Advertisement
E-Paper

‘ছেলেধরা’ গুজবই ছিল, ক্রমে বুঝতে শুরু করেছেন মানুষ

দিন কয়েক আগের ঘটনা। বেলা তখন দেড়টা। গোপালনগরের কানসোনা-খোট্টাপাড়া প্রাথমিক স্কুলে প্রায় সাড়ে চারশো পড়ুয়ার বেশির ভাগই অনুপস্থিত।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:১৪

দিন কয়েক আগের ঘটনা। বেলা তখন দেড়টা। গোপালনগরের কানসোনা-খোট্টাপাড়া প্রাথমিক স্কুলে প্রায় সাড়ে চারশো পড়ুয়ার বেশির ভাগই অনুপস্থিত।

গ্রামের অনেক বাড়ির বারান্দায় গ্রিল বসানো হচ্ছে। কারণ জিজ্ঞাসা করাতে জানা গেল, দুষ্কৃতীরা নাকি বাড়িতে ডাকাতি করতে আসতে পারে। নিরাপত্তার জন্যই এই ব্যবস্থা।

সন্ধের পরে মহিলারা বাড়ির বাইরে পা রাখতে সাহস পাচ্ছিলেন না। গুজব রটেছিল, মুখে কালো কাপড় পরা দুষ্কৃতীরা মহিলাদের নির্যাতন করছে।

পরিস্থিতি ক’দিন আগে এমন থাকলেও ধীরে ধীরে তা শুধরোচ্ছে। স্কুলের শিক্ষক শীতল দেবনাথ বলেন, ‘‘আমরা অভিভাবকদের নিয়ম করে বোঝাচ্ছি, ছেলেধরার নিয়ে স্রেফ গুজব রটেছিল।’’ শিক্ষকদের অনেকে জানালেন, গ্রামবাসীদের ভরসা ধীরে ধীরে ফিরছে। ছেলেমেয়েরা আবার স্কুলমুখো হচ্ছে। তবে বাবা-মায়েরা বাড়তি নজর রাখছেন সন্তানদের উপরে।

কী ভাবছেন মহিলারা? সুধা প্রধান নামে এক প্রৌঢ়ার কথায়, ‘‘আমি এখনও সন্ধ্যার পরে বাড়ির বাইরে যেতে সাহস পাচ্ছি না। তবে অনেকে বলছে, সব নাকি গুজব ছিল। আর কয়েকটা দিন দেখে নিই।’’

গুজব ছড়িয়ে পড়ার পরে নানা জায়গায় সাধারণ মানুষ রাত পাহারার ব্যবস্থা করেছিলেন। তবে কিছুই দেখতে পাননি তাঁরা। ক্রমশ রাত পাহারার দল পাতলা হচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসন লাগাতার প্রচার চালাচ্ছে গুজবের বিরুদ্ধে। তাতে কিছুটা কাজ দিচ্ছে, জানালেন মহকুমার এক পুলিশ কর্তা।

বিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র নাসিরুদ্দিন বিশ্বাস ও সিভিক ভলান্টিয়ার রবিউল হোসেন বলেন, ‘‘রাত পাহারা দিয়েও আমাদের এখানে কোনও দুষ্কৃতীর দেখা মেলেনি। এখন এই কথাগুলি গুজব বলেই মনে হচ্ছে।’’ তাঁরা জানান, অন্য গ্রাম থেকে লোকে গুজব শুনে এসে নিজেদের গ্রামেও রটিয়ে দিয়েছেন। এ ভাবেই গুজব ছড়াচ্ছে।

সম্প্রতি বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল কানসোনা গ্রামে। গুজব রটেছিল, নদিয়ার রসুসল্লাপুর গ্রামে ভয়াবহ ডাকাতির হয়েছে। মুখ ঢাকা দুষ্কৃতীরা ডাকাতি করতে এসে মহিলাদের উপরেও নির্যাতন করেছে। গুজব রটে জঙ্গিরা হামলা করতে পারে। স্থানীয় সন্তোষপুরে নাকি দুষ্কৃতীদের গাড়ি করে যেতেও দেখা গিয়েছে। শিশু পাচারকারীরাও রাস্তায় ঘুরে বেরাচ্ছে। কিন্তু তা কোনওটাই যে সত্যি নয়, ধীরে ধীরে সে কথাটাও মনে ধরছে অনেকের।

কানসোনা গ্রামের বাসিন্দা কাপড়ের দোকানের মালিক পূর্ণচন্দ্র গড়াই বলেন, ‘‘আমার বোনের বাড়ি নদিয়ার নারকেলডাঙা গ্রামে। সেখানে বেড়াতে গিয়ে শুনেছিলাম ডাকাতির কথা ও মেয়েদের উপর নির্যাতনের কথা।’’ তবে চায়ের দোকানের মালিক নারায়ণ দাস বলেন, ‘‘আমার দোকানে বসেও বাইরের মানুষ নানা গুজব নিয়ে আলোচনা করেন। গ্রামের মানুষ বাইরে থেকে গুজবের কথা শুনেছেন। তবে আমরা গ্রামে কোনও বহিরাগত দেখতে পায়নি।’’

স্থানীয় মেহেরপুর মাদ্রাসার সুপার আজিজুর রহমানরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। আজিজুর বলেন, ‘‘আমরা এখন বুঝতে পারছি। অযথাই ভয় পাচ্ছিলাম। এখন ক্রমশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। ভয় কাটছে।’’

গুজব বন্ধের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন কিছু শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষও। বৈরামপুর পঞ্চায়েতের প্রধান হায়দার আলি মোল্লা গ্রামবাসীদের গুজব সম্পর্কে বোঝাচ্ছেন। নিজের মোবাইল নম্বরও দিচ্ছেন গ্রামবাসীদের। গ্রামবাসীদের কাছে তাঁর অনুরোধ, সন্দেহজনক কাউকে দেখলে তাঁকে যেন ফোন করা হয়। ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েতের উদ্যোগে পুলিশ-প্রশাসন পক্ষে গ্রামবাসীদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে বোঝানো হয়েছে, গুজবে কান দেবেন না। সন্দেহজনক কিছু দেখলে পুলিশ-প্রশাসন-পঞ্চায়েত বা জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কেউ যেন আইন হাতে তুলে না নেয়। পঞ্চায়েত সদস্যেরাও বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে বোঝাচ্ছেন। পুলিশ মাইকে প্রচার করছেন। সব ক’দিনের আতঙ্কের পরিবেশটা কাটছে আস্তে আস্তে।

Rumor Public
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy