Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভাঙনে তলিয়েছে বাড়ি ভরসা শুধু প্রতিশ্রুতিই

নামখানা ব্লকের মৌসুনি পঞ্চায়েতটি মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রে পড়ে। মৌসুনি নদীনালা ঘেরা এক দ্বীপ। তার এক দিকে বঙ্গোপসাগর, অন্য দিকে চিনাই ও মুড়িগঙ্গা নদী।

এ ভাবেই মাচার উপর ঘর করে থাকেন বাসিন্দারা।

এ ভাবেই মাচার উপর ঘর করে থাকেন বাসিন্দারা।

দিলীপ নস্কর 
নামখানা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৯ ০১:৪৬
Share: Save:

মাচার উপরে বাঁধা কুঁড়েঘর। কুঁড়ের সামনে শিশুকোলে পা ঝুলিয়ে বসে নুরজাহান বিবি। জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘ভোট এসে গিয়েছে বলে বুঝি আপনাদের দেখা মিলল?’’ সঙ্গে জুড়ল আরও কিছু কথা। বললেন, ‘‘দূরে তাকিয়ে দেখুন, নদীবাঁধ হা হা করছে। ফি কোটালে এই কুঁড়ের নীচে কোমরসমান জল দাঁড়িয়ে যায়। বাইরে বেরোতে গেলে নৌকোই ভরসা।’’

নামখানা ব্লকের মৌসুনি পঞ্চায়েতটি মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রে পড়ে। মৌসুনি নদীনালা ঘেরা এক দ্বীপ। তার এক দিকে বঙ্গোপসাগর, অন্য দিকে চিনাই ও মুড়িগঙ্গা নদী। আয়লায় ওই পঞ্চায়েতের কুসুমতলা বালিয়াড়া ও বাগডাঙা এলাকার সমুদ্রবাঁধ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। বাঁধ-ভাঙা নোনা জলে প্লাবিত হয়েছিল কৃষিজমি, পুকুর, খালবিল। সমুদ্র-লাগোয়া কৃষিজমি মরুভূমিতে পরিণত হয়েছিল। তার পরে কেটে গিয়েছে প্রায় ১০ বছর। এখনও সেই ধ্বংসস্মৃতি স্পষ্ট রয়েছে এলাকাবাসীর মনে। ভূমিহারা কৃষকেরা আজ সর্বস্বান্ত। অধিকাংশই কাজের সন্ধানে ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছেন। যাঁরা রয়েছেন তাঁদের মীন ধরে, দিনমজুরি করে কোনও ক্রমে দিন চলে।

এই দশ বছরে অনেক নির্বাচন হয়েছে। সব দলের প্রার্থীই এ অঞ্চলে ভোট ভিক্ষা করতে গিয়ে মূলত তিনটে বুলি আওড়ান— বাঁধ মেরামতি হবে, জমির ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, সরকারি প্রকল্পের বাড়ি করে দেওয়া হবে। এ বারে অবশ্য এখনও কোনও প্রার্থী দ্বীপে প্রচারে আসেননি। তৃণমূল প্রার্থীর কিছু দেওয়াল লিখন চোখে পড়ে। আর রয়েছে গাছে, খড়ো বাড়ির চালে তাদেরই কিছু দলীয় পতাকা।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

মিন ধরছিলেন মিরাজ খাঁ ও তাঁর স্ত্রী সাহানা বিবি। এক সময়ে তাঁদের ২০ বিঘা জমি, ৪টি বড় পুকুর ও বড় বাড়ি ছিল। ওই দম্পতি সমুদ্রের দিকে (যেখানে দাঁড়িয়েছিলেন, সেখান থেকে ১ কিলোমিটার দূরে) আঙুল তুলে বলেন, ‘‘ওই যে দেখুন, এখন যেখানে সমুদ্র ওখানেই ছিল আমাদের বাড়ি-পুকুর-জমি। এক সময়ে নিজের জমিতে কাজ করানোর জন্য শ্রমিক লাগাতে হত। আর এখন পেটের তাগিদে আমরাই লোকের জমিতে কাজ করি। সময়ম তো বাঁধ মেরামতি হলে এ অবস্থা আমাদের হত না।’’ আক্ষেপের সুরে তাঁরা আরও বলেন, ‘‘ভোটের কথা আর কী বলব? ইচ্ছে না থাকলেও ভোটটা দিয়ে যাব।’’

এলাকার অন্যেরা কিন্তু ভোট নিয়ে মিরাজ-সাহানার মতো ‘নরম’ নন। কুসুমতলার প্রতিবেশী সাবানু বিবি, আলি হোসেন খাঁ-রা বলেন, ‘‘সব দলের কারসাজিই বুঝে গেছি। নেতাদের কথা শুনে ভোট দিয়ে এত দিন ধরে প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কী পেলাম? ভাবছি এ বারে আর বুথমুখো হব না।’’

এলাকার বাসিন্দা নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শুভেন্দু মান্না বলেন, ‘‘জমির মালিকানা ঠিক করতে এবং নদীবাঁধ তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে অনেক সময় লেগে গিয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। আর বাঁধ মেরামতির কাজ তো চলছে।’’

নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কল্পনা মালি মণ্ডল বলেন, ‘‘বালিয়াড়া, বাগডাঙা ও কুসুমতলায় সমুদ্রবাঁধ তৈরির কাজ চলছে। কুসুমতলায় তিন পরিবারের জমির জন্য একটু সমস্যা হয়েছে। ওই সব পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ক্ষতিপূরণ সকলকে দেওয়া না গেলেও কিছু পরিবার পেয়েছে। গৃহহীন পরিবারের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Mousuni island Namkhana
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE