Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
চায়ের ঠেকে নারদ-নারদ

কবে হবে পুরসভা, প্রশ্ন এলাকাবাসীর   

এখানে সব প্রশ্নেই তর্ক-বিতর্ক জমে। মোহনবাগান না ইস্টবেঙ্গল? মেসি বড় না রোনাল্ডো? অমিতাভ না শাহরুখ? মমতা-মোদী তো আছেই। ভোটের দিন এগিয়ে আসছে। রাজনীতির সেই তর্কই আরও প্রবল হচ্ছে এখানে। ঠিকানা— চায়ের দোকান। আজ ঠাকুরনগরে সঞ্জীব দাসের চায়ের দোকান। কান পাতলেন সীমান্ত মৈত্র চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ঠাকুরবাড়ি সংক্রান্ত আলোচনার মাধ্যমেই আড্ডার সূচনা করলেন কৃষিজীবী শ্যামল সরকার।

গপ্পো: চায়ের দোকানে। —নির্মাল্য প্রামাণিক

গপ্পো: চায়ের দোকানে। —নির্মাল্য প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৫০
Share: Save:

এ বার বনগাঁ লোকসভা আসনে তৃণমূল ও বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়ি থেকে। সেই ঠাকুরনগরের রেলগেট এলাকায় সঞ্জীব দাসের চায়ের দোকান। সেখানেই গরম চায়ের সঙ্গে জমে উঠল ভোট নিয়ে নরম-গরম আড্ডা।

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ঠাকুরবাড়ি সংক্রান্ত আলোচনার মাধ্যমেই আড্ডার সূচনা করলেন কৃষিজীবী শ্যামল সরকার। বললেন, ‘‘এলাকায় যা কিছু উন্নয়ন হয়েছে, তা ঠাকুরবাড়ি ও তার সংলগ্ন এলাকায়। বাকি এলাকার উন্নতি তেমন হয়নি। আজই ভোর ৪টেয় লোডশেডিং হয়েছিল। সকাল সাড়ে ৮টায় আলো এল। সর্বক্ষণ লো ভোল্টেজ থাকে। লো ভোল্টেজের জন্য পাখা পর্যন্ত চালাতে পারি না!’’ তাঁকে সমর্থন করে পেশায় ব্যবসায়ী শঙ্কর বিশ্বাস বললেন, ‘‘উনি একদম ঠিক কথা বলেছেন।’’ আর এক কৃষিজীবী বীরেন বাগচীর কথায়, ‘‘আমরা সর্বত্র সমান উন্নয়ন চাই। ঠাকুরবাড়ি থেকে কেউ জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে সেটা সম্ভব নয়।’’

ঠাকুরনগর থেকে গোবরডাঙা যাওয়ার রাস্তা দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল। যার ফলে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছিলেন। তবে সম্প্রতি সড়কটি সম্প্রসারণের কাজ শুরু হওয়ায় খুশি এলাকাবাসী। রাস্তাটির প্রসঙ্গ তুলে শ্যামল বলেন, ‘‘আমাদের দাবি ছিল, ঠাকুরনগর-গোবরডাঙা সড়কটির সংস্কার হোক। অবশেষে সেটির কাজ শুরু হওয়ায় আমরা খুশি।’’ স্থানীয় ব্যবসায়ী বিষ্ণু রায়ের সংযোজন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি বেহাল ছিল। চাষি, ফুল ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে এ জন্য বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল।’’

এলাকার নিকাশি সমস্যার কথা তুলে আনলেন শঙ্কর— ‘‘দু’কাঠা জমি কিনেই মানুষ বাড়িঘর তুলে ফেলছেন। অপরিকল্পিত ভাবে বাড়িঘর তৈরি হওয়ায় নিকাশি ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে।’’ রাজ্য সরকার ঠাকুরনগরকে ‘পুরসভা’ করার কথা ঘোষণা করেছে বেশ কিছু দিন আগে। এখনও অবশ্য তা বাস্তবায়িত হয়নি। আড্ডায় উঠে এল সেই প্রসঙ্গ। পেশায় শিক্ষক বাবলু সরকার বললেন, ‘‘শুনেছি ঠাকুরনগর পুরসভা হবে। হলে আমরা খুবই উপকৃত হব।’’ উঠল স্বাস্থ্য পরিষেবার কথা। এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রধান ভরসা চাঁদপাড়া গ্রামীণ হাসপাতাল। কিন্তু ওই হাসপাতালে আজও সিজার ও অপারেশনের কোনও ব্যবস্থা নেই। বীরেন বললেন, ‘‘রোগীর অবস্থা একটু জটিল হলেই তাঁকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। গাড়ি ভাড়া করে বনগাঁ বা বারাসতে রোগী নিয়ে যেতে অনেক হ্যাপা পোয়াতে হয়।’’ পেশায় ভ্যানচালক নীরদ হালদার বলেন, ‘‘ঠাকুরনগর থেকে গাড়ি ভাড়া করে রোগী বনগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যেতে ৬০০-৭০০ টাকা লেগে যায়। এতে মানুষ খুবই সমস্যায় পড়েন।’’ বাবলু বললেন, ‘‘আমরা চাই হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে প্রসবের ব্যবস্থা চালু হোক।’’ এর প্রয়োজনীয়তা মেনে নিয়ে শঙ্কর বলেন, ‘‘সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়েন প্রসূতিরা। বিশেষ করে রাতে। তখন গাড়ি পেতে সমস্যা হয়।’’

উঠল যাতায়াত সমস্যার কথাও। ঠাকুরনগর-শিয়ালদহ লোকাল ট্রেনটি ঠাকুরনগর স্টেশনে না দাঁড়িয়ে চাঁদপাড়ায় দাঁড়ায়। শ্যামল বলেন, ‘‘আমরা চাই, ঠাকুরনগর স্টেশনে ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হোক। তা হলে লোকালটি এখান থেকেই ছাড়তে পারবে। প্রয়োজন আরও একটি টিকিট কাউন্টারেরও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE