের গর্ব। তাঁদের পরিবারের সার্বিক দায়িত্ব নেবে ব্লক তৃণমূল। পরিবারটিকে স্বাধীনতা দিবসের দিন সংবর্ধনা দেওয়া হবে।’’

বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক তরুণকান্তি ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূল সব বিষয় নিয়ে রাজনীতি করে। এক বছর আগে ওই স্বাধীনতা সংগ্রামীর পরিবারকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, ঘর বানিয়ে দেওয়া হবে। সেই প্রতিশ্রুতি রাখা হয়নি। ফের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে।’’

দেগঙ্গা ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি মিয়ারাজ বৈদ্য বলেন, ‘‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। একজন স্বাধীনতা সংগ্রামীর পরিবার কার্যত অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। পরিবাটির পাশে থেকে সার্বিক সহযোগিতা করব।’’

এ সব কথা শুনে লক্ষ্মীর ছেলে শঙ্কর ম্লান হাসেন। বলেন, ‘‘এ সব কথা অনেক শুনেছি। মাঝে মধ্যে কিছু ত্রাণ, কিছু সাহায্য মিললেও আর কিছু তো কখনও হয়নি।’’ লক্ষ্মী বলেন, ‘‘আর কিছু এখন আশা করি না কারও থেকে। অনেক শুনেছি এ সব কথা।’’

স্বাধীনতার অমৃতের স্বাদ থেকে বঞ্চিতই থেকে যায় সংগ্রামীর পরিবার।

অন্য বিষয়গুলি:

Azad Hind Fauz Netaji Netaji Subhas Chandra Bose independence day 75th Independence Day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy