Advertisement
E-Paper

পুলিশের তল্লাশিতেও অভিযুক্ত অধরা দেগঙ্গায়

ধর্ষণে অভিযুক্ত এক প্রভাবশালী ব্যক্তিকে থানার সামনে দেখা গেলেও তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না, নির্যাতিতার এই অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হতে নড়েচড়ে বসল দেগঙ্গা থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত রবিউল হককে ধরতে তার বেড়াচাঁপা এবং পার্ক সার্কাসের বাড়িতে তল্লাশি করা হয়। এখনও অবশ্য অধরা রবিউল। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। অভিযুক্ত পলাতক।’’

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৪
নিগৃহীতা মহিলা।— নিজস্ব চিত্র।

নিগৃহীতা মহিলা।— নিজস্ব চিত্র।

ধর্ষণে অভিযুক্ত এক প্রভাবশালী ব্যক্তিকে থানার সামনে দেখা গেলেও তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না, নির্যাতিতার এই অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হতে নড়েচড়ে বসল দেগঙ্গা থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত রবিউল হককে ধরতে তার বেড়াচাঁপা এবং পার্ক সার্কাসের বাড়িতে তল্লাশি করা হয়। এখনও অবশ্য অধরা রবিউল। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। অভিযুক্ত পলাতক।’’

গত বছর জানুয়ারিতে রবিউলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ আনেন সম্পর্কে তাঁরই আত্মীয়া ওই নির্যাতিতা। তারপর থেকে তিনি বারবার থানায় দোষীকে গ্রেফতারের আবেদন সত্ত্বেও পুলিশ আগাগোড়াই রবিউলকে ‘পলাতক’ বলেছে, দাবি ওই মহিলার। গত রবিবার থানা চত্বরে পুলিশের সঙ্গে রবিউলকে দেখেন ওই মহিলা। থানার ভিতরে তার সঙ্গীদের খোশগল্প করতেও দেখেন তিনি। মহিলা সোজা ওসির ঘরে গিয়ে দাবি করেন, অভিযুক্তকে ধরতে হবে। থানার ওসি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের আশ্বাস দিলেও কাজে কিছুই না করায় বুধবার অভিযোগকারিণী সারাদিন অনশন করে অবস্থান করেন থানায়। তাঁর দাবি ছিল, ‘‘হয় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করুন, না হলে আমাকে।’’ শেষ অবধি অবশ্য রাত ৯টা নাগাদ মহিলা ফিরে আসেন।

রবিউল যে রবিবার থানা চত্বরে ছিল, এবং তার ভাই থানার ভিতরে পুলিশের সঙ্গে কথা বলছিল, এ কথাও সরাসরি স্বীকার বা অস্বীকার করছে না পুলিশ। এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, ‘‘রবিউল থানা চত্বরে ছিল, সেটা ওই মহিলার অভিযোগ। সেটাও আমরা খতিয়ে দেখছি।’’

সংবাদমাধ্যমে নির্যাতিতার অবস্থানের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর পুলিশমহলে সাড়া পড়ে গেলেও, এদিনও রবিউল অধরা রয়ে গেল। পুলিশ কেন ১৪ মাসেও নড়েচড়ে বসেনি, কেন ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হয়নি, তার ব্যাখ্যাও দিতে পারেননি দফতরের কর্তারা। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, অভিযোগকারিণীর বক্তব্য কিছু অসঙ্গতি ছিল বলেই চটজলদি কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।

কিন্তু সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন হল, অভিযোগ মিথ্যা হলে বা ভুল প্রমাণ হলে মামলাটি বাতিল করারও আইনি প্রক্রিয়া (এফআরটি) আছে। তা-ও তো করেনি পুলিশ। ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির মতো অভিযোগের ক্ষেত্রে পুলিশকে সংবেদনশীল ও তৎপর হতে হবে, এই নির্দেশ দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। তারপরেও কেন বেড়াচাঁপার ওই মহিলার অভিযোগের তদন্ত ১৪ মাসেও শেষ হল না?

পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন আছে আরও। বারাসত আদালতে অভিযোগকারিণী গোপন জবানবন্দি দিলেও তাঁর কোনও রকম ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়নি। কেন? বৃহস্পতিবার নিজের বাড়িতে বসে বছর সাঁইত্রিশের অভিযোগকারিণী বলেন, ‘‘দেগঙ্গা থানায় মামলার তদন্তকারী অফিসার আমাকে ভুল বুঝিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ডাক্তারি পরীক্ষা করানো আরও এক বার ধর্ষণেরই মতো বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা হবে। তার থেকে ওই পরীক্ষা না করানোই ভাল।’’

জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য দাবি করেছেন, ওই মহিলা নিজেই ডাক্তারি পরীক্ষায় রাজি হননি। এ ক্ষেত্রে থানায় মহিলার একটি লিখিত বয়ানও লিপিবদ্ধ করা হয় বলে জানানো হয়েছে। সেখানে মহিলা জানাচ্ছেন, অসুস্থ থাকায় তিনি ডাক্তারি পরীক্ষা করাবেন না। ওই বয়ানের নীচে মহিলার সই আছে। এ ধরনের একটি বয়ান যে পুলিশ তাঁকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছিল, সে কথা মানছেন অভিযোগকারিণী।

আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে জানি না। তবে অনেক সময়ে ধর্ষণের ঘটনা লঘু করে দেখাতে পুলিশ মেডিক্যাল পরীক্ষার গুরুত্ব নির্যাতিতার কাছে ঠিকমতো ব্যাখ্যা করে না, পরীক্ষা না করানোর পরামর্শ দেয়।’’

রবিউলদের সঙ্গে মহিলা ও তাঁর পরিবারের পুরনো বিবাদের কথা গ্রামের লোকের অজানা নয়। রবিউল এবং ওই মহিলা সপরিবার একই শরিকি বাড়িতে থাকেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর শরিকি জমিতে একটি আলমারি কারখানা নির্মাণ করতে শুরু করেছিলেন ওই মহিলা। তাতে আপত্তি জানিয়ে থানার দ্বারস্থ হন রবিউলরা। তার জেরেই ২৬ জানুয়ারি তাঁর স্বামীর নামে ধর্ষণের চেষ্টার মিথ্যা অভিযোগ করেছেন ওই মহিলা, দাবি অভিযুক্তের স্ত্রীর।

অভিযোগকারিণীর অবশ্য দাবি, বহু দিন থেকেই তাঁর উপরে কুনজর ছিল দেওরের। এর সঙ্গে সম্পত্তি-সংক্রান্ত কোনও বিবাদ নেই। মহিলার কথায়, ‘‘আমাদের সচ্ছল পরিবার। আমি ব্যবসা করি। স্বামী সরকারি চাকুরে। আজ বাদে কাল মেয়ের বিয়ে দিতে হবে। টাকার জন্য এমন কাণ্ড করব কেন?’’ তাঁর কথায়, ‘‘কোন পরিস্থতিতে এক জন মহিলা এমন অভিযোগ করেন, তা সকলের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।’’

deganga rape accused deganga rape victim deganga police station jayanta narayan chattopadhyay arunaksha bhattacharya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy