E-Paper

জলে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে সাফল্য, মেয়াদ বাড়ছে ‘কবচ’ প্রকল্পের

সুন্দরবন ও সংলগ্ন এলাকাগুলিতে প্রতিবছরই জলে ডুবে মৃত্যু হয় বহু শিশুর। বেশ কয়েক বছর আগে সুন্দরবন এলাকায় জলে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে কাজ শুরু করে শিশুদের নিয়ে কাজ করা ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

সমীরণ দাস 

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:০৩

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

জলে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধে বছরখানেক আগে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামে ‘কবচ’ নামে একটি কর্মসূচি শুরু করে এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এক বছরের জন্য পরীক্ষামূলক ভাবেই শুরু হয়েছিল সেই কর্মসূচি। সম্প্রতি এক বছর পূর্ণ করেছে ‘কবচ’। সংস্থার দাবি, ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের সুফল মিলতে শুরু করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফেও প্রকল্পের স্বীকৃতি মিলেছে। তার জেরেই জলে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধের লক্ষ্যে আরও এক বছর ‘কবচ’ প্রকল্প চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওই সংস্থা।

সুন্দরবন ও সংলগ্ন এলাকাগুলিতে প্রতিবছরই জলে ডুবে মৃত্যু হয় বহু শিশুর। বেশ কয়েক বছর আগে সুন্দরবন এলাকায় জলে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে কাজ শুরু করে শিশুদের নিয়ে কাজ করা ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রাথমিক ভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হয়েছিল। বাড়ির আশেপাশে পুকুর থাকলে, তা ঘিরে দিতে বলা হয়। বাচ্চাদের সব সময়ে চোখে চোখে রাখা, একটু বড় হলে সাঁতার শোখানোর পরামর্শও দেওয়া হয়।

২০২৩ সাল নাগাদ সুন্দরবনের প্রত্যন্ত মৈপিঠ কোস্টাল থানার দু’টি গ্রামে পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু হয় ‘কবচ’ প্রকল্প। এই প্রকল্পে শিশুদের দিনের একটা সময়ে এক ছাদের নীচে এনে দেখাশোনার ব্যবস্থা করা হয়। সংস্থা সূত্রের খবর, যে সকল শিশুর বাবা-মা বাইরে কাজে ব্যস্ত থাকেন বা বাড়িতে দেখাশোনার লোক কম এবং বাড়ির কাছাকাছি পুকুর রয়েছে, তাদের ‘কবচ’ কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। গ্রামেরই কিছু মহিলাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত ওই শিশুদের দেখাশোনা করা হয়। প্রাথমিক পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়ারও ব্যবস্থা হয়। দু’টি গ্রামের দু’টি কবচ কেন্দ্রে ছ’মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সি প্রায় চল্লিশ জন শিশুকে এ ভাবেই দেখাশোনা চলেছে গত এক বছর।

সংস্থার তরফে সুজয় রায় বলেন, “জলে ডোবা প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে সব নির্দেশ পালনের কথা বলেছে, সেই সব মেনেই এই কবচ কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। এর ফলও মিলেছে। গত এক বছরে এই অঞ্চলে কার্যত কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। এই সাফল্যের জেরেই প্রকল্পের সময়সীমা বাড়াতে চেয়েছে আইসিএমআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ)। সেই মতো আপাতত আরও এক বছর এই প্রকল্প চলবে। স্থানীয় পঞ্চায়েতগুলিও চাইছে নিজেদের তহবিল থেকে এ ধরনের কাজ চালিয়ে যেতে।”

সংস্থার উদ্যোগেই ‘কবচ’ কেন্দ্রগুলির কাছে অবস্থিত পুকুরে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি হয়েছে সুইমিং পুল। সংস্থার দাবি, জলে ডোবা প্রতিরোধে শিশুকে দ্রুত সাঁতার শেখানো জরুরি। সেই লক্ষেই এই পুকুর সুইমিং পুল তৈরি করা হয়েছে। সাধারণত পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত একটি শিশু ‘কবচ’ কেন্দ্রে থাকবে। তারপর সাঁতার শিখিয়ে তাকে ছাড়া হবে।

সুজয় বলেন, “চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে শিশু মৃত্যুর অনেক কারণ কমেছে। বিভিন্ন মারণ রোগের প্রতিষেধক তৈরি হয়েছে। তবে তারপরেও শিশুমৃত্যুর কয়েকটি কারণ আমাদের চোখের আড়ালে থাকা যাচ্ছে। তারই একটি এই জলে ডুবে মৃত্যু। আমরা চেষ্টা করছি এই মৃত্যুর হারকে কমিয়ে আনার। আশা করছি, আগামী দিনে সরকারের তরফেও বিভিন্ন এলাকায় এই মডেল অনুসরণ করা হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sundarbans Drowning Death

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy