Advertisement
E-Paper

ভাষা উৎসবে শুনশান ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ 

গত বছর ৫ অগস্ট বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই অশান্ত বাংলাদেশ। শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।

ভাষা দিবসের সকালে এমনই নিস্তরঙ্গ পেট্রাপোল । 

ভাষা দিবসের সকালে এমনই নিস্তরঙ্গ পেট্রাপোল ।  নিজস্ব চিত্র।

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:৩২
Share
Save

বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতিতে সীমান্তের ও পারে এ বার ‘জৌলুষহীন’ আন্তর্জাতিক ভাষাদিবস। এ দেশের সীমান্তেও উৎসব ‘ম্রিয়মাণ।’ দু’দেশের মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও আবেগঘন মেলবন্ধনের দৃশ্য পুরোপুরি উধাও একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে।

গত বছর ৫ অগস্ট বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই অশান্ত বাংলাদেশ। শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। দেশজুড়ে লুটপাট, ভাঙচুর, হামলা, অগ্নিসংযোগের একাধিক ঘটনা ঘটছে। এখনও তার উপরে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ আনতে পারেনি সে দেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার। সংখ্যালঘু নিপীড়নের বহু ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। বাংলাদেশের মাটি থেকে ক্রমাগত ‘ভারত-বিরোধী মন্তব্য’ করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তের ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ যৌথ ভাষা উৎসবের আয়োজন হল না এই পরিস্থিতিতে। শুক্রবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, শুনশান রাস্তায় গার্ডরেল ফেলে আটকে দিয়েছে বিএসএফ। কুকুর নিয়ে তল্লাশি করছেন জওয়ানেরা। যৌথ কর্মসূচি হবে না, তা জানতেন না অনেকে। দূরদূরান্ত থেকে চলে এসেছিলেন তাঁরা। সকলকে ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ যাওয়ার আগেই আটকে দেওয়া হয়।

বনগাঁর পুরপ্রধান গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘বাংলাদেশের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির কারণে আমরা এ বার নো ম্যানস ল্যান্ডে দু’দেশের যৌথ উৎসব বাতিল করছি। বনগাঁ শহরে ভাষা উৎসব পালন করা হয়েছে।’’ ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তথা বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ প্রসেনজিৎ ঘোষও সে কথা জানান।

শিক্ষক পার্থসারথি দে সীমান্তে যৌথ ভাষা উৎসব শুরুর অন্যতম কাণ্ডারী ছিলেন। এ দিন পার্থ বলেন, ‘‘যৌথ ভাষা উৎসব না হওয়াটা আমাদের কাছে যন্ত্রণার।’’

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বনগাঁ পুরসভা, ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত এবং বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতি একত্রে এ দেশের উৎসবের আয়োজন করত। ২১ ফেব্রুয়ারি নো ম্যানস ল্যান্ডে রফিক, সালাম, বরকত, সফিউর, জব্বারদের শহিদ বেদিতে মাল্যদান হত। দু’দেশের অতিথিদের এবং বিশিষ্ট মানুষজনের মধ্যে মিষ্টি ও ফুলের স্তবক বিলি ছাড়াও সৌজন্য ও ভাব বিনিময়ের বহু আন্তরিক দৃ্শ্য চোখে পড়ত। একে অন্যকে আলিঙ্গনের মাধ্যমে বহু আবেগবিহ্বল মুহূর্ত তৈরি হত। দু’দেশের সম্পর্ক, বাংলা ভাষার প্রতি ভালবাসা নিয়ে বক্তৃতা করতেন অনেকে। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’— এ গানের মূর্ছনায় ভরে উঠত এলাকা। বহু মানুষ আসতেন। কাঁটাতারের দু’পারে দাঁড়িয়ে দু’দেশের মধ্যে উষ্ণতা বিনিময়ের সাক্ষী থাকতেন। পেট্রাপোলে-বেনাপোল সীমান্তে শেখ হাসিনা, মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানো হত।

সে সবের লেশমাত্র ছিল না এ দিন। তবে ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত এবং বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতি বিএসএফের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সীমান্তে ভাষা উৎসব পালন করেছে। ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ যৌথ কর্মসূচি দেখতে আসা মানুষ এ দিন সীমান্তের সেই অনুষ্ঠানে শামিল হয়েছিলেন। ‘নো ম্যানস ল্যান্ডের’ কাছে অস্থায়ী শহিদ বেদি তৈরি করে ভাষা শহিদদের স্মরণ করা হয়েছে।

অনেক বছর আগে ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিতে কিছুক্ষণের জন্য দু’দেশের সীমান্ত খুলে দেওয়া হত। অবাধে দু’দেশের মধ্যে যাতায়াত করতেন বাংলা ভাষাভাষি মানুষ। ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ যৌথ মঞ্চ হত। দু’দেশের শিল্পীরা সেখানে অনুষ্ঠান করতেন। দু’দেশের অতিথিরা মঞ্চে থাকতেন। যৌথ রক্তদান শিবির হত। নিরাপত্তার কারণে কয়েক বছর আগে থেকে তা আর হয় না। এখন ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ দু’দেশের অতিথি এবং বিশিষ্ট মানুষজনের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান হত। এ বার তা-ও বন্ধ।

যাঁরা এসেছিলেন এ দিন, তাঁদের মুখে বার বার শোনা গেল একটাই কথা, ‘‘কবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, কবে আবার শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন সে দেশের সাধারণ মানুষ!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Petrapole

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}