হাবড়ায় বিধায়ক হওয়ার পর এলাকাকে ‘অপরাধশূন্য’ (ক্রাইম জ়িরো) করেছেন বলে দাবি করলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বালু)। শনিবার বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে কর্মসূচিতে যোগ দিতে এলাকায় এসেছিলেন তিনি। সেখানেই বলেন, ‘‘আমি যখন হাবড়ায় এসেছিলাম, শপথ নিয়েছিলাম হাবড়া ক্রাইম জ়িরো করব। সেটা করেছি।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমি যখন বাইরে ছিলাম, দু’একটা মোবাইল ছিনতাই হয়েছিল। পুলিশকে বলার সঙ্গে সঙ্গে তারা মোবাইল উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দেয়।’’ বালুর দাবি, এখানকার মহিলারা রাতে সোনার গয়না পরে একা বিয়ে যেতে পারেন, ফিরতে পারেন। জ্যোতিপ্রিয় জানান, তাঁর কাছে মা-বোনেদের ‘সম্মান রক্ষা’ হল অগ্রাধিকার।
এ দিন স্কুলের ছাত্রীদের সঙ্গে বেশ কিছু সময় কাটান বালু। তাদের সবুজসাথীর সাইকেল বিলি করেন। বলেন, ‘‘হাবড়া বিডিও অফিস, পুরসভা এবং থানায় মেয়েদের জন্য হেল্প ডেস্ক খোলা হচ্ছে। নির্দিষ্ট ফোন নম্বর থাকবে। সেখানে মেয়েরা যে কোনও অভিযোগ জানাতে পারবেন। কোনও ছাত্রী যদি জানায়, বই-খাতা কিনতে পারছে না, তা হলে কিনে দেওয়া হবে। হাবড়ায় একটি মেয়েকেও স্কুলছুট রাখা হবে না। পুলিশকে বলেছি, মহিলাদের জন্য অতন্দ্র পাহারায় থাকতে হবে।’’
হাবড়ার অনেকে মানুষই মানছেন, ২০১১ সালে জ্যোতিপ্রিয় বিধায়ক হয়ে আসার পরে বড়সড় অপরাধ অনেকাংশে কমেছে।
একটা সময় ছিল, হাবড়া জুড়ে চুরি-ছিনতাই-ডাকাতি, খুন লেগেই থাকত। রক্তদান শিবিরে দুষ্কৃতীরা কংগ্রেস নেতা বাপি চৌধুরী এবং এক তৃণমূল ছাত্র পরিষদ কর্মীকে বোমা-গুলি ছুড়ে খুন করে। এক ব্যবসায়ীর সিন্দুক দুষ্কৃতীরা লুট করে নিয়ে চলে গিয়েছিল। ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে থাকতেন। সোনার দোকানে, বাড়িতে ডাকাতি হত। সে সব এখন অনেকাংশেই কমেছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
তবে হাবড়া ‘অপরাধ শূন্য’ করা নিয়ে বিধায়কের মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে বিরোধীরা সিপিএমের হাবড়া শহর (দক্ষিণ) এরিয়া কমিটির সম্পাদক প্রসেনজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘হাবড়ায় অপরাধ হচ্ছে কিনা, তা এখানকার মানুষ দেখতে পাচ্ছেন।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘আসলে উনি তো (জ্যোতিপ্রিয়) অনেক দিন জেলে ছিলেন, সদ্য বেরিয়েছেন। ফলে কিছুটা চাপের মধ্যে আছেন। তাই সংযত আচরণ করছেন। সে কারণেই বোধ হয় অপরাধ এখন একটু কম হচ্ছে!’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘রাজ্যের সর্বত্র অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে তৃণমূলই জড়িত।’’ হাবড়া শহরের বাসিন্দা, বিজেপি নেতা বিপ্লব হালদারের কথায়, ‘‘উনি (জ্যোতিপ্রিয়) নিজেই একটা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত, যা বিচারাধীন। হাবড়া অপরাধীদের মুক্ত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। অপরাধীদের মদতদাতা তৃণমূলের একাংশ এবং উনি নিজে।’’
হাবড়ার তৃণমূল নেতা তথা পুরপ্রধান নারায়ণ সাহা বলেন, ‘‘হাবড়াকে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে এসেছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বিধায়ক হওয়ার আগে হাবড়ায় খুনখারাপি, বোমাবাজির ঘটনা ঘটত। এখন ওই সব ঘটনা ঘটে না, মস্তানরাজ নেই। পুলিশ-প্রশাসনকে দিয়ে জ্যোতিপ্রিয় সে সব বন্ধ করিয়েছেন।’’
পুলিশেরও দাবি, বিধায়ক ঠিকই বলেছেন। হাবড়া শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন ভাল। আরও ভাল করার চেষ্টা হচ্ছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)